ই-পেপার শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪

করোনায় মারা যাওয়া অর্ধেকের বেশি ঢাকার
৩২ দিন পর মৃতের সংখ্যা ত্রিশের নিচে
প্রকাশ: রবিবার, ৫ জুলাই, ২০২০, ১২:০০ এএম আপডেট: ০৫.০৭.২০২০ ২:১৩ এএম  (ভিজিট : ৮০)
এক মাসেরও বেশি সময় পর দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা ৩০-এর কোঠার নিচে নামল। ২৪ ঘণ্টায় ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত মারা গেছে ১ হাজার ৯৯৭ জন। এর আগে ১ জুন এই ভাইরাসে ২২ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। পরদিনই ২ জুন একলাফে মৃত্যুর সংখ্যা ৩৭-এ ওঠে। এর পর থেকে দুদিন ছাড়া নিয়মিতভাবে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ৩০ বা ৪০-এর কোঠায় ছিল। ১৬ জুন করোনা প্রাণ কেড়ে নেয় ৫৩ জনের। গত মাসের শেষ দিন ৩০ জুন সর্বোচ্চ সংখ্যক ৬৪ জন মানুষ মারা গিয়েছিল। আগের দিন শুক্রবার ৪২ জন, তার আগের দিন ২ জুলাই ৩৮ জন, চলতি মাসের শুরুতে অর্থাৎ ১ জুলাই করোনাভাইরাসে ৪১ জন প্রাণ হারায়। নতুন করে আরও ৩ হাজার ২৮৮ জন সংক্রমিত হওয়ায় দেশে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৬৭৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে ৩৭০ শয্যার ‘করোনা সেন্টার’ চালু হয়েছে। গতকাল সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়েছে করোনা রোগী ভর্তি কার্যক্রম। রোগীরা সরাসরি ১০ তলা কেবিন বøকে গিয়ে নিয়ম অনুযায়ী সেখান থেকেই ভর্তি হচ্ছে।
বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়–য়া বলেন, হাসপাতালের কেবিন বøকের পুরো ভবন করোনা ইউনিট করা হয়েছে। এজন্য সেখানে রয়েছে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের পাশাপাশি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ও হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ)। আনুমানিক ২৫০ জন করোনা রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া যাবে এ কেবিন বøকে। রোগীরা আউটডোর থেকে নয়, সরাসরি কেবিন বøকে এসে নিয়ম অনুযায়ী সেখান থেকেই ভর্তি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বেতার ভবনকে আইসোলেশন সেন্টার করা হয়েছে। সেখানে ১২০ জন রোগী থাকতে পারবে। তবে সেখানে আপাতত সেন্ট্রাল অক্সিজেন করা হচ্ছে না, সিলিন্ডার অক্সিজেন থাকবে।
বিএসএমএমইউ পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জুলফিকার আহমেদ আমিন বলেন, সকাল থেকেই হাসপাতালের কেবিন বøকে করোনা রোগীদের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কেবিন বøকের সপ্তম তলায় ২১টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। এ ছাড়া অষ্টম তলায় ১৬টি এইচডিইউ বেড আছে। কেবিন বøকে ভর্তি রোগীদের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় রাখা হবে। এ ছাড়া বেতার ভবনে আমাদের আইসোলেশন সেন্টার প্রস্তুত রয়েছে। তিনি আরও জানান, স্বাস্থ্যকর্মীদের ৭৮ জনের একটি দল এক সপ্তাহ করে চিকিৎসা দেবেন। এতে ৬০ জন চিকিৎসক ও ১৮ জন অ্যানেসথেসিয়ার চিকিৎসক, ৬৩ জন নার্স এবং প্যারামেডিকসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী থাকবেন আরও ১০০ জন। ভিআইপি কেবিনের জন্য ৪ হাজার ২৫ টাকা এবং সাধারণ কেবিনের জন্য ১ হাজার ২৫ টাকা ভাড়া দিতে হবে।
