ই-পেপার শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪

হাদিসের গল্প
নবীজির (সা.) এক পেয়ালা দুধে তৃপ্তি
প্রকাশ: সোমবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০০ এএম  (ভিজিট : ১৭০০)
হজরত মুজাহিদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.)-এর হাদিস সংরক্ষণের জন্য সুফফায় অবস্থানকালীন দুঃসময়ের বর্ণনা দিতে গিয়ে আবু হুরায়রা (রা.) বলতেনÑ আল্লাহর কসম, যিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আমি ক্ষুধার যন্ত্রণায় উপুড় হয়ে পড়ে থাকতাম। আর কখনও পেটে পাথর বেঁধে রাখতাম। একদিন আমি রাসুল (সা.) এবং সাহাবীদের গমনাগমনের রাস্তায় বসে ছিলাম। আবু বকর (রা.) রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। আমি তাকে কোরআনের একটি আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। আমি এ উদ্দেশ্যেই তা করলাম, যেন তিনি আমাকে কিছু খেতে দিয়ে পরিতৃপ্ত করেন।
কিন্তু তিনি চলে গেলেন, কিছুই করলেন না। এরপর ওমর (রা.) আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাকেও সেই একই উদ্দেশ্যে কোরআনের একটি আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। কিন্তু তিনিও চলে গেলেন, কিছুই করলেন না। অতঃপর রাসুল (সা.) আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, আমাকে দেখে তিনি মুচকি হাসলেন। তিনি আমার চেহারা দেখে মনের কথা বুঝতে পারলেন এবং বললেন, ‘হে আবু হির!’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহ‌র রাসুল! আমি উপস্থিত। তিনি বললেন,‘তুমি আমার সঙ্গে চল’! অতঃপর তিনি চললেন, আমি তার অনুসরণ করলাম। তিনি বাড়িতে প্রবেশ করলেন। অতঃপর আমি ভেতরে প্রবেশের অনুমতি চাইলাম। তিনি অনুমতি দিলে আমি প্রবেশ করলাম।
ঘরে প্রবেশ করে একটি পেয়ালায় কিছু দুধ দেখে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এ দুধ কোথা থেকে এসেছে’? বাড়ির লোকজন উত্তর দিল, ‘অমুক আপনার জন্য হাদিয়া দিয়েছে’। তিনি বললেন, ‘হে আবু হুরায়রা’! আমি বললাম, ‘আমি হাজির হে আল্লাহ‌র রাসুল’! তিনি বললেন, ‘আহলে সুফ‌ফা’র লোকদের গিয়ে এখানে ডেকে আন’। (আহলে সুফ‌ফা বলা হতো মসজিদে নববীর সামনে বারান্দার মতো একটি স্থানে অবস্থানরত সাহাবিদের। সংখ্যায় তারা ৭০ জনের মতো ছিলেন। তাদের পরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদ ছিল না। রাসুল (সা.)-এর কাছে যখন কোনো সদকা আসত, তখন তিনি তাদের জন্য পাঠিয়ে দিতেন। নিজে সেখান থেকে কিছুই গ্রহণ করতেন না। আর যদি কোনো হাদিয়া আসত, তিনি সেখান থেকেও এক অংশ তাদের জন্য পাঠিয়ে দিয়ে এতে তাদের শরিক করতেন এবং নিজে এক অংশগ্রহণ করতেন)। রাসুলের এ কথা শুনে আমি হতাশ হয়ে পড়লাম। মনে মনে বললাম, এতটুকু দুধ দ্বারা ‘আহলে সুফ‌ফা’র কী হবে? আমিই তো এ দুধ পানের বেশি অধিকার রাখি। আমি তা পান করলে আমার শরীরে শক্তি ফিরে পেতাম। যখন তারা এসে গেলেন, তখন নবীজি আমাকে আদেশ দিলেন, আমিই যেন তাদের দুধ পান করতে দেই। আমার আশা থাকল না যে, এ দুধ থেকে আমি কিছু পাব। কিন্তু আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.)-এর আদেশ মান্য করা ছাড়া আমার আর কিছু করার ছিল না। সুতরাং আমি ‘আহলে সুফফার নিকট গিয়ে তাদের ডেকে আনলাম’। তারা এসে ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাইলে তিনি তাদের অনুমতি দিলেন। তারা ঘরে এসে নিজ নিজ আসন গ্রহণ করলেন। নবীজি (সা.) বললেন, হে আবু হুরায়রা! আমি বললাম, আমি হাজির হে আল্লাহ‌র রাসুল! নবীজি আমাকে বললেন, এটি তাদের দাও। আমি দুধের পেয়ালা হাতে নিয়ে দিতে শুরু করলাম। এক ব্যক্তির হাতে দিলাম, সে পান করে পরিতৃপ্ত হলো এবং আমাকে পেয়ালা ফেরত দিল। অতঃপর আমি অন্য একজনকে দিলাম, সেও তৃপ্তি সহকারে পান করে পেয়ালা ফেরত দিল। তৃতীয় জনকে দিলে সেও তাই করল। এভাবে আমি (সর্বশেষে) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট পৌঁছলাম।
সবাই পরিতৃপ্ত হলো। তিনি পেয়ালা নিলেন এবং আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন, ‘হে আবু হুরায়রা’! আমি বললাম, ‘আমি হাজির হে আল্লাহর রাসুল’! তিনি বললেন, ‘এখন আমি আর তুমি বাকি’। আমি বললাম, ‘আপনি ঠিকই বলেছেন হে আল্লাহর রাসুল’। তিনি বললেন, ‘বসে পড় এবং পান কর’। আমি বসে পান করলাম। তিনি (পুনরায়) বললেন, ‘পান কর’। আমি পান করলাম। তিনি একথা বলতেই
থাকলেন, অবশেষে আমি বলতে বাধ্য হলাম যে, ‘আল্লাহ‌র কসম! যিনি আপনাকে সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন, আমার পেটে আর জায়গা নেই’। নবীজি বললেন, ‘তা হলে আমাকে দাও’। আমি তাকে দিলে তিনি আল্লাহ‌র প্রশংসা করলেন এবং বিসমিল্লাহ বলে বাকি দুধ পান করলেন।’ (বুখারি : ৬৪৫২; মেশকাত : ৪৬৭০)






সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close