ই-পেপার শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪

মামলার বেড়াজালে আটকে ২ হাজার ৯৩০ কেজি স্বর্ণ
১১ বছর ধরে বন্ধ স্বর্ণ বিক্রির নিলাম প্রক্রিয়া
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০০ এএম আপডেট: ২২.০৮.২০১৯ ১১:৩৯ পিএম  (ভিজিট : ২৯৮)
চোরাইপথে আসার পর বিভিন্ন সংস্থার অভিযানে ধরা পড়ছে স্বর্ণের বার ও স্বর্ণালঙ্কারের চোরাচালান। নিয়মানুযায়ী তা জমা হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে বর্তমানে জমা রয়েছে প্রায় ২ হাজার ৯৭৭ কেজি স্বর্ণ। যার মধ্যে মামলা প্রক্রিয়ায় আলামত হিসেবে স্বর্ণ বার ও স্বর্ণালঙ্কার মিলিয়ে জব্দ রয়েছে প্রায় ২ হাজার ৯৩০ কেজি। চোরাই হিসেবে আটক স্বর্ণ নিলামের মাধ্যমে বিক্রির বিধান থাকলেও মামলার আলামত হিসেবে আইনি বেড়াজালে বন্দি আছে ওই বিপুল স্বর্ণ। আটক স্বর্ণ নিলামের মাধ্যমে বিক্রির এ প্রক্রিয়াটিও দীর্ঘ ১১ বছর বন্ধ রয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্থনীতির স্বার্থে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির মাধ্যমে জব্দকৃত স্বর্ণ বিক্রি করা উচিত। এতে স্থানীয়ভাবে স্বর্ণের সংকট যেমন দূর হবে, তেমনি কমবে চোরাচালান। এ ছাড়াও এই বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ বিক্রির মূল্য জাতীয় রাজস্ব খাতে যুক্ত হলে সে টাকা রাষ্ট্রের কাজে লাগবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ সময়ের আলোকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্ব হলো স্বর্ণগুলো জমা রাখা। তবে কেন্দ্রীয়   ব্যাংকে দিনের পর দিন জমা থাকা মোটেও সমীচীন নয়। এ ক্ষেত্রে সরকারের উচিত আটককৃত স্বর্ণের যেসব মামলা প্রক্রিয়াধীন সেগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি করা। তা না হলে চোরাকারবারিরা আরও উৎসাহিত হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে বিভিন্ন সময় চোরাইপথে আসা আটককৃত স্বর্ণের বার জমা রয়েছে (২০১৯ সালের ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত) ২ হাজার ১৩১ কেজি ৫৫৪ গ্রাম ৫৪০ মিলিগ্রাম। অন্যদিকে আটককৃত স্বর্ণালঙ্কারের মজুদের পরিমাণ ৮৪৫ কেজি ৮২৬ গ্রাম ৬৬৩ মিলিগ্রাম। এসব স্বর্ণের মধ্যে মামলা প্রক্রিয়াধীন স্বর্ণের বারের পরিমাণ ২ হাজার ১১১ কেজি ৮০ গ্রাম ৮৪০ মিলিগ্রাম এবং স্বর্ণালঙ্কারের পরিমাণ ৮১৯ কেজি ২৮১ গ্রাম ১৯৩ মিলিগ্রাম।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে স্বর্ণ পাচারের অর্ধশতাধিক মামলা প্রায় ধামাচাপা পড়ে আছে। অধিকাংশ মামলারই অগ্রগতি শূন্যের কোঠায়। কোনো কোনো মামলা ঝুলে রয়েছে বছরের পর বছর। তদন্তের নামে বিভিন্ন সংস্থার হাতবদল হলেও শেষ পর্যন্ত বিচার প্রক্রিয়া পর্যন্ত যেতেই সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। ফলে বরাবরের মতো আড়ালেই থাকছে চোরাচালান সিন্ডিকেটের সদস্যরা। অন্যদিকে জড়িতরা শাস্তির মুখোমুখি না হওয়ায় স্বর্ণ চোরাচালানের প্রবণতাও বাড়ছে।

সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, চাহিদার প্রায় ৯০ ভাগই পূরণ হচ্ছে চোরাচালান স্বর্ণের মাধ্যমে। বাকিটা বাগেস রুলসের আওতায় আনা স্বর্ণের মাধ্যমে পূরণ হয়। প্রায় প্রতিদিনই দেশের বিমানবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ আসছে। এর মধ্যে কিছু স্বর্ণ দায়িত্বশীল বিভিন্ন সংস্থার হাতে ধরা পড়ে। সূত্রে আরও জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত স্বর্ণ বিক্রির সর্বশেষ নিলাম হয়েছিল ২০০৮ সালে। এরপর গত ১০ বছরে আর কোনো নিলাম হয়নি। এ জন্য বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম সময়ের আলোকে বলেন, চোরাইপথে আসা বেশিরভাগ স্বর্ণ সংক্রান্ত মামলা বিচারাধীন। আর বিচারাধীন থাকার কারণে স্বর্ণালঙ্কার নিলাম হচ্ছে না। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্বর্ণ বার বাংলাদেশ ব্যাংক নিলামে দেয় না। এটা প্রয়োজন মনে করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিনে নিয়ে রিজার্ভে যুক্ত করে থাকে।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা সময়ের আলোকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত যে স্বর্ণ আছে সেটা শিগগিরই নিলামে দেওয়া হোক। যদি নিলামে না দেওয়া হয় তাহলে এক বছরের জন্য ওপেন করে দেওয়া হোক, যাতে সবাই চাহিদাপত্র দিতে পারে এবং সে অনুসারে যাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়।

জানা গেছে, যেসব স্বর্ণের বিপরীতে করা মামলার নিষ্পত্তি হয় এবং ভল্টে রাখা স্বর্ণ যদি আদালতের মাধ্যমে সরকারের অনুক‚লে জব্দ করা হয়, সেসব স্বর্ণ নিলাম করা হয়। তবে যেসব স্বর্ণের বার বা ‘বিস্কুট’ আকারে আছে, সেগুলোকে বিশুদ্ধ স্বর্ণ মনে করা হয়। এগুলো সাধারণত বাংলাদেশ ব্যাংক কিনে নেয়। পরে তারা এগুলোকে রিজার্ভে দেখানোর জন্য ভল্টে রেখে দেয়। নিলামের টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারকে দিয়ে দেয়।

সূত্র আরও জানায়, স্বাধীনতার পর থেকে জব্দ হওয়া স্বর্ণের মধ্যে রাষ্ট্রের অনুকূলে আদালত থেকে বাজেয়াপ্ত হওয়া ২ হাজার ৩০০ কেজি স্বর্ণ কিনে রিজার্ভে যোগ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সর্বশেষ ২০০৮ সালে চার দফায় ৯১ কেজি স্বর্ণ নিলাম করা হয়।

প্রসঙ্গত, প্রতিবছরে স্বর্ণের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৪০ টন। এ চাহিদার পুরোটাই আমদানির মাধ্যমে পূরণ হওয়ার কথা। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন সাপেক্ষে এখন পর্যন্ত স্বর্ণ আমদানি হয়নি। বর্তমান বাজার দর অনুসারে, ভালোমানের (২২ ক্যারেট) স্বর্ণের দাম প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) ৫৬ হাজার ৪৬২ টাকা। ২১ ক্যারেট স্বর্ণের বাজার চলছে ৫৪ হাজার ৫২৯ টাকা। আর ৪৯ হাজার ৫১৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণ।




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close