ই-পেপার বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪

সন্তানদের বৃক্ষরোপণ শেখান : প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশ: শুক্রবার, ২১ জুন, ২০১৯, ১২:০০ এএম আপডেট: ২০.০৬.২০১৯ ১১:০২ পিএম  (ভিজিট : ১৪৫)
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সবাইকে তিনটি করে গাছ লাগানোর আহŸান জানিয়েছেন। একটি করে ফলদ, বনজ ও ভেষজ গাছ লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান এবং বৃক্ষমেলা উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর প্রতি এই আহŸান জানান।
প্রধানমন্ত্রী সবাইকে গাছ লাগানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, প্রত্যেকেই নিজের কর্মস্থল ও বাসস্থানে গাছ লাগাবেন। ছেলেমেয়েদেরও বৃক্ষরোপণ শেখাতে হবে। শুধু গাছ লাগালেই হবে না, পরিচর্যাও করতে হবে। প্রত্যেকে নিজের এলাকায় যত ইচ্ছে গাছ লাগাবেন। এতে কয়েক বছর পর টাকাও পাওয়া যায়, বছর বছর ফল পেলেও খুশি লাগে। এ সময় শেখ হাসিনা আজিমপুর গার্লস স্কুলে পড়ার সময় বান্ধবীদের সঙ্গে নিয়ে গাছ লাগানোর স্মৃতিচারণও করেন। প্রতিবছর ৫ জুন পরিবেশ দিবস পালিত হলেও এবার এই দিন ঈদ পালিত হওয়ায় সরকার গতকাল ২০ জুন এই দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। এ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি অনুষ্ঠান শেষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের সামনে একটি তেঁতুল গাছ লাগান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যত আধুনিকায়ন হচ্ছে, যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে, আমাদের অবিবেচনাপ্রসূত কাজের ফলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। আধুনিকভাবে বেঁচে
থাকার জন্য আমরা যা যা ব্যবহার করছি, তার কারণে পরিবেশে দূষণ ছড়াচ্ছে। সাবান, শ্যাম্পু, বডি স্প্রে, ডিটারজেন্ট, মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, শিল্প-কলকারখানা, সবকিছু থেকে দূষণ ছড়ায়। তবে আমরা পরিবেশ রক্ষায় সচেতন হচ্ছি। উন্নয়ন দরকার, কিন্তু পরিবেশও রক্ষা করতে হবে। বৃক্ষরোপণ করতে হবে, জলাধার রক্ষা করতে হবে। ছোটবেলার স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ছোটবেলায় উখিয়ায় যাই, সেখানে কোনো রাস্তা ছিল না তখন। গভীর জঙ্গলের ভেতর দিয়ে যেতে হতো। ফরেস্ট বাংলোয় আমরা উঠতাম, এর চারপাশে ঘন জঙ্গল ছিল। মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের টেকনাফ-উখিয়ায় আশ্রয় দেওয়া হলো। এখন বন শেষ। তিনি বলেন, মানুষ বাড়লে বন ও পরিবেশ ধ্বংস হয়। সভ্যতার বিকাশ ও উন্নয়ন চলবে। তবে আমাদের পরিবেশও রক্ষা করতে হবে। এ বিষয়ে আমরা আইন করেছি, মোবাইল কোর্ট হচ্ছে। বড় বড় শহরে, মহাসড়কে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৮৪-৮৫ সাল থেকে প্রতিবছর কৃষক লীগের মাধ্যমে ১ আষাঢ় থেকে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি শুরু হতো। সব কর্মীকে তিনটি করে গাছ লাগাতে বলা হতো। এটা আবার শুরু করব। তিনি বলেন, জেলা-উপজেলায় বৃক্ষমেলার আয়োজন করেছি। মানুষ গাছের চারা কিনে লাগায়। সবাইকে অনুরোধ করব, যার যার কর্মস্থলে ও বাসস্থানে গাছ লাগাবেন। সামাজিক বনায়ন কর্মসূচিতে রাস্তার পাশে ও জঙ্গলের আশপাশে বসবাসরত লোকদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, যারা এসব গাছের যতœ নেবেন, গাছগুলো বড় হলে বিক্রির পর এর ৭৫ ভাগ লভ্যাংশ তারা পাবেন। ২৫ শতাংশ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে যাবে। এরাই আবার নতুন করে গাছ লাগাবেন। সুন্দরবন ও উপক‚লীয় বন রক্ষার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুন্দরবনকে রক্ষা করতে হবে, বাঘের সংখ্যা বাড়াতে হবে। হোগলা বন বাঘের ব্রিডিং পয়েন্ট। নদীর লবণাক্ততা কমলে হোগলা বন বাড়বে এবং বাঘের সংখ্যাও বাড়বে। এর জন্য আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। উপক‚লীয় অঞ্চল রক্ষার