প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০০ এএম (ভিজিট : ১৪৭)
অনেক স্বপ্ন ছিল শাহনাজের (৫২) দুই চোখে। সৌদিতে আয় করবেন, সেই টাকা পাঠাবেন নিজ পরিবারকে। ভালই থাকবে তার চার সন্তান ও স্বামী। কিন্তু সেই স্বপ্নপূরণ হলো না। সৌদিতে গৃহকর্মী হিসেবে যাওয়ার আট মাস পর তাকে দেশে ফিরতে হচ্ছে, তবে জীবিত নয়, লাশ হয়ে। শাহনাজের এভাবে চলে যাওয়া কিছুতেই মানতে পারছিলেন না তার ছেলে সজীব। তিনি জানান, তার মায়ের সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয় রমজানের ঈদের আগে। তখন বলেছিলেন তিনি খুব অসুস্থ। সৌদির ওষুধ তার শরীরে কাজ করছিল না। তাই তাকে যেন প্রেসারের ওষুধ পাঠানো হয়। সজীব কষ্ট ভরা কণ্ঠে সময়ের আলোকে বলেন, হেয় আমারে ওষুধ পাঠাতে কইছিল কিন্তু ওষুধ তো পাঠাইতে পারলাম না। তার আগেই--------।
শাহনাজ নারায়ণগঞ্জের বন্দরথানার চুনাবুড়া গ্রামের আছির উদ্দিনের স্ত্রী। গ্রামের দালালের খপ্পরে পড়ে এজেন্সির মাধ্যমে সৌদিতে যান শাহনাজ। যাওয়ার পর থেকে তাকে ওই বাসার বাইরেও একটি বাসায় জোর করে কাজ করানো হতো। ঠিকভাবে বেতনও দেওয়া হতো না। শাহনাজের পরিবারের অভিযোগ, শাহনাজ অসুস্থ হলেও তাকে কোনো প্রকার প্রকার চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। শাহনাজ সৌদিতে যাওয়ার পর আট মাসে মাত্র সাতবার ফোন করেছেন। তবে ফোন কাটার পর তাকে আর ওই নাম্বারে কল করলেও পাওয়া যেত না।
শাহনাজের ছেলে সজীব জানান, তার মা আট মাস আগে গত বছরের জুলাই মাসে মেসার্স হিমেল এয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সৌদিতে পাড়ি জমান। সেখানে যাওয়ার পর তাকে তিন মাসের বেতনও পাঠান। কিন্তু গত রমজান থেকে তার আর কোনো খোঁজখবর ছিল না। শাহনাজ তাকে ফোনও করতেন না। পরবর্তী সময়ে তারা ওই এজেন্সির মালিক ও অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন কিন্তু কোনো প্রকার সহযোগিতা পাননি। হঠাৎ একদিন ফোন করে শাহনাজের মৃত্যুর সংবাদটি পরিবারকে জানায় এজেন্সির লোকরা।
সজীব সময়ের আলোকে বলেন, মালিকরা তারে আরও একটা বাসায় কাজ করাইত। সেইটা মায় কইছিল। তয় তার প্রেসার বাড়ছিল। হের লাইগা ওষুধ চাইছিল কিন্তু পাঠাইবার পারলাম না। এ বিষয়ে মেসার্স হিমেল এয়ার সার্ভিসের মালিক আবুল কাসেমের সঙ্গে সময়ের আলোর পক্ষ থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। এদিকে শাহনাজের পরিবার আরও জানিয়েছে, আজ মঙ্গলবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে আমিরাত এয়ারওয়েজের একটি বিমানে দেশে আসছে শাহনাজের লাশ। সকালে তারা বিমানবন্দরে লাশ গ্রহণ করার জন্য যাবেন।