ই-পেপার শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪
শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪

মানব পাচার ইসলামে নিষিদ্ধ
প্রকাশ: সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম আপডেট: ২৩.০৯.২০১৯ ১২:১৮ এএম  (ভিজিট : ৬৬০)
পত্রিকার পাতায় প্রায়ই বিদেশে মানব পাচারের খবর দেখতে পাই। আবার বিদেশ-ফেরত কর্মীদের করুণ জীবন আখ্যানও প্রচার হয় মিডিয়ায়। এ নিয়ে নানা আইনের কথা শুনলেও বাস্তবে রোধ হচ্ছে না মানব পাচার। বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে একশ্রেণির অসাধু দালালরা প্রতিনিয়ত মানুষ পাচার করে চলছে। দালালদের খপ্পরে পড়ে অনিশ্চিত জীবনে পাড়ি জমাচ্ছে শত শত নারী-পুরুষ; যাদের অনেকেই স্বল্প শিক্ষিত কিংবা মুর্খ।

ইসলামের বিধান অনুযায়ী স্বেচ্ছায় অবৈধপথে বিদেশ গমন কিংবা জোরপূর্বক নারী ও শিশু পাচারের প্রবণতা উভয়টিই সমান অপরাধ। হালে নৌপথ, আকাশপথ এবং সীমান্ত চুক্তি লঙ্ঘন করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষরা অবৈধপথে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। এদের দ্বারাই কিছু দিন পর পথে পথে রচিত হচ্ছে অচেনা কবর ও গণকবর। সমুদ্রে অসহায় ভাসছে মানুষ। জীবন জিম্মি করে এমন দাস-প্রকৃতি ইসলাম আদৌ পছন্দ করে না। অন্যায় ও অবৈধ পন্থায় মানুষের এ উপার্জনও হালাল হবে না। ইসলামে মানব পাচার মৌলিকভাবে চার কারণে নিষিদ্ধ।

প্রতারণার আশ্রয়
দালাল চক্রের মিথ্যা প্রতারণা এবং ধোঁকাবাজিমূলক নানা প্রলোভনের মাধ্যমে মানব পাচার সম্ভব হচ্ছে। নারী শিশু তো বটেই অনেক গ্রাম্য মূর্খ লোকরদের সঙ্গেও মিথ্যা প্রতিশ্রæতি দেওয়া হচ্ছে। ফলে মানুষজন বিপদগামী হচ্ছে।

ইসলামে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি কিংবা প্রতারণার কোনো জায়গা নেই। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা এমন কথা কেন বল, যা তোমরা বাস্তবায়ন করো না? আল্লাহর কাছে সবচেয়ে ঘৃণ্য সে ব্যক্তি, যে নিজে যা বলে তা বাস্তবে করে না।’ (সুরা সাফ: ২-৩)। আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করো।’ (সুরা মায়েদা : ১)। আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, ‘প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে। প্রতিশ্রুতি বিষয়ে তোমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ (সুরা বানি ইসরাইল : ৩৪)। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে না দ্বীন ইসলামে তার কোনো অংশ নেই।’ (মুসলিম)। মানুষের বিশ্বাসের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে মানব পাচারকারী চক্র অনৈতিকভাবে এই পেশা চালিয়ে যাচ্ছে। সুতরাং প্রতারণা আর ধোঁকার এ কাজ ইসলাম সমর্থন করতে পারে না।

জীবনের ঝুঁকি এবং আত্মহত্যা
ইসলামে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। জীবনের ঝুঁকি বাড়ায় এমন বিপদগামী পথে চলার অনুমতি নেই ইসলামে। অন্যায় পথে বিদেশে যাওয়ার কারণে বনে জঙ্গলে গণকবর পাওয়া যাচ্ছে। জীবনে এ হুমকি আত্মহত্যার মতো জঘন্য অপরাধ। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিজের জীবনকে ধ্বংসের সম্মুখীন করো না। আর মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করো। আল্লাহ অনুগ্রহকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা : ১৯৫)
মহান আল্লাহ আরও বলেন, ‘তোমরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়ালু। যে কেউ জুলুম করে, অন্যায়ভাবে আত্মহত্যা করে, অবশ্যই আমি তাকে অগ্নিদগ্ধ করব। আল্লাহর পক্ষে তা সহজসাধ্য।’ (সুরা নিসা : ২৯-৩০)। বিপদগামী এ পথ পরিহার করে সুস্থ-সুন্দর ও নিরাপদ জীবনে উৎসাহিত করে ইসলাম। বিদেশ গমনের নামে জেনেশুনে আত্মাহুতি নয়, জীবন হোক নিরাপদ।

