ই-পেপার শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

করোনা পরীক্ষায় আগ্রহ হারাচ্ছে মানুষ : নমুনা কমেছে ৬৫ শতাংশ
প্রকাশ: সোমবার, ১০ আগস্ট, ২০২০, ১০:৪০ পিএম আপডেট: ০৯.০৮.২০২০ ১১:০৮ পিএম  (ভিজিট : ১৩৭)
করোনা পরীক্ষায় আগ্রহ কমে গেছে মানুষের মধ্যে। অবস্থা এমন হয়েছে, এখন প্রতিদিন স্বাস্থ্য অধিদফতরের স্বাস্থ্য বুলেটিনে নমুনা দেওয়ার জন্য মানুষকে আহŸান জানানো হলেও মানুষ এখন আর পরীক্ষা করাতে আসছে না।
সরকার অধিকাংশ দেশের মতো বাংলাদেশও বিনামূল্যে করোনার নমুনা পরীক্ষা শুরু করে। কিন্তু গত জুলাই মাসে পরীক্ষার জন্য ফি নির্ধারণ করার পর থেকেই নমুনার সংখ্যা কমতে থাকে। পাশাপাশি দ্বিতীয় পরীক্ষা ছাড়াই করোনা নেগেটিভ ঘোষণা, উপসর্গ ছাড়া পরীক্ষা বন্ধ, এমনকি বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহও সীমিত করা হয়। এসব বিধিনিষেধ আরোপের কারণে জুলাই থেকে নমুনা কমতে থাকে।
দেশে এখন ৮৪টি ল্যাবে করোনা পরীক্ষা হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আগের নমুনাসহ পরীক্ষা করা হয়েছে ১০ হাজার ৭৫৯টি নমুনা। এর আগের দিন ১১ হাজার ৭৩৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এখন পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ১২ লাখ ৬০ হাজার ৩১৯টি নমুনা। দুই লাখের বেশি করোনা রোগী রয়েছেন, এমন ১৯ দেশের মধ্যে সবচেয়ে কম পরীক্ষা হচ্ছে বাংলাদেশে। পরীক্ষায় সর্বনিম্ন অবস্থানে থাকা মেক্সিকোর চেয়েও এখন বাংলাদেশ পিছিয়ে। আগে যেখানে নমুনা চাপে ল্যাবরেটরিগুলোর পরীক্ষার ফল দিতে চার-পাঁচ দিন লাগত, এখন সেখানে দিনের নমুনা দিনেই পরীক্ষা হচ্ছে। নমুনার অভাবে ল্যাবরেটরিগুলোর ন্যূনতম সক্ষমতাও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। পাশর্^বর্তী দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তানে এই সময়ে পরীক্ষা বেড়েছে। ভারতে গত জুন মাসের শেষ থেকে পরীক্ষা বেড়েছে ব্যাপকভাবে, একই সঙ্গে দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়েছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে ১৮ হাজার পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল। এটাই সর্বোচ্চ পরীক্ষা। এখন যে পরিমাণ ল্যাবরেটরি আছে তাতে ২০ হাজার পর্যন্ত পরীক্ষা করতে পারবে। আমরা বