ই-পেপার শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪

ঋণ আত্মসাৎকারীর ধ্বংস অনিবার্য
প্রকাশ: বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম আপডেট: ১৮.০৯.২০১৯ ১২:২৫ এএম  (ভিজিট : ৩৬৪)
ইসলামী অর্থ ব্যবস্থায় ঋণের খাতটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ খাতে পরের অধিকার নিহিত থাকে। ঋণ প্রদানকারী ও ঋণ গ্রহণকারী উভয়েই পরস্পরের সহযোগী হিসেবে লেনদেন করে থাকে। ঋণ শুধু লেনদেনই নয়, বরং একটি আমানতও। এতে কোনো প্রকার খেয়ানত করা যাবে না। ঋণ প্রদানকারী সবসময় স্বীয় ধার দেওয়া টাকা বা বস্তু ফিরিয়ে নেওয়ার অধিকার রাখে।

ঋণ মানবীয় অধিকার, বান্দার হক। এটি অনাদায়ী থেকে গেলে আল্লাহও ক্ষমা করবেন না। ঋণের ব্যাপারে মুমিনরা অবশ্য সচেতন থাকতে হবে। ঋণ বিষয়ে ফাঁকিবাজি করা ইসলাম সমর্থন করে না। আত্মসাতের নিয়তে ঋণ গ্রহণ করা অমার্জনীয় অপরাধ।

ইসলামে ঋণ পরিশোধের গুরুত্ব
ঋণ প্রথা পরোপকারের বিষয়াদির মধ্যে অন্যতম। তবে ঋণ গ্রহীতাকে ঋণ দাতার নিকট তার প্রাপ্য পৌঁছে দেওয়া কর্তব্য। এটি অনাদায়ি থেকে গেলে ঋণ গ্রহীতাকে আল্লাহর নিকট জবাবদিহী করতে হবে। আর আল্লাহ তায়ালা ঋণ বিষয়ে বান্দার পক্ষে কোনো প্রকার সুপারিশ করবেন না। কারণ, এটি হুকুকুল ইবাদ বা বান্দার হক। ঋণ গ্রহীতাকে ঋণ থেকে মুক্তির জন্য ঋণ দাতার নিকট তা পরিশোধ করা বা ক্ষমা চাওয়া দুটোই বান্দার ওপর নির্ভর করে। তাই ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধের ক্ষেত্রে বান্দাকেই সচেতন
থাকতে হবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমাদের আমানতসমূহ তথা অন্যের হক, স্বত্ব ও প্রাপ্য প্রাপকের নিকট অর্পণ করবে এবং যখন লোকদের মধ্যে বিচার-মীমাংস কর, তখন ইনসাফের সাতে বিচার-মীমাংসা করবে। আল্লাহ তায়ালা তোমাদের যেসব নসিহত করেন, তা কতই না উত্তম ও ভালো। আল্লাহ তায়ালা সব কিছু শুনেন ও দেখেন।’ (সূরা নিসা : ৫৮)। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি পরিশোধ করার দৃঢ় ইচ্ছার সঙ্গে মানুষের ধণ ঋণরূপে গ্রহণ করবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে সেই ঋণ পরিশোধে সাহায্য করবেন। আর যে ব্যক্তি আত্মসাৎ করার উদ্দেশে ঋণ গ্রহণ করবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে ধ্বংস করবেন।’ (বোখারি : ২৪২৬)

ঋণ দিয়ে অতিরিক্ত ফায়দা অর্জন
মানুষ মানুষের জন্য। মানব সমাজে ঋণের প্রয়োজন রয়েছে। একে অপরকে ঋণ দিয়ে সহযোগিতা করবে এটাই স্বাভাবিক। তবে ঋণের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কোনো অংশগ্রহণ করা বৈধ হবে না। আর ঋণ বাবদ সুদ গ্রহণ করা ইসলামী শরিয়তে সম্পূর্ণ নাজায়েজ ও হারাম। এমনকি ঋণ গ্রহীতার পক্ষ থেকে সম্মানি গ্রহণ বা নাস্তা খাওয়াও ঠিক হবে না। কিন্তু ঋণ দাতা ও গ্রহীতার মাঝে পূর্ব পরিচিত সম্পর্কের কারণে যদি আপ্যায়নের আয়োজন করা হয়, তাহলে তাতে কোনো সমস্যা নেই। এ মর্মে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যদি কোনো ব্যক্তিকে ঋণ দেয়। অতঃপর ঋণগ্রহীতা যদি দাতাকে কোনো হাদিয়া বা উপহার দেয়, তা গ্রহণ করবে না অথবা গ্রহীতা দাতাকে যানবাহনের প্রাণীতে ওঠাতে চায়, তবে তাতে আরোহণ করবে না। কিন্তু যদি ঋণ নেওয়ার পূর্ব থেকে তাদের মধ্যে এরূপ ব্যবহার প্রচলিত থাকে, তবে তা স্বতন্ত্র কথা।’ (ইবনে মাজাহ : ২৫২৬)

ঋণ পরিশোধ ছাড়া মাফ হয় না
ঋণ বান্দার হক। এটি আদায় করা ঈমানি দায়িত্ব। ঋণ পরিশোধ বা মাফ না করা পর্যন্ত অনাদায়ি থেকে যাবে। এমনকি কোনো মুমিন আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হলে তার সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যাবে, কিন্তু তার ঋণ মাফ হবে না। ঋণের দায়িত্ব আল্লাহ তায়ালা কখনও নিবেন না। তাই ঋণ দাতা ও গ্রহীতা উভয়েই ঋণ বিষয়ে সমাধানের পথ খুঁজে নিতে হবে। অন্যথায় ঋণ মাফ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আর অনাদায়ি ঋণ জান্নাতের প্রবেশে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, ‘শহীদের সমস্ত গুনাহ মাফ করা হয়, তবে ঋণ ব্যতীত।’ (মুসলিম : ৪৯৯১)। তিনি আরও বলেন, ‘মুমিনের আত্মা ঋণের কারণে ঝুলন্ত থাকে যতক্ষণ না তা তার পক্ষ থেকে আদায় করা হয়।’ (আহমদ)

ঋণ পরিশোধে টালবাহানা করা অন্যায়
ঋণ পরিশোধে কোনো প্রকার টালবাহানা গ্রহণযোগ্য নয়। বর্তমান সমাজে ঋণ গ্রহীতা ঋণ পরিশোধকালে বিভিন্নভাবে টালবাহানা করতে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে ঋণ দাতাকে তার প্রাপ্য ফিরে পেতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। তাই অধুনা সমাজে ঋণ প্রদানে উপকারের বদলায় অপকারই যেন বেশি মিলছে। তবে এ সব প্রতারণা ইসলামী শরিয়ত মোটেই সমর্থন করে না। দ্রুত ঋণ পরিশোধ করাই হলো ইসলামের মহান শিক্ষা। রাসুল (সা.) বলেন, ‘ঋণ পরিশোধে সামর্থ্যবান ব্যক্তির টালবাহানা করা অতি বড় অন্যায়।’ (বোখারি : ২৪৩৯)। তাই আসুন, ঋণ পরিশোধে সবাই যত্নশীল হই। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।

লেখক : শিক্ষক, নাজিরহাট বড় মাদ্রাসা
ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close