দীর্ঘ ১৯ বছর পর সিলেট জেলা ও মহানগর যুবদলের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করা হলো
শুক্রবার। এ কমিটি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। যুবদলের
রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের নাম না আসায় এ
অবস্থার সৃষ্টি। কমিটি ‘একতরফা’এ অভিযোগ এনেছেন কেন্দ্রীয় থেকে শুরু করে
সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি’র নেতৃত্ব । শুক্রবার রাতে এ ইস্যুতে তারা দফায়
দফায় বৈঠকও করেন।
এদিকে সিলেট যুবদলের কমিটি ইস্যু নিয়ে ‘গণপদত্যাগ’
সামাল দিতে বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী, ডা.
শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক সম্পাদক
আবদুর রাজ্জাক ও সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান
জামান রোববার ঢাকায় গিয়ে দলের মহাসচিবের কাছে গিয়ে পদত্যাগ করবেন।
বিষয়টির
সত্যতা নিশ্চিত করে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সহ ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক
সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক সময়ের আলোকে বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে ভুল
তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।
বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা সিসিক
মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সময়ের আলোকে বলেন, এভাবে রাজনীতি করা যাবে না। দলের
ত্যাগী এবং পরীক্ষিতদের বাদ দিয়ে কমিটি করলে রাজপথে কোনো কর্মী খুঁজে
পাওয়া যাবে না।
অপরদিকে এ নিয়ে শুধু ওই কেন্দ্রীয় ৪ নেতাই নয়,
ক্ষুব্ধ সিলেট বিএনপির নেতারাও। শিগগিরই সব বলয়ের নেতারা একত্রিত হয়ে
পরবর্তী করণীয় ঠিক করার কথা রয়েছে। এক্ষেত্রে শীর্ষ সারির নেতারা কেন্দ্রে
নতুন কমিটি দু’টির বাতিলের দাবি জানাবেন। অন্যথায় সিলেট বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন
থেকে গণপদত্যাগের আভাস পাওয়া গেছে দলীয় সূত্রে।
বিএনপির একাধিক
নেতা এতথ্য জানালেও এই মুহূর্তে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
তারা বলেন, রাজপথের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মী ছাড়া কোনো অবস্থাতেই
আন্দোলন জোরদার করা সম্ভব নয়।
বিএনপি নেতারা জানান, দীর্ঘ ১৯ বছর পর
সিলেট জেলা ও মহানগর যুবদলের কমিটিতে যাদের স্থান দেয়া হয়েছে, তারা একজন
ব্যবসায়ী নেতার বলয়ের সুবিধাভোগী কর্মী। তাদের বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে
রাজপথে দেখা যায়নি। এই কমিটি বাতিল না করলে তারা ঢাকায় গিয়ে পদত্যাগ করবেন।
প্রসঙ্গত,
গত শুক্রবার বিকেলে যুবদলের সভাপতি সাইফুল ইসলাম নিরব ও সাধারণ সম্পাদক
সুলতান সালাহ উদ্দিন পুকুকু সিলেট জেলা ও মহানগর শাখার কমিটি ঘোষণা করেন।
ঘোষিত কমিটিতে জেলার আহ্বায়ক করা হয়েছে সিদ্দিকুর রহমান পাপলুকে। আর নজিবুর
রহমান নজিবকে মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক করা হয়েছে। ঘোষিত কমিটিতে জেলা
শাখায় সদস্য সচিব করা হয়েছে মকসুদ আহমদকে। আর মহানগর শাখায় সদস্য সচিব করা
হয়েছে শাহ নেওয়াজ বক্ত তারেককে। জেলা শাখার ২৯ সদস্যের ও মহানগর যুবদলের ২৭
সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০০০ সালে সিলেট জেলা ও মহানগর যুবদলের কমিটি হয়। এর পর কেটে গেছে ১৯টি বছর। নানা কারণে সিলেট যুবদলের কমিটি আর হয়নি। বেরিয়ে আসেনি নতুন নেতৃত্ব। দু’বছর মেয়াদী যুবদলের ওই কমিটি পার করে দিল ১৯ বছর। এছাড়া সিলেট যুবদলের মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দেয়ার উদ্যোগীও হয়নি কেন্দ্রীয় কমিটি।
তাই সিলেটে গতিহীন হয়ে পড়ে বিএনপি’র অঙ্গসংগঠন যুবদল। সিলেটের রাজপথে যুবদল অনেকটা হারিয়ে যায়; অনুপস্থিত থাকে রাজনীতির মাঠে। কমিটি না থাকায় কেন্দ্র ঘোষিত কোনো কর্মসূচিতেও উপস্থিতি দেখা যায়নি সিলেট যুবদলের কোনো নেতার। যারা দায়িত্বে ছিলেন তারাও নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েন যুবদলের রাজনীতিতে।
দীর্ঘ ১৯ বছর পর হঠাৎ সিলেট জেলা ও মহানগর যুবদলের আহবায়ক কমিটির ঘোষণা আসে। শুক্রবার এ কমিটি ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। অপরদিকে নবগঠিত কমিটিকে অভিনন্দন জানিয়ে যতটুকু না আনন্দ মিছিল হওয়ার কথা, কমিটি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ঠিক উল্টো হয়েছে।
দীর্ঘ ১৯ বছর মাঠে পড়ে থাকা যুবদলের ত্যাগীরা এ কমিটি প্রত্যাখান করে ‘গণপদত্যাগের হুঙ্কার ছুড়েছেন। তাদের সারথী হয়েছেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় চার নেতাও। ‘আপাতত’ গণপদত্যাগের হুঙ্কার দেয়া যুবদলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের সামাল দিতে বিএনপি’র জ্যেষ্ঠ নেতারা বলেছেন, তোমরা নয়, আমরাই পদত্যাগ করবো। এ নিয়ে সিলেট যুবদলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। এখন দাবি উঠছে কেন্দ্র ঘোষিত ওই কমিটি বাতিলেরও। কেন্দ্রীয় বিএনপি’র চার নেতা রোববার ঢাকায় গিয়ে পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন।
একটি সূত্র জানায়, যদি ওই চার নেতা পদত্যাগ করেন তাহলে সিলেট বিএনপি’র অনেক নেতাই এ পথ অনুসরণ করতে পারেন।