ই-পেপার শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪

আরব আমিরাত থেকে আসছে ৮৫ হাজার কোটি টাকা
বিনিয়োগের নতুন দ্বার উন্মোচন
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম  (ভিজিট : ২২২)
বাংলাদেশের জন্য বিনিয়োগের আরেক নতুন দ্বার উন্মোচন হলো। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে ১০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ করবেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৮৫ হাজার কোটি টাকা। দেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি, বন্দর ও অবকাঠামো খাতে এই অর্থ বিনিয়োগ করবেন আরব আমিরাতের ব্যবসায়ীরা। তা ছাড়া এই অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশে কয়েকটি প্রকল্পসহ পাঁচটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলবে সংযুক্ত আরব আমিরাত।
দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যাপী বাংলাদেশ ইকোনমিক ফোরামের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন দেশটির শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা। সম্মেলনে প্রায় ২৫ নতুন বিনিয়োগ প্রকল্প উপস্থাপন করা হয়। এতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এবং বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের (বিএইচটিপিএ) কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত ২০ সদস্যের সরকারি প্রতিনিধিদল অংশ নেন। অনুষ্ঠানে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাংলাদেশের ৩শ’র বেশি সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী নেতা, বিনিয়োগকারী এবং উদ্যোক্তা উপস্থিত ছিলেন।
সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগকে (এফডিআই) ত্বরান্বিত করতে বাংলাদেশ একশ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও ২৮টি হাইটেক পার্ক নির্মাণ করছে। ফলে গত বছরে বিনিয়োগের পরিমাণ ৬৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে তিন দশমিক ৬১ মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি)-এর মতে ২০২১ সালের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশে অবকাঠামো খাতে বার্ষিক ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন। এআইআইবি তথ্য অনুসারে ২০১৭ সালে অবকাঠামোগত কাজে বিনিয়োগ দিগুণেরও বেশি হয়ে ৩১ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে হয়েছে। যা ২০১৮ সালে আরও বেড়ে ৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। বাংলাদেশকে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশে^র বৃহত্তম ৩০তম দেশে পরিণত হতে হলে শুধু অবকাঠামো খাতে ৩২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রয়োজন।
দুবাইয়ের কনরাড হোটেলে বাংলাদেশ ইকোনমিক ফোরমের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যে ২৫টি নতুন বিনিয়োগ প্রকল্প বাংলাদেশ ইকোনমিক ফোরামে সামনে উপস্থাপন করা হয় তা নিয়ে যেখানে বিনিয়োগকারীরা সালমান এফ রহমান ও সফররত বাংলাদেশের সরকারি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনা করেন।
বাংলাদেশ ইকোনমিক ফোরামের তথ্য অনুসারে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (৩৭ দশমিক ৭ বিলিয়ন দিরহাম) বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিনিয়োগকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এ বিষয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশে অর্থনীতিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে আগ্রহ দেখে আমি অত্যন্ত খুশি। আমরা সব সময় চীন, জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বড় ধরনের বিনিয়োগ দেখে আসছি। এখন আমরা বিশ^াস করি জিসিসিভুক্ত দেশগুলো বিশেষ করে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ মাধ্যমে স্বল্প ব্যয়, অপারেশন্স এবং উচ্চতর রিটার্নের সুবিধা নেওয়া উচিত। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও জিসিসিভুক্ত দেশগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্রধান উৎস হতে পারে। দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতি গঠনে সহায়তা করতে এ বিনিয়োগের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকার ও বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে বাংলাদেশ একশটি অর্থনৈতিক অঞ্চল ও ২৮টি হাইটেক পার্ক নির্মাণ করছে। মুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চলের ধারণা বাস্তবায়ন করতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিনিয়োগকারীদের জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ একটা সুযোগ।
বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে ব্যবসা ও বিনিয়োগের ধারা শক্তিশালী করতে বিনিয়োগভিত্তিক এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ৩০০ জনেরও বেশি সরকারি কর্মচারী, ব্যবসায়িক নেতা, বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তারা অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশিরাই আমিরাতের অর্থনীতিতে প্রধান বিনিয়োগকারী যেখানে ৫০ হাজার ব্যবসা বাংলাদেশি প্রবাসী মালিকানাধীন ও তাদের দ্বারা সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এসব ব্যবসা থেকে প্রায় দেড় লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭.৯ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে। বাংলাদেশের এই প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতি ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছাড়িয়ে যাবে যা বাংলাদেশকে পৃথিবীতে দ্রæত বর্ধমান অর্থনীতির দেশে পরিণত করবে। ৮ শতাংশের বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে বাংলাদেশের প্রচুর বিদেশি ও স্থানীয় বিনিয়োগ প্রয়োজন যা প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করবে। বিশ^ব্যাংকের হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশের দ্রæত বর্ধনশীল জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে বিদ্যুৎ, সড়ক ও পানি সরবরাহে বাংলাদেশকে ২০২০ সাল নাগাদ প্রায় ৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন থেকে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করতে হবে।
বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ইউএই ও জিসিসিভুক্ত দেশগুলো প্রধান উৎস হতে পারে। সময় এসেছে বাংলাদেশের ইউএই থেকে অনুক‚ল বিনিয়োগের সুযোগগুলো নিয়ে দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণ করার। সম্মলনে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান আরও বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত আমাদের সর্বনিম্ন শ্রমিক খরচ ও স্বল্প পরিচালনা ব্যয় থেকে লাভবান হতে পারে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও উপসাগরীয় অঞ্চলের বিনিয়োগকারী বন্ধুরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্রমবর্ধমান সুযোগ নিয়ে লাভবান হতে পারে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মাদ ইমরান বলেন, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি, বন্দর ও অবকাঠামো খাতে আমিরাতের ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার ফলে এই বছর দুই দেশের সম্পর্ক এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। এই বিনিয়োগ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করবে।
বাংলাদেশ ইকোনমিক ফোরামের সদস্য ও একজন বিনিয়োগ পরামর্শদাতা শেখ আব্দুল কারিম বলেন, একটি বেসরকারি পরামর্শক দল হিসেবে বাংলাদেশ ইকোনমিক ফোরাম বাংলাদেশি প্রকল্প অধিকারী ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দূরত্ব ঘোচাতে সদা প্রস্তুত রয়েছে। এটা সরকারি খাতে বিভিন্ন সংস্থা ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও দূরত্ব দূর করে সব ধরনের বিনিয়োগ উদ্যোগকে সহায়তা দিতে চায়।
এ বছর ফেব্রæয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তিন দিনের সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরের সময় মোট চারটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এই স্মারক অনুযায়ী আমিরাতের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে একটি বন্দর, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, এলএনজি টার্মিনাল, পাওয়ার প্ল্যান্ট ও একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলবে। তিনি আরও বলেন, এই বিনিয়োগ দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করে তুলবে ও কৌশলগত অংশীদারিত্বের যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক তা আরও গভীর হবে।




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close