বানারীপাড়ায় প্রধান শিক্ষকের তিনটি সার্টিফিকেটই জাল
বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার ধারালিয়া সৈয়দ বজলুল হক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসাইনের বিরুদ্ধে এমএ, বিএড ও এমএড পরীক্ষার দুটি বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের জাল সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরি নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো. তারিকুল ইসলাম খানসহ একাধিক সদস্য এ অভিযোগ করেন। এ প্রসঙ্গে ধারালিয়া সৈয়দ বজলুল হক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো. তারিকুল ইসলাম খান জানান, ২০১০ সালে প্রধান শিক্ষকের পদে চাকরি নেন মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন। বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তার এবং একাধিক সদস্যের মধ্যে প্রধান শিক্ষকের সার্টিফিকেট দেখে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। পরে চলতি বছরের ১৮ আগস্ট বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো. তারিকুল ইসলাম খান প্রধান শিক্ষকের সার্টিফিকেট সঠিক কি না তা যাচাই করতে রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকার পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং দারুল ইহসানের বরাবর লিখিত একটি আবেদন করেন। পরে ১৫ সেপ্টেম্বর রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকার পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাহামুদা বেগম প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসাইনের ২০০৭ সালের ফলাফল সেমিস্টার ও ইংরেজিতে এমএ পরীক্ষায় সিজিপিএ ৩.৪২-এর সার্টিফিকেট জাল বলে লিখিতভাবে জানান। এ ছাড়াও ওই বিশ^বিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্য বিষয়ে এমএ নেই বলেও জানানো হয়। অথচ প্রধান শিক্ষক ওই বিষয়ে এমএ’র সার্টিফিকেট দাখিল করে চাকরি নেন। অপরদিকে ঢাকার দারুল ইহসান থেকে প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসাইন পরীক্ষা দেননি তা ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারাও বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো. তারিকুল ইসলাম খানকে জানান। ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান জানান, দারুল ইহসান বিশ^বিদ্যালয়ে ২০০৬ সালের পূর্বে ভর্তি হয়ে পাস করা শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট বৈধ বলে গণ্য হবে। এর পরের সার্টিফিকেট অবৈধ। অথচ প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন দারুল ইহসান বিশ^বিদ্যালয়ের ২০০৭ সালের এমএ, ২০০৮ সালের বিএড ও ২০০৯ সালের এমএড পাসের সার্টিফিকেট দাখিল করেছেন। যা ইউজিসির তথ্য মতে সম্পূর্ণ অবৈধ। প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন এসব জাল সার্টিফিকেট তৈরি করে নিজেই ভুয়া সিল দিয়ে তা সত্যায়িত করে দাখিল করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, তিনি রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা ও দারুল ইহসানে ভর্তি হয়ে নিয়মিত ক্লাস করে পরীক্ষা দিয়ে সনদ লাভ করেন এবং ওই সনদ দিয়েই পূর্বের কর্মস্থল উজিরপুর উপজেলার যোগীরকান্দা আ. রব ফাজিল মাদ্রাসায় চাকরি করেছেন। মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক পদে চাকরি করাকালীন মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন কীভাবে বেসরকারি দুটি বিশ^বিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে ক্লাস করা ও পরীক্ষা দিলেন, সে বিষয়ে জানতে চাইলে উজিরপুরের যোগীরকান্দা আ. রব ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. ইলিয়াস জানান, তিনি ওই মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ পদে যোগদানের তিন মাস পরেই মাদ্রাসার তৎকালীন সহকারী শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন পদোন্নতি নিয়ে চলে যাওয়ায় এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক বিস্তারিত কিছু বলতে পারছেন না। এদিকে এতগুলো সার্টিফিকেট জাল করে শিক্ষকের মতো মহান পেশাকে কলঙ্কিত করে চাকরিতে বহাল থেকে সরকারি সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করায় তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় শিক্ষকরা।