ই-পেপার শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪

৩৫৪০ রোহিঙ্গা ফেরাতে প্রস্তুতি
মিয়ানমারের স্বাধীন তদন্ত কমিশনের অগ্রবর্তী দল কক্সবাজারে
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০০ এএম  (ভিজিট : ১৩৬)
মিয়ানমারের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী নতুন-পুরনো মিলে টেকনাফের বেশ কয়েকটি ক্যাম্প থেকে ৩ হাজার ৫৪০ জন রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠাতে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৪নং ক্যাম্পের শরণার্থী বেশি রয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে সীমান্তের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম মৈত্রী সেতু ও টেকনাফের নাফ নদের কেরুনতলির প্রত্যাবাসন ঘাট দিয়ে ওইসব রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফিরে যাবে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম। তিনি সোমবার বিকালে সময়ের আলোকে এসব কথা বলেন। এদিকে রোহিঙ্গাদের জোর করে মিয়ানমারে পাঠানোর গুজবে তাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা বলছে, তারা নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশের কক্সবাজারে পালিয়ে এসেছে। এ মুহূর্তে তাদের জোর করে মিয়ানমারে পাঠালে সেখানে তাদের ওপর আবারও নির্যাতন চলবে। এমন আশঙ্কা থেকে তারা প্রত্যাবাসন বিষয় নিয়ে আলোচনারও দাবি তোলে।

প্রত্যাবাসন নিয়ে ক্যাম্পগুলোতে যাতে কোনো ধরনের গুজব ছড়াতে না পারে এ লক্ষ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে গত রোববার বেলা ১১টায় রোহিঙ্গাদের সঙ্গে টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমোড়া শালবন, লেদা ও নয়াপাড়াসহ বেশ কয়েকটি ক্যাম্পের ইনচার্জরা বৈঠক করেন। বৈঠকে বিভিন্ন ক্যাম্পের চেয়ারম্যান, টিম লিডার, হেড মাঝি, বøক মাঝি ছাড়াও মাস্টার, ঈমাম ও মুরব্বিসহ এনজিওকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের সহকারী খালেদ হোসেন ও মোহাম্মদ আরিফুল জামান।

অন্যদিকে রোববার কক্সবাজারে প্রত্যাবাসন টাস্কফোর্সের কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার নুরুল আলম নেজামী। বৈঠকে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন, কক্সবাজার পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন, অতিরিক্ত আরআরসি শামসুদ্দৌজা নয়ন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এসএম সরওয়াল কামালসহ সেনাবাহিনী ও জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক সম্পর্কে চট্টগ্রাম বিভাগীয় অতিরিক্ত কমিশনার নুুরুল আলম নেজামী জানান, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ প্রস্তুত। আগামী বৃহস্পতিবারের প্রত্যাবাসন নিয়ে আমরা ইতোমধ্যে প্রস্তুতি শেষ করেছি। এখন শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে। সবকিছু ঠিক থাকলে হয়তো এ কার্যক্রম আরও বাড়ানো হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এনজিওকর্মী জানান, ‘শালবন রোহিঙ্গা ক্যাম্পটি গুটা পাহাড়ি এলাকায় হওয়ায় ভয়টা সবসময় থাকে। ক্যাম্পে প্রত্যাবাসন নিয়ে বিভিন্ন গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এই ক্যাম্পে বিকাল হলে ডাকাতের ভয়ে ঘর ছেড়ে অনেকে বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নেয়। ক্যাম্পে অনেকে বলাবলি করছে, যারা মিয়ানমারে ফেরত যেতে রাজি হবে, তাদের ওপর হামলা হতে পারে। ফলে এখানে মানুষের মধ্যে ভয় কাজ করছে। এ ছাড়া ক্যাম্পের পাশে পাহাড়ে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী রয়েছে। মূলত তারাই এসব গুজব ছড়াচ্ছে।’
প্রত্যাবাসনকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে সময়ের আলোকে জানিয়েছেন র‌্যাব-১৫-এর টেকনাফ ক্যাম্পের ইনচার্জ লে. মির্জা শাহেদ মাহতাব। তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পে নিয়মিত টহল দিয়ে যাচ্ছে র‌্যাব সদস্যরা। প্রত্যাবাসন নিয়ে ক্যাম্পে কোনো গুজব ছড়াতে দেওয়া হবে না।’ গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে সাদা পোশাকে র‌্যাবের গোয়েন্দা সদস্যরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলেও তিনি জানান।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৫ নভেম্বর নির্ধারিত সময়ে রোহিঙ্গাদের প্রতিবাদের মুখে প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি। ওই সময় উখিয়ার ঘুমধুম ও টেকনাফের নাফ নদের তীরে কেরুনতলি (নয়াপাড়া) প্রত্যাবাসন ঘাট নির্মাণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে টেকনাফের প্রত্যাবাসন ঘাটে নির্মাণ করা প্যারাবনের ভেতর দিয়ে লম্বা কাঠের জেটি, ৩৩ আধা সেমি টিনের থাকার ঘর, চারটি শৌচাগার রয়েছে। সেখানে ১৬ আনসার ব্যাটালিয়ন ক্যাম্পের সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছে।
মিয়ানমারের স্বাধীন তদন্ত কমিশনের অগ্রবর্তী দল কক্সবাজারে : রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের তথ্য সংগ্রহে মিয়ানমারের গঠিত স্বাধীন তদন্ত কমিশনের অগ্রবর্তী দল এখন কক্সবাজারে। সোমবার বেলা ১১টার দিকে দলটি কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছে। সেখান থেকে রয়েল টিউলিপে বিশ্রাম নেয়। তারপর দুপুর ১টার দিকে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালামের সঙ্গে বৈঠকে বসে। বৈঠকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি, পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে জানানো হয়, মিয়ানমারের গঠিত স্বাধীন তদন্ত কমিশনের সদস্যরা আগামী মাসে রোহিঙ্গাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করবে। এ সময় কী করা হবে, কী কী কাজ করবেÑ এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
প্রতিনিধি দলটির সন্ধ্যায় ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। এ ছাড়া আজ মঙ্গলবার সকালে বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করার কথা রয়েছে। সেখানে রোহিঙ্গাদের সঙ্গেও কথা বলবেন তারা।




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close