অবৈধ পথের উপার্জন হারাম
ইসলামী শরিয়তের মূলনীতি হলো কোনো বৈধ কাজের জন্য অবৈধ পন্থা অবলম্বন করার অনুমতি নেই। টাকা উপার্জন বৈধ, তবে অবশ্যই হালাল পন্থায় হতে হবে। চোরাইপথে ধোঁকা প্রতারণা আর দেশ বিদেশের আইন ফাঁকি দিয়ে বিদেশ গমন করে অর্জিত অর্থ হালাল নয়। মহানবী (সা.) সতর্ক করে বলেন, ‘মানুষের নিকট এমন একটি সময় আসবে যখন ব্যক্তি কোন উৎস থেকে সম্পদ আহরণ করছে, তা হালাল না হারাম সেদিকে কোনো ভ্রƒক্ষেপ করবে না।’ (বুখারি : ২০৫৯)। নবীজি আরও বলেছেন, ‘যে দেহ হারাম খাদ্য দ্বারা গড়ে ওঠে, তার জন্য দোজখের আগুনই উত্তম।’ (জামিউস সগির : ৮৬৪৮)। পবিত্র কোরআনের ভাষ্য হলো ‘হে ঈমানদার লোকেরা! আল্লাহ যেসব ভালো জিনিস তোমাদের জন্য হালাল করেছেন, তোমরা সেগুলো নিষিদ্ধ করে নিয়ো না এবং সীমালঙ্ঘন করো না। আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না। আর আল্লাহ তোমাদের যেসব হালাল ও ভালো জীবিকা-জীবন উপকরণ দিয়েছেন সেগুলো ভোগ ও আহার করো এবং সেই আল্লাহকে ভয় করো যার প্রতি তোমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছো।’ (সুরা মায়েদা : ৮৭-৮৮)

সীমান্ত চুক্তি ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন
 কোরআন-সুন্নাহ পরিপন্থি নয় দেশ-বিদেশের এমন আইন মেনে চলা আবশ্যক। অমান্য করা ইসলামের দৃষ্টিতে অপরাধ। পররাষ্ট্রনীতি অনুযায়ী অবৈধ প্রবেশ অন্যায়। পরস্পর সীমান্ত চুক্তি রক্ষা করাও জরুরি। সীমান্ত চুক্তি লঙ্ঘন এবং দেশি ও আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করলে অপরাধ প্রবণতা বাড়ার আশঙ্কা থাকে। তাই এসব আইন মানাকেও জরুরি মনে করে ইসলাম। বিশেষ করে নাগরিক হিসেবে আমরা সরকারের কাছে আইন মানতে মৌনভাবে চুক্তিবদ্ধ। চুক্তি অমান্যের সুযোগ নেই ইসলামে। মহানবী (সা.)-এর জীবনে চুক্তি ভঙ্গের কোনো উদাহরণ নেই। যেমন বদর যুদ্ধের কথা বলি। ইসলামের প্রথম যুদ্ধ। মদিনায় যাওয়ার পথে হজরত হুজাইফা এবং তার বাবা মক্কার নেতা আবু জাহেলের কাছে ধরা পড়ে যান। তরবারির চাপে বাপ-ছেলে চুক্তিবদ্ধ হন মহানবীর সঙ্গে বদরের যুদ্ধে অংশ নেবে না। আবু জাহেলের হাত থেকে বেঁচে মদিনায় গিয়ে যুদ্ধের আগ্রহ পেশ করেন নবীজির কাছে। ময়দানেও চলে যান উভয়ে। নবীজি প্রতিশ্রুতির বিষয়টি জেনে তাদের যুদ্ধে অংশগ্রহণে মানা করলেন। বললেন, তোমরা চুক্তি বাস্তবায়ন করো। আল্লাহর সাহায্য আসবে। চরম সংকটেও চুক্তি ভঙ্গের উদাহরণ তৈরি করেননি নবীজি (সা.)। তাই আমাদের যাপিত জীবনেও রাষ্ট্রীয়-পররাষ্ট্রীয় এবং সীমান্ত চুক্তি লঙ্ঘন করে দিদেশ গমন ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে। তা ছাড়া রাসুল (সা.) বলেন, ‘মুসলিম পরস্পর ভাই ভাই। সে কারও প্রতি অত্যাচার করতে পারে না এবং কাউকে অসহায় ছেড়ে দিতে পারে না।’ (বুখারি : ২৪৪২)। অতএব সার্বিক কল্যাণেই মানব পাচারের মতো ঘৃণিত কাজ আমাদের পরিহার করা উচিত।

লেখক : সম্পাদক, আওয়ার ইসলাম




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close