ই-পেপার শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

বাসার বাইরে যাওয়ার আগে সচেতনতা
প্রকাশ: রবিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২১, ১২:৫০ পিএম  (ভিজিট : ৩১৯)
বাতাসে ভেসে বেড়ায় বহুবিধ রোগজীবাণু। এসব জীবাণু থেকে দূরে থাকার জন্য আমাদের সবসময় সচেতন থাকতে হবে। শীতকাল শেষে যখন গ্রীষ্মকাল আবার গ্রীষ্ম শেষে যখন শীত শুরু হয়। এ সময়গুলোতে মানুষ বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্য মানুষ বিভিন্ন ধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। করোনাসহ বহু ভাইরাসের সঙ্গে আমাদের বসতি। যারা চাকরি, ব্যবসা বা জীবিকার জন্য প্রতিদিন বাসার বাইরে যান তারা কিছু সচেতনতা অবশ্যই মেনে চলবেন। 

বাসা থেকে পানি নিতে পারলে খুব ভালো হয়। যদি প্লাস্টিকের বোতলে পানি বহন করেন, তবে তা যেন ১৩ ঘণ্টার বেশি সেই পানির বোতলে না থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্লাস্টিকের বোতলে ১৩ ঘণ্টার বেশি পানি থাকলে তা থেকে কেমিক্যাল পানিতে মিশতে পারে, যা আমাদের শরীরে কারসিনোজেনিক (ক্যানসার) ফ্যাক্টরের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। কাচের বোতলে পানি বহন করলে তা ভালোভাবে রোগজীবাণু মুক্তকারক দিয়ে পরিষ্কার করে নেবেন। অবশ্যই নলকূপের পানি অথবা ফিল্টারের পানি পান করবেন। বাসায় ফিল্টার না থাকলে পানি ফুটিয়ে পান করবেন। দূষিত পানি ও খাবারের মাধ্যমে এক ধরনের জন্ডিস হয়। তাই এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।

রাস্তায় বিভিন্ন ধরনের ফলের রস বিক্রি হয়। রাস্তার ধারে যে গরম খাবারগুলো বিক্রি হয় সেগুলোতে কিছু জীবাণু চুলার তাপে মারা যায়, কিন্তু ফলের রসের মধ্যে পানি দিতে হয়। পানি রোগজীবাণু মুক্ত নাও থাকতে পারে। এ ধরনের পানীয় পরিহার করা উত্তম।

ট্রাফিক জ্যাম ঠেলে অফিসে পৌঁছেই ফ্রিজের ঠান্ডা পানি পান করবেন না। অফিসে আপনার আলাদা পানির গ্লাস, চা বা কফির কাপ থাকা উচিত। মানুষের অজান্তেই তার মুখের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের রোগজীবাণু থাকতে পারে, ডেন্টাল ক্যারিজ বা কোনো ইনফেকশন থাকতে পারে। টনসিলে ইনফেকশন বা টনসিলাইটিস থাকলে, সেই জীবাণুগুলো মুখেও চলে আসতে পারে। তাই অফিসে সবাই আলাদা গ্লাস, চামচ, থালা, মগের ব্যবস্থা করতে না পারলে, আপনি আপনার বাসা থেকে নিয়ে যাবেন।

