ই-পেপার বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪

সব স্তরের মানুষকে সচেতন করতেই জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ
প্রকাশ: রবিবার, ২১ জুলাই, ২০১৯, ১২:০০ এএম আপডেট: ২১.০৭.২০১৯ ১২:২৬ এএম  (ভিজিট : ২২৮)
গত ১৭ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ। এ মৎস্য সপ্তাহের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল মাছ চাষে গড়ব দেশ/বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। এই মৎস্য সপ্তাহ কেন? এই প্রশ্ন নিয়ে মুখোমুখি হয়েছিলাম বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান দিলদার আহমেদের। তিনি অকপটে বললেন, মূলত এ মৎস্যর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সচেতন করতেই এই মৎস্য সপ্তাহ। বিশেষ করে সব স্তরের মানুষের জন্যই এই আয়োজন। এর পাশাপাশি যারা মাছের সঙ্গে জড়িত তাদের উৎসাহ দিতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবছর এ মৎস্য সপ্তাহ পালন করা হয়। শুধু মাছ চাষি নয়, ভোক্তা থেকে শুরু করে মাছের সঙ্গে যারা কোনো কোনোভাবে জড়িত তাদের সচেতন করা এ সপ্তাহের মূল উদ্দেশে। দিলদার আহমেদ এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আমরা মাছে ভাতে বাঙালি, এ প্রবাদটি এখনও বিদ্যমান। এখানে একটা কথা দরকার, সরকার প্রতিবছর মাছ উৎপাদনকারী থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মাছের অবদানের জন্য পুরস্কার দিয়ে আসছে। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এই যে পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে, এর মাধ্যমে একদিকে যেমন জাটকা মাছ নিধনের বেলায় সচেতন হচ্ছে, অন্যদিকে মৎস্য উৎপাদনের ক্ষেত্র দিন দিন উন্নীত হচ্ছে। এমনকি, বিলুপ্ত দেশি মাছ ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হচ্ছি। একসময় পাবদা, শৈল, মাগুর মাছের স্বাদ পাওয়া যেত না। এখন স্বাদ পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, এখন মাছের উৎপাদন আগের তুলনায় বাড়ছে। জাতীয় অর্থনীতিতে মৎস্য খাতের অবদান বিশ^ব্যাপী স্বীকৃত। সুস্থ সবল ও মেধাসম্পন্ন জাতি গঠনে এ খাতের অবদান এখন আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে মাথাপিছু ৬০ গ্রামের চাহিদা রয়েছে। এর বিপরীতে মাছ গ্রহণের পরিমাণ ৬২.৫৮ গ্রাম।

তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৭-১৮ সালে মৎস্য উৎপাদন হয়েছে ৪২ লাখ ৭৭ হাজার টন। আর গত ২০১৬-১৭ সালে উৎপাদন হয়েছিল ৪১ লাখ ৩৪ হাজার টন। অর্থাৎ ২০০৮-০৯ সালের মোট উৎপাদনের চেয়ে ৫৮ শতাংশ বেশি। আর ১৯৮৩-৮৪ সালে দেশে দেশে মাছের মোট উৎপাদন ছিল ৭ লাখ ৫৪ হাজার টন। অর্থাৎ ৩৫ বছরের ব্যবধানে মাছের উৎপাদন বেড়েছে সাড়ে ৫ গুণের বেশি। চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশের মৎস্য উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪৫ লাখ ৫২ হাজার টন অর্জিত হবে।

মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন কী কাজ করছে? এ প্রশ্নের জবাবে দিলদার বলেন, বর্তমানে মাছ বিক্রির জন্য ঢাকা শহরে ৪টি গাড়ি রয়েছে। আরও ৪টি গাড়ি কেনা হচ্ছে। আর মৎস্য কেন্দ্র রয়েছে ২২টি। ভোক্তাদের কাছে মাছ পৌঁছে দেওয়ার জন্যই এ উদ্যোগ। পাশাপাশি তাজা মাছ বিক্রির জন্যও করপোরেশন কাজ করছে। মাছ ধরার পর যেন মৎস্যজীবীরা যেন তাদের মাছ সংরক্ষণ ও বিক্রি করতে পারে সে জন্য ২২ থেকে ২৩টি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র রয়েছে। এখানে মাছের কাটিং থেকে শুরু করে প্রসেসসহ একটি প্যাকেজ রয়েছে। সমুদ্র, উপক‚ল, হাওর ও কাপ্তাই লেক থেকে আহরণ করা মৎস্যের গুণগতমান সংরক্ষণের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধার জন্য এ অবতরণ কেন্দ্র।

তিনি বলেন, এ করপোরেশন ১৯৬৪ সাল থেকে কাপ্তাই লেকে স্বাদুপানির মাছ উৎপাদন, আহরণ, অবতরণ ও বাজারজাতকরণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এ সংস্থা সামুদ্রিক ও মিঠাপানির ৭টি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে মাছ সংরক্ষণের জন্য বরফ উৎপাদন ও সরবরাহ করে আসছে। সংস্থার বরফকলে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৪ হাজার ২৭০ টন বরফ উৎপাদন করেছে। আরও ৭টি বরফ কল নির্মাণ করা হচ্ছে। ফরমালিন প্রসঙ্গে দিলদার বলেন, ঢাকা শহরে এখন মাছে ফরমালিনের প্রভাব কমে এসেছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রায় ২০৩ টন ফরমালিনমুক্ত তাজা মাছ সুলভ মূল্যে মাছ বিক্রি করেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর অধীনে কক্সবাজার জেলার খুরুশক‚ল এলাকায় মৎস্যজীবীদের পুনর্বাসনের জন্য দেশের বৃহত্তম একটি শুঁটকি মহাল স্থাপনের কাজ করপোরেশন বাস্তবায়ন করছে।

করপোরেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি বলেন, সম্প্রতি তার রাশিয়া সফরে টুনা ফিস ধরার ব্যাপারে সহযোগিতা দেবে। উপক‚লীয় অঞ্চলে কিংবা হাওর অঞ্চলে মাছের চাষ করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি হ্যাচারি তৈরি করা হচ্ছে। চট্টগ্রামে ১০টি জাহাজ রয়েছে। এ জাহাজ দিয়ে মাছ ধরা হয়। ইতোমধ্যে ফিশিং ট্রলার ডক তৈরি করা হয়েছে। এখানে বেসরকারি খাতেও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
আগামী দিনের সম্ভাবনাময় প্রজাতি হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, শোল, কুঁচিয়া, কই, গাং মাগুর, রিটা, মহাশোল, ভেটকি, পারশে, নোনা টেংরা ইত্যাদি। তিনি আরও উল্লেখ করেন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ২০১৮ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশে^ অভ্যন্তরীণমুক্ত জলাশয়ে মাছ আহরণে বাংলাদেশ তৃতীয় ও বদ্ধ জলাশয়ে চাষের মাছের উৎপাদনে পঞ্চম স্থান অধিকার করেছে। কাপ্তাই হ্রদ বাংলাদেশের বদ্ধ জলাশয়ের মধ্যে সর্ববৃহৎ। এখানে মাছ আহরণ বন্ধকালীন সময়ে মৎস্যজীবীদের জীবিকা নির্বাহের জন্য বিশেষ ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা প্রদান চালু করা হয়েছে।

এদিকে, আজ হাওর অঞ্চলে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের আওতায় হাওর অঞ্চলের মৎস্যজীবীদের আহরিত মাছ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন ও বাজারজাত করতে তিনটি ফ্রিজিং ভ্যান চালু করতে যাচ্ছে মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন। এ তথ্যটি মাছের ভোক্তাদের জন্য সুসংবাদ বয়ে আনবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close