কাজ জাতির জনকই শুরু করেছিলেন। আমরা উপক‚লীয় সবুজ বেষ্টনী রক্ষার কাজ করেছি। প্রধানমন্ত্রী ঢাকাসহ দেশের সবখানে জলাধার রক্ষার আহŸান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের বিরোধিতা করি না, সবাইকে অনুরোধ করব আমাদের বিভিন্ন প্রজেক্ট নেওয়ার সময় আমি দেখেছি যেখানে জলাধার রয়েছে সেটা ভরাট করেই বিল্ডিং তুলতে হবে। এই করতে করতে ঢাকা শহরে যতগুলো খাল ও পুকুর ছিল এখন আর তা নেই। তিনি বলেন, একটি সংস্থার পরামর্শে আগের সরকার তা শুরু করে দিল। আমাদের বক্স কালভার্ট করার কোনো প্রয়োজন নেই। আমাদের খালগুলোকে ওভাবে রেখেই আমরা কিন্তু খালের দুই পাড় দিয়ে রাস্তা করতে পারি অথবা আমরা সেখানে এলিভেটেড রাস্তাও করে দিতে পারি। শেখ হাসিনা বলেন, খাল যেখানে খালের মতোই থাকবে। সেখানে নৌ-চলাচলও করতে পারে তাতে আমাদের পরিবেশও রক্ষা পাবে, বায়ুদূষণ কমবে এবং সেখানকার বাতাসটাও আরামদায়ক হবে। কিন্তু যেখানে কোনো গাছ থাকে না সেখানে সেই পরিবেশটা থাকে না। এ বিষয়ের প্রতি আমাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, সভ্যতা এবং তার ক্রমবিকাশ অবশ্যই অব্যাহত থাকবে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সর্বক্ষেত্রেও এ বিষয়টা লক্ষ রাখতে হবে যে, আমাদের পরিবেশটাকেও রক্ষা করতে হবে।
রোহিঙ্গাদের কারণে বনাঞ্চল ধ্বংস হচ্ছে : সরকারপ্রধান এ সময় বলেন, মানবিক কারণে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া হলেও ধ্বংস হয়ে গেছে পাহাড়ি বনাঞ্চল। এ সময় উখিয়ার প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ অতীতকে স্মরণ করে বর্তমানের সঙ্গে এর বিস্তর ব্যবধান রয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। পরিবেশ দূষণে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহŸান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা নিজেরা আর ক’দিন থাকব। কিন্তু আমাদের বংশধররা যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে, টিকে থাকতে পারে, সেজন্য শতবর্ষজুড়ে ডেল্টা প্ল্যান নিয়ে কাজ করছি। মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়া হলেও কক্সবাজারসহ আশপাশের অঞ্চলের বন ধ্বংস হয়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় পরনির্ভরশীল নয় বাংলাদেশ। অনুষ্ঠানে বনাঞ্চলের ক্ষয়ক্ষতির নানা কারণ তুলে ধরতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেওয়ায় বন ধ্বংস হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবতার কারণে স্থান দিতে হয়েছে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের। ১১ লাখ রোহিঙ্গা আমাদের দেশে অবস্থান করছে। বন তো আগেই কিছু নষ্ট হয়েছিল আর এখন তো পুরাই শেষ। ঠিক এভাবে মানব সভ্যতার যখন বিকাশ হয় তখন বনায়নও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাবউদ্দিন। পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী এতে বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরী। অনুষ্ঠানের শুরুতে পরিবেশ ও বনের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে ‘বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন-২০১৯, বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার-২০১৮ ও সামাজিক বনায়নের লভ্যাংশের চেক এবং একই সঙ্গে পরিবেশ সংরক্ষণে ভ‚মিকা রাখার জন্য জাতীয় পরিবেশ পদক-২০১৯ প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানস্থল থেকে গাজীপুরে ‘শেখ কামাল ওয়াইল্ড লাইফ সেন্টার’ এবং পরিবেশ অধিদফতরের জন্য নতুন ভবনও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি এ বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে ‘বায়ুদূষণ’। বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রী পরিবেশ ও বৃক্ষমেলার উদ্বোধন করেন এবং বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন।





সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close