করোনার ঝুঁকি এড়াতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছে নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতি মনের ওপর চাপ তৈরি করায় অনেকের নিয়মিত ঘুম ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। মহামারির সময় পর্যাপ্ত ঘুম গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো ‍দুর্যোগে শিশু ও বয়স্করা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে। তাদের প্রতি বিশেষ মনোযোগী হোন। নারীর প্রয়োজনের প্রতি বিশেষ অগ্রাধিকার দিন। মানসিকভাবে উজ্জীবিত থাকার পথ নিজেকে খুঁজে নিতে হবে।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ২ হাজার ৬৭৩ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছে গত ২৪ ঘণ্টায়। তাতে সুস্থ রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল মোট ৭০ হাজার ৭২১। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় সুস্থতার হার ৪৪ দশমিক ২৯ শতাংশ। ১৪ হাজার ৭২৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। এর আগের দিন ১৪ হাজার ৪৫০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৮ লাখ ৩২ হাজার ৭৪টি নমুনা। দেশে ৭১টি ল্যাবের (পরীক্ষাগার) মধ্যে ৬৪টির পরীক্ষার ফল পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত ৮ মার্চ। এর ১০ দিনের মাথায় ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর খবর আসে। প্রায় এক মাস পর ২০ এপ্রিল মৃতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছিল। মৃতের সংখ্যা ৫০০ ছাড়ায় গত ২৫ মে। ১০ জুন মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়ায়। দেড় হাজার ছাড়িয়েছিল ২২ জুন। প্রথম মৃত্যুর ৮৪ দিন পর ৪ জুলাই মৃতের সংখ্যা দুই হাজারের কাছে পৌঁছে গেল। এই হিসাবে মৃতের সংখ্যা ৫০০ ছাড়াতে সময় লেগেছিল ২ মাস ৭ দিন। পরের ৫০০ জনের মৃত্যু ঘটে ১৬ দিনের মধ্যে। তার পরের ৫০০ জনের মৃত্যু ঘটে ১২ দিনে। মৃতের তালিকায় আরও ৪৯৭ জন যোগ হতে সময় লাগল ১৩ দিন।
স্বাস্থ্য বুলেটিনে ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, এক দিনে যারা মারা গেছে, তাদের মধ্যে ২১ জন পুরুষ এবং ৮ জন নারী। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২৫ শতাংশ। মৃতদের মধ্যে ২৫ জন হাসপাতালে এবং ১ জন বাড়িতে মারা গিয়েছিল। তিনজনকে হাসপাতালে আনার পর মৃত ঘোষণা করা হয়। মৃতদের মধ্যে ৯ জন ঢাকা বিভাগের, ৪ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ৩ জন খুলনা বিভাগের, ৭ জন রাজশাহী বিভাগের, ১ জন ময়মনসিংহ বিভাগের, ৩ জন সিলেট বিভাগের এবং ২ জন বরিশাল বিভাগের বাসিন্দা ছিল। তিনি বলেন, যারা মারা গেছে, তাদের মধ্যে দুজনের বয়স ছিল ৮০ বছরের বেশি। এ ছাড়া ১ জনের বয়স ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে, ১১ জনের ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে, ৯ জনের ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৪ জনের ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ১ জনের ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে এবং ১ জনের বয়স ছিল ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে।
মোট মৃত ১ হাজার ৯৯৭ জনের বয়সভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা জানান, ষাটোর্ধ্ব রোগীদের মৃত্যুর হার ৪৩ দশমিক ৫২ শতাংশ, ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সি রোগীদের মৃত্যুর হার ২৯ দশমিক ০৪ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সি রোগীদের মৃত্যুর হার ১৪ দশমিক ৭২ শতাংশ, ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সি রোগীদের মৃত্যুর হার ৭ দশমিক ৪১ শতাংশ, ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সি রোগীদের মৃত্যুর হার ৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ, ১১ থেকে ২০ বছর বয়সি রোগীদের মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২০ শতাংশ, ১০ বছরের নিচে রোগীদের মৃত্যুর হার শূন্য দশমিক ৬০ শতাংশ। সারা দেশে মোট মৃত রোগীদের এলাকাভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঢাকা বিভাগের ১ হাজার ৪১ জন, চট্টগ্রামের ৫২১ জন, রাজশাহীর ১০১ জন, খুলনার ৮২ জন, বরিশালের ৬৭ জন, সিলেটের ৮৪ জন, ময়মনসিংহের ৪৮ জন এবং রংপুর বিভাগের ৫৩ জন।





সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close