নারী ও পুরুষ উভয়েই সম্ভব হলে সঙ্গে চিরুনি রাখবেন। দুপুরের খাবারের বিরতি বা কাজের মধ্যে একটু সুযোগ পেলে চুল আঁচড়ে নেবেন। নারীদের চুল বড় থাকলে, যতটুকু পারা যায়, অফিসের কাজের ফাঁকে শুধু সামনেরটুকুই ঠিক করবেন। আমাদের মাথা ও মুখের মধ্যে রয়েছে অগণিত শিরা, উপশিরা আর স্নায়ু। চুল আঁচড়ালে মস্তিষ্কের স্নায়ুগুলো সতেজ হয়। মাথার চুলের গোড়াতে অক্সিজেন পৌঁছে। অক্সিজেন আমাদের দেহের শিরা, উপশিরায় পৌঁছে আমাদের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। চেয়ারে বসে অফিসের কোনো এক কাজের ফাঁকে বুকভরে নিশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করবেন। চোখ বন্ধ করে, মুখ হাঁ করে বুকভরে নিশ্বাস নেবেন কয়েকবার। এতে মস্তিষ্কের কোষে দ্রুত অক্সিজেন পৌঁছবে। শক্তি তৈরির জন্য আমাদের যেমন খাবার দরকার, তেমনি মস্তিষ্কের জন্যও দরকার অক্সিজেন। অফিসে গরম পানির ব্যবস্থা থাকলে বাসা থেকে সঙ্গে টি ব্যাগ নিয়ে যাবেন। অনেক অফিসে কর্মীদের জন্য লকারের একটা অংশ বরাদ্দ থাকে। আপনার লকারের একপাশে টিস্যু পেপারে জড়িয়ে রাখতে পারেন ছোট্ট একটা আদাকুচি। সুযোগ হলে চায়ের সঙ্গে খাবেন। এতে আপনার শরীরের রোগজীবাণু ধ্বংস হবে। আদা সর্দি, হাঁচি, কাশি, টনসিলের জন্য যে জীবাণুগুলো রক্তে বাসা বেঁধে ফেলে, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। আদা দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। বাসা থেকে দুপুরের খাবার নিতে পারলে খুব ভালো। বাসার বাইরের খাবার মজার হলেও তাতে রোগজীবাণুর ভয় থেকে যায়। বাসার খাবার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয় তুলনামূলকভাবে বেশি। আর যদি সে সুযোগ না থাকে, তা হলে অন্তত নাশতাজাতীয় খাবার বাইরের টাকা দিয়ে কিনে খাওয়ার পরিবর্তে, বাসা থেকে ফল, সালাদ, বিস্কুট, মুড়ি, খৈÑ এ খাবারগুলো খেলে তা হবে আপনার জন্য স্বাস্থ্যসম্মত। বাসা থেকে নেবেন সুগার ফ্রি বিস্কুট। কিন্তু ভাত, তরকারি, ডালজাতীয় খাবার অফিসে খাওয়ার পরিবর্তে আপনি যদি সপ্তাহে অন্তত দুদিন বা তিন দিন এ ধরনের খাবার দুপুরে খেতে পারেন, তা হলে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। অতিরিক্ত তেল, ডালডা, ঘিয়ে ভাজা বিস্কুট যারা দীর্ঘ সময় অফিসে কাজ করেন, তাদের জন্য উপযোগী নয়। তাই ডায়াবেটিস না থাকলেও আপনার ওজন যদি বেশি হয়, একটুতেই মোটা হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে, তা হলে ডায়াবেটিক বিস্কুট (সুগার ফ্রি বিস্কুট) অধিকাংশ সময়ে খাবেন।

উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, উচ্চ মাত্রার কোলস্টেরলের ওষুধ খেতে হয় যাদের, তারা বাসার বাইরে দীর্ঘ সময়ের জন্য যেতে হলে, এ ওষুধগুলো সঙ্গে নিতে ভুলবেন না। হয়তো দুপুরে ওষুধ খাওয়ার কথা; কিন্তু অফিসের কলিগদের সামনে ওষুধ খেতে লজ্জা লাগছে, এমন যেন না হয়। 
করোনাভাইরাস, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এ অসুখগুলো সারা পৃথিবীর অসুখ। তাই লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। কীভাবে সুস্থ থাকবেন, সে চিন্তা আগে করতে হবে। যাদেরকে হাঁপানি বা অ্যাজমার জন্য ইনহেলার ব্যবহার করতে হয়, তারা সে বিষয়ে সচেতন হবেন। অনেকের হাইপো থাইরয়ডিজম বা হাইপার থাইরয়ডিজম নামে হরমোনের অসুখ থাকে, সেক্ষেত্রে হাইপো থাইরয়ডিজম অসুখের ওষুধ খালি পেটে সকালে খেতে হয়। বাসার বাইরে যাওয়ার আগে এই ওষুধ খেতে ভুলবেন না। যাদেরকে সিরিঞ্জ ও ভায়ালের মাধ্যমে ইনসুলিন ইনজেকশন নিতে হয়, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কলম সিস্টেমের ডিভাইস ব্যবহার করবেন। এই ডিভাইসগুলোর সাহায্যে খুব সহজেই ইনসুলিন ইনজেকশন নেওয়া যায়। আপনি যে সময় অফিসে থাকেন, সে সময় যদি আপনার ইনসুলিন ইনজেকশন নেওয়ার সময় হয়ে থাকে, তা হলে এ ধরনের ডিভাইস হয়ে উঠবে আপনার উপকারী বন্ধু। আপনাকে অফিসে যদি নিয়মিত টাকা স্পর্শ করতে হয়, বিশেষত যারা ব্যাংকে টাকার হিসাবের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তারা নিয়মিত হ্যান্ডগ্লাভস ব্যবহার করবেন। 

লেখক : জেনারেল প্র্যাকটিশনার




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close