কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়ের (কুবি) ইংরেজি বিভাগের সপ্তম ব্যাচের স্নাতকোত্তর ফাইনাল পরীক্ষার এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও ফল মেলেনি শিক্ষার্থীদের। যথাসময়ে ফল না পাওয়ায় চাকরির আবেদনসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কাজ করতে না পেরে হতাশ আর উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থীরা। বিশ^বিদ্যালয় আইনে চ‚ড়ান্ত পরীক্ষার দশ সপ্তাহের মধ্যে ফল প্রকাশের কথা থাকলেও বিভাগের শিক্ষকদের দায়িত্ব অবহেলা, উদাসীনতা এবং খামখেয়ালিপনাকেই দায়ী করছেন শিক্ষার্থীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইংরেজি বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ২০১৩ সালে স্নাতক শুরু করলেও তা ২০১৮ সালের শুরুর দিকে শেষ হয়। এরপর স্নাতকোত্তরে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয় ৩৬ জন শিক্ষার্থী। ২০১৯ সালের ২৪ এপ্রিল স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় সেমিস্টারে ফাইনাল পরীক্ষা শুরু করে বিশ^বিদ্যালয়ের ইংরেজি সপ্তম ব্যাচের এই শিক্ষার্থীরা। ফাইনাল পরীক্ষা শেষে একই বছরের জুন মাসে ভাইভার মাধ্যমে সব একাডেমিক কার্যক্রম শেষ হয় তাদের। তবে সব কার্যক্রম শেষ হওয়ার এক বছর পেরিয়ে গেলেও স্নাতকোত্তরের ফল এখনও প্রকাশ হয়নি। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, রেজাল্টের জন্য পরীক্ষা কমিটির সভাপতিকে অবহিত করলে উল্টো তিনি বিরক্তি প্রকাশ করেন।
বিশ^বিদ্যালয়ের পরীক্ষা দফতরের তথ্য মতে, বিশ^বিদ্যালয়ের ৩৫তম একাডেমিক কাউন্সিলের সংশোধিত আইনে একটি সেমিস্টার শেষ করতে শিক্ষার্থীদের সময় লাগবে ২৬ সপ্তাহ বা ৬ মাস, যার মধ্যে ১৩ সপ্তাহ ক্লাস হবে, চ‚ড়ান্ত পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য থাকবে দুই সপ্তাহ আর চ‚ড়ান্ত পরীক্ষা হবে তিন সপ্তাহে। আইন অনুযায়ী পরীক্ষা-পরবর্তী আট সপ্তাহের মধ্যে ফল প্রকাশ করতে হবে। তবে ফাইনাল পরীক্ষার ক্ষেত্রে ১০ সপ্তাহের মধ্যে ফল প্রকাশ করার নিয়ম রয়েছে।
বিশ^বিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ নূরল করিম চৌধুরী জানান, করোনার কারণে আমাদের ফল প্রকাশ করতে কোনো সমস্যা নেই। সীমিত আকারে বিশ^বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম চলছে। যদি শিক্ষকরা ফল তৈরি করে দেন আমরা প্রকাশ করব। ইংরেজি বিভাগের ফল প্রকাশের বিষয়ে তিনি জানান, বিভাগ থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। ফল তৈরির কিছু কাজ বাকি রয়েছে। তা শেষ করে ফল পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ে জমা দেবে বলে জানানো হয় বিভাগ থেকে।
ব্যাচটির শিক্ষার্থী মাজহারুল ইসলাম হানিফ পরীক্ষা কমিটির কার্যক্রমে ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ‘বছর পেরিয়ে গেলেও রেজাল্ট আর এলো না। কবে আসে তারও কোনো খবর নেই। উল্টো রেজাল্টের জন্য পরীক্ষা কমিটির সভাপতিকে কল দিলেও উনি সম্রাট আকবরের ভাব ধরে, বিরক্তিবোধ করে। অমানবিকতার একটা সীমা থাকে।’
দশ সপ্তাহের ভেতর ফল দেওয়ার কথা থাকলেও কেন এক বছরের বেশি সময় লাগছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে এই ব্যাচের পরীক্ষা কমিটির প্রধান ও বিভাগটির সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী রেজওয়ান তালুকদার এ প্রতিবেদককে জানান, ‘এ বিষয়ের উত্তরটা তো আমি আপনার কাছে দেব না। এটা বিভাগের বিষয়, একাডেমিক বিষয়। বিশ^বিদ্যালয় এবং বিভাগের সঙ্গে আমার কথা হবে।’
দায়িত্ব অবহেলার বিষয়ে প্রতিবেদনের জন্য মন্তব্য প্রয়োজন জানালে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘সাংবাদিক হিসেবে তথ্য সংগ্রহ করা এটা আপনার কাজ। আপনাকে উত্তর দেওয়া আমার কাজ না।’
ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. বনানী বিশ^াস জানান, ‘আমি বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর দেখি পরীক্ষার ১ বছর পরও শিক্ষার্থীরা ফল পাচ্ছে না। অসহায়ের মতো ঘুরছে আমার শিক্ষার্থীরা। যতটুকু সম্ভব আমি শিগগিরই ফল প্রকাশ করতে পরীক্ষা কমিটিকে অনুরোধ করেছি।’
পরীক্ষা কমিটির খামখেয়ালিপনার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের জানান, ‘১ বছর ধরে রেজাল্ট আটকে রাখা এটা তো এক ধরনের ক্রাইম। আমি বিষয়টি জানার পর ভিসির সঙ্গে কথা বলে বিভাগীয় প্রধানকে বলেছি ১৫ দিনের মধ্যে রেজাল্ট দিতে।