ই-পেপার শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪
শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪

ক্লাবের আড়ালে ক্যাসিনো
কোটি টাকা আয়ের উৎস
প্রকাশ: শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম আপডেট: ২০.০৯.২০১৯ ২:১৬ পিএম  (ভিজিট : ১৫৪)
 ঢাকায় নতুন আলোচনায় ক্যাসিনো। কিন্তু এই ক্যাসিনোর ব্যবসা বা ক্যাসিনোয় খেলার প্রচলন তো হুট করেই গড়ে ওঠেনি। এক সময় ঢাকায় বিভিন্ন ফুটবল ক্লাব গড়ে উঠেছিল। ভিক্টোরিয়া, ওয়ান্ডারার্স, আরামবাগ ক্রীড়া চক্র, ফকিরাপুল ইয়ংমেন্স, ব্র্রাদার্স ইউনিয়ন, আবাহনী ও মোহামেডান ক্লাব ছিল অন্যতম। কিছু ক্লাব ফুটবল ছাড়াও হকি টিম গঠন করত। আসত বিদেশি খেলোয়াড়ও। যা ছিল এক সময়ের সোনালি দিন। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় দিনগুলো হারিয়ে গেছে। সেই ক্লাবগুলো সোনালি যৌবন হারিয়ে এখন ক্যাসিনোর কারখানায় রূপান্তরিত হয়েছে।

যেসব ক্লাবের বিরুদ্ধে অবৈধ ক্যাসিনোর অভিযোগ উঠছে তারা প্রায় সবাই একসময় ক্রীড়াঙ্গনে প্রবল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। কিন্তু কবে, কীভাবে ঢাকার মতিঝিলের ক্লাবগুলো থেকে খেলাধুলা বিদায় নিয়ে নিষিদ্ধ ব্যবসা চালু হলো তা নিয়ে নানা ধরনের মত পাওয়া যায়। তবে এই বিষয়টিকে উদ্বেগের বলছেন কেউ কেউ। কারণ এসব ক্লাবেই খেলতেন দেশের অনেক নামকরা ফুটবল খেলোয়ার। শুধু তাই নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে মুক্তিযোদ্ধাদের নামে ক্লাব খুলে তাতে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি টাঙ্গিয়ে ক্যাসিনো চালানোয় অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র নামে যে ক্লাবটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে তৈরি হয়েছিল সেটির মূল কাজই  হয়ে দাঁড়িয়েছে জুয়ার আয়োজন করা। বুধবার রাতে রাজধানীর কয়েকটি ক্লাবে অভিযান চালায় র‌্যাব। এসব অভিযানে কয়েকটি ক্লাব সিলগালা করেও দেওয়া হয়। আটক করা হয় প্রায় ২শ কাছাকাছি নারী ও পুরুষকে। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের একজন প্রভাবশালী নেতাও ছিলেন। তার তত্ত¡াবধায়নেই মূলত চলত সেই ক্যাসিনোটি।

খোঁজ নিয়ে গেছে, এসব ক্লাবগুলো এখন আর কোনো খেলোয়াড় বা সংগঠন পরিচালনা করেন না। সব ক্লাবগুলোরই নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সরকার দলীয় নেতাদের কয়েকজন। যাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অভিযোগ আসছে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মহল থেকেই। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এসব ক্লাবে দীর্ঘকাল ধরেই জুয়ার চর্চা ছিল, কিন্তু অনুমোদনহীন ক্যাসিনো কীভাবে হলো তার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায় না তেমন একটা। তবে ক্লাবগুলোর সঙ্গে জড়িত কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে আবাহনী-মোহামেডানসহ অন্য প্রায় সব ক্লাবেই জুয়ার প্রচলন ছিল আশির দশক থেকেই এবং সেটি করা হতো মূলত ক্লাবের পরিচালন ব্যয় নির্বাহের জন্য। তখন ক্লাবের সংগঠকরা রাজনীতিতে খুব একটা সক্রিয় ছিলেন না বরং ক্লাবগুলোর মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা ছিল, ফলে খেলাধুলাতেও ক্লাবগুলো বেশ ভালো করেছিল। তখন মূলত ওয়ানটেন নামে একটি জুয়া হতো। যেটি হাউজি নামেও পরিচিত ছিল। সপ্তাহে কয়েকদিন হতো। ক্লাবের বার্ষিক দাতাদের বাইরের বড় আয় আসত এই হাউজি থেকেই, বলছিলেন ঢাকার একটি ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক।

ঢাকার ক্যাসিনোগুলোর অনেকগুলোই ঘুরে দেখেছেন ব্যবসায়ী সুমন জাহিদ। তিনি বলেন, ঢাকায় ক্লাবে ক্যাসিনো সংস্কৃতির সূচনা হয়েছে কলাবাগান ক্লাবের হাত ধরে প্রায় ৭-৮ বছর আগে। এরপরই স্পট মেশিন, জুয়ার আন্তর্জাতিক মানের বিশেষ বোর্ড এগুলো আসতে শুরু করে ক্লাবগুলোতে। প্রথমে সব ক্লাবই বাকারা নামে একটি খেলা দিয়ে শুরু করে। পরে যোগ হয় রুলেট নামে আরেকটি খেলা।

তবে এর ভিন্ন মতও আছে। নিয়মিত ক্যাসিনোতে যান এমন একজন জানান মতিঝিলের ক্যাসিনোগুলোতে যাওয়ার আগে তিনি মালিবাগের সৈনিক ক্লাবের ক্যাসিনোতে গিয়ে খেলেছেন। বিদেশের মতো বিশাল বড় ফ্লোরে হরেক রকমের জুয়া খেলার যন্ত্রপাতির সমাহার না হলেও স্পট মেশিন কম-বেশি সব ক্লাবে পৌঁছে গেছে গত ৫-৬ বছরে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপপরিচালক মুকুল চাকমা বলছেন, তিনি সেগুনবাগিচা এলাকায় অবৈধ মাদক সেবনের খবর পেয়ে একটি অভিযান চালান বছর দুয়েক আগে এবং সেখানেই ক্যাসিনোর অস্তিত্ব পান। পরে সেটি বন্ধও হয়ে যায় বলে জানান তিনি। সেগুনবাগিচায় একটি বন্ধ হলেও পরবর্তীতে মতিঝিল, কলাবাগান, তেজগাঁও এবং এলিফ্যান্ট রোডে জমজমাট হয়ে উঠে কয়েকটি ক্যাসিনো। তবে এর আগেই নগরীতে ক্যাসিনোর ধারণা কলাবাগান থেকে শুরু হলেও এর নির্ভরযোগ্য আরেকটি জায়গা হয়ে দাঁড়ায় তেজগাঁওয়ের ফুওয়াং ক্লাব।

মূলত তাইওয়ানিজদের একটি দল ২০০০ সালের দিকে এখানে পানশালা-কাম-রেস্তোঁরা চালু করে। পরে তাদের বিদায়ের পর বাংলাদেশি একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তার হাত ধরে চালু হয় ক্যাসিনো। এর মধ্যে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর মতিঝিলের ক্লাবগুলোর নিয়ন্ত্রণ যায় যুবলীগের কয়েকজন নেতার হাতে। তারাই মূলত ক্লাবগুলো থেকে খেলাধুলাকে গুরুত্বহীন করে দিয়ে সামনে নিয়ে আসেন ক্যাসিনোকে।





সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close