ই-পেপার বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪

চলন্তিকা বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড
সব হারিয়ে বস্তিবাসী নিঃস্ব
স্বপ্ন পুড়ে ছাই
প্রকাশ: রবিবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০০ এএম আপডেট: ১৭.০৮.২০১৯ ১১:৫৬ পিএম  (ভিজিট : ২৬৫)
ছবি  অমিত/সময়ের আলো

ছবি অমিত/সময়ের আলো

আগুনে তাদের সব পুড়েছে। পুড়েছে ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র, সোনাদানা ও জমানো টাকা-পয়সা। সে সঙ্গে পুড়েছে তাদের বেঁচে থাকার স্বপ্নও। যে মানুষগুলোর দুদিন আগেও ছিল থাকার ঠাঁই, এখন তারা গৃহহীন। খোলা আকাশের নিচেই তাদের ঠিকানা হয়েছে। আর খাবারের জন্য এখন অন্যের কাছেও হাত পাততে হচ্ছে। মিরপুর চলন্তিকা মোড়ের পাশে পুড়ে যাওয়া ঝিলপাড়া বস্তিবাসী সবাই এখন নিঃস্ব। গতকাল দুুপুরে ঘটনাস্থলে দেখা যায়, ঝিলপাড়ায় ৩০ বিঘা জমিতে গড়ে ওঠা বস্তির পুরোটাই আগুনে পুড়ে যেন কয়লা হয়ে গেছে। দেখে বারবার মনে হচ্ছিল, বস্তিতে বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে কালো রঙয়ের লম্বা চাদর। মাঝে মাঝে কয়লার স্তূপও মনে হচ্ছিল। কিন্তু একদিন আগেও যে বস্তির মানচিত্র ছিল, ছিল হাজারও মানুষের বসবাস, সেটি আজ মৃত জনপদের মতো যেন কোনো এক শ্মশান ঘাটে রূপ নিয়েছে।

বস্তির নিম্নবিত্তের এই মানুষগুলো আগুনের রাত থেকেই পাশের মার্কেট, খোলা মাঠ ও স্কুল ভবনে থাকছেন। তবে এই আগুনের ঘটনাকে তারা দুর্ঘটনা হিসেবে দেখছেন না, তারা মনে করছেন এটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ। একটি স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্রের ফল এই অগ্নিকান্ড।

তাদের মতে, বস্তিকে গ্রাস করতেই দুদিক থেকে আগুন দেওয়া হয়েছে। কেউ লাগিয়ে দিয়েছে এই ভয়াল আগুন। আর তা না হলে কীভাবে আগুনের পর কেরোসিনের গন্ধ তাদের নাকে ভেসে আসল? এক আগুন পুড়িয়ে দিয়েছে একটি বস্তির ৫৫ হাজার মানুষের স্বপ্ন। করেছে সহায়-সম্বলহীন।
সব হারিয়ে তারা এখন বাকরুদ্ধ। সাজানো-গোছানো সংসার, সুখের ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে চোখের সামনেই। কিছুই করতে পারেননি তারা। ঘরে রাখা খাবারও পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ায় তাদের সঙ্গে এক বেলার এক মুঠো খাবারও নেই।

ছবি  অমিত/সময়ের আলো

ছবি অমিত/সময়ের আলো

এমনকি অনেকে ছোট্ট শিশুর মুখে কি খাবার তুলে দেবেন সেই টাকা টুকুও নেই। সুইপার আলমগীর এই পুড়ে যাওয়া বস্তিতে বাস করেন প্রায় ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। থাকতেন পুরো পরিবার-পরিজন নিয়ে। তার ১৩ ঘরের সবগুলোই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এখন কোথায় থাকবেন, কি করবেন সেই চিন্তায় ঢুকরে কাঁদছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী, মেয়ে, ছেলে ও ছেলের বৌসহ অন্যরা। দুই চোখ মুছতে মুছতে আলমগীর বলছিলেন, ‘আমার সব কিছু শেষ হইয়া গেল, দেহেন বাবা সব ছাই হইয়া গ্যাছে। আগুনে আমার সব খাইল।’

শুধু আলমগীর নয়, তার মতোই এই বস্তির ৫৫ হাজার মানুষের এখন একই অবস্থা। আগুন লাগার সময় বেশিরভাগ মানুষই ঘর থেকে দৌড় দিয়েছেন। ফলে অনেকে কিছুই নিতে পারেননি। গার্মেন্টস কর্মী লিমা ঈদের ছুটিতে গ্রামে গিয়েছিলেন। রাতেই খবর পান তাদের বস্তিতে আগুন লেগেছে। দেরি না করে রাতে রওনা হয়ে সকালে ছুটে আসেন ঢাকায়। কিন্তু এসে কি হবে! সব পুড়ে যাওয়ায় তার ঘরের কিছুই অবশিষ্ট পাননি। শুধু ঘরের দিকে বারবার ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে মূর্ছা যাচ্ছিলেন এই নারী। লিমা তার ঘরের চিহ্নটুকু বুঝতে পারলেও আসমা সেটাও পারছিলেন না। তিনিও গ্রামে গিয়েছিলেন। ছুটে আসার পর কোনদিকে থাকতেন, কোথায় তার ঘর ছিল সেটাই শুধু হন্য হয়ে খুঁজছিলেন।

অনেকে জমানো টাকা পুড়ে যাওয়ায় কান্নায় ভেঙে পড়েন। বস্তির বাসিন্দা ফারজানা কান্না করতে করতে বলেন, অনেক কষ্ট করে কিছু টাকা জমিয়েছিলাম। কিন্তু সেই টাকাও পুড়ে গেল। আগুন সব খেয়ে নেবে ভাবতেও পারিনি। ঈদ পরবর্তী ছুটি শেষ হওয়ায় অনেকে বস্তিতে এসেছিলেন। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত অনেকে কাজেও ছিলেন। কিন্তু রাতে খবর পেয়ে ছুটে এসে দেখেন পুরো বস্তি পুড়ে ছাই। জিকরুল হাসান বলেন, সন্ধ্যায় কামে গেছি, আইসা দেখি সব পুড়ে শেষ।

গতকাল দুপুরের পর উত্তর সিটির মেয়রের পক্ষ থেকে পুড়ে যাওয়া বস্তিবাসীর জন্য খাবারের আয়োজন করা হয়। উত্তর সিটি মেয়র আতিকুল ইসলাম নিজ হাতে পুড়ে যাওয়া মানুষের মাঝে খিচুরি তুলে দেন। অন্যদিকে ঝিলপাড় বস্তিতে অগিুকান্ডের ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস। এ কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি)।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, বস্তি সংলগ্ন এলাকায় পানি সংকট, সরু গলির কারণে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে না পারা এবং পুরো এলাকায় প্লাস্টিকের পাইপের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহের পাইপগুলো গলে আগুনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়ে তা মুহূর্তেই পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close