ই-পেপার শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪

'ছয় কোটি মানুষকে টিকা'র মাইলফলকে বাংলাদেশ
প্রকাশ: রবিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২১, ১০:৫৭ এএম আপডেট: ২৪.১০.২০২১ ১১:০২ এএম  (ভিজিট : ৫২৮)
সারা দেশে গত ৭ ফেব্রুয়ারি একযোগে করোনার টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। আর যতই দিন যাচ্ছে, টিকা কেন্দ্রগুলোতে ভিড়ও তত বাড়ছে। প্রথম দিকে টিকা নিয়ে মানুষের মধ্যে যে ভয়ভীতি বা দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল, তা আর এখন নেই। হাসপাতাল ও টিকাদান কেন্দ্র ঘুরে উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়েই মানুষকে টিকা নিতে দেখা গেছে। টিকাদান কর্মসূচি শুরুর ১০ মাসের মধ্যে টিকা পেতে দীর্ঘসূত্রতা, নিবন্ধন করে এসএমএস না পাওয়া এবং সার্ভার জটিলতাসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এর মধ্যে ৬ কোটিরও বেশি মানুষকে টিকা দেওয়ার মাইলকফলক স্পর্শ করল বাংলাদেশ। এর মধ্যে ২ কোটির বেশি মানুষ পেয়েছেন দুই ডোজ টিকা আর প্রায় ৪ কোটি মানুষ পেয়েছেন এক ডোজ টিকা।

এদিকে সরকার আগামী ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে দেশের ৮ কোটি মানুষকে করোনার দুই ডোজ টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এতে ৫০ শতাংশ মানুষ টিকার আওতায় আসবে বলে মনে করছে  সরকার। বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ লাখ ডোজ টিকা দেওয়া হলেও দৈনিক টিকা দেওয়ার পরিমাণও বাড়ানোর চিন্তা চলছে। এই ধারাবাহিকতায় সরকার এখন পরিকল্পনা করছে আরও কম বয়সিদের টিকা দেওয়ার। এ অবস্থায় আগামী সপ্তাহে শুরু হচ্ছে ১২-১৭ বছর বয়সিদের রুটিন টিকাদান কার্যক্রম।
 
আর স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে এখনও বিপুলসংখ্যক ষাটোর্ধ্ব মানুষ টিকার আওতায় আসেননি। তাই বয়োজ্যেষ্ঠও ঝুঁকিপূর্ণ। এ ছাড়া দেশের প্রান্তিক মানুষ, দুর্গম এলাকা ও গ্রামে থাকেন, তারা যদি টিকা না পান, তাহলে সংক্রমণ আবারও বাড়তে পারে। তাই তাদেরকে টিকার আওতায় আনতে সরকারের বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। অন্যদিকে অনলাইনে নিবন্ধনকারীদের দেড় কোটি লোক এখনও পর্যন্ত ভ্যাকসিন পাননি। টাকা দিলে আগে আগে এসএমএস পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে অহরহ।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুসারে চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন আসে বাংলাদেশে। ২৭ জানুয়ারি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২৬ জনকে পরীক্ষামূলকভাবে সেই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়। পরে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচি শুরু হয়। আর গ্রামের ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড টিকাদান ক্যাম্পেইন শুরু হয় ৭ আগস্ট।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে ২৬ কোটি টিকা ইতোমধ্যে নিশ্চিত হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে দেশের ৮ কোটি মানুষকে করোনার দুই ডোজ টিকা দেওয়া সম্ভব হবে। এতে ৫০ শতাংশ মানুষ টিকার আওতায় আসবে। মার্চ থেকে এপ্রিলের মধ্যে আরও ৪ কোটি ডাবল ডোজ টিকা দেওয়া সম্ভব হবে। এ ছাড়া মোট ১২ কোটি লোককে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া যাবে আগামী এপ্রিলের মধ্যে, এতে ৭০ শতাংশ মানুষ টিকার আওতায় আসবে। অক্টোবরে ৩ কোটি, নভেম্বরে পৌনে ৪ কোটি, ডিসেম্বরে ৫ কোটি ও জানুয়ারিতে পৌনে ৪ কোটি ডোজ টিকার দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া যদি প্রয়োজন হয় এর থেকেও বড় ক্যাম্পেইনের চিন্তা রয়েছে। দৈনিক টিকা দেওয়ার পরিমাণ বাড়ানোর পরিকল্পনাও রয়েছে।
 
অন্যদিকে ১৮ বছর বা তার চেয়ে বেশি, তথা দেশের প্রাপ্তবয়স্ক সব নাগরিকের জন্য ভ্যাকসিন নিবন্ধনের সুযোগ উন্মুক্ত হয়েছে। এ ছাড়া ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সি স্কুল শিক্ষার্থীদেরও করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এসব শিক্ষার্থীর ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য সুরক্ষা প্লাটফর্মে নিবন্ধনের সুযোগ উন্মুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের জন্মসনদ দিয়ে সুরক্ষা ওয়েবসাইট ও অ্যাপ থেকে ভ্যাকসিনের জন্য নিবন্ধন করতে পারবে।

গত ২১ অক্টোবর রাজধানীর এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, আগামী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সিদের তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আইসিটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা রয়েছে। এই তালিকা পেলে এ মাসেই ওই বয়সি শিক্ষার্থীদের টিকাদান শুরু হবে। 
এর মধ্যে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য ঢাকা মহানগরীতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) অধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সি শিক্ষার্থীদের তথ্য চাওয়া হয়েছে।
 
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ও লাইন ডিরেক্টর (এমআইএস) অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান সময়ের আলোকে বলেন, স্কুল শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার দিন ও তারিখ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে আশা করছি খুব দ্রুতই তাদেরকে টিকা দেওয়া শুরু হবে। 

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, দেশে এ পর্যন্ত মোট টিকা এসেছে ৭ কোটি ৯৭ লাখ ডোজ। এর মধ্যে শনিবার পর্যন্ত দেশে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলে বিভিন্ন টিকা দেওয়া হয়েছে ৬ কোটি ১ লাখ ৬০ হাজার ৭৮১ ডোজ। প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৩ কোটি ৯৮ লাখ ৯৬ হাজার ২৬৮ জন এবং দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ২ কোটি ২ লাখ ৬৪ হাজার ৫১৩ জন।
 
দেশে শনিবার বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন ৫ কোটি ৬০ লাখ ২১ হাজার ৭৪৬ জন। কিন্তু টিকা হাতে মজুদ আছে ১ কোটি ৯৫ লাখ ৩৯ হাজার ২১৯ ডোজ। হিসাব করে দেখা যায়, এখন ৩ কোটি ৬৪ লাখ ডোজের বেশি টিকার ঘাটতি রয়েছে। 
দেশে যে হারে টিকা হচ্ছে আরও গতি বাড়ানো যায় কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ সময়ের আলোকে বলেন, দেশে পরিকল্পনামাফিক আরও বেশি গণহারে টিকা দেওয়া প্রয়োজন। যাতে গ্রাম পর্যায় থেকে শুরু করে শহরাঞ্চল পর্যন্ত দ্রুত টিকার আওতায় যাবে ততই করোনার হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।


আরও সংবাদ   বিষয়:  টিকা   মাইলফলক   বাংলাদেশ   করোনা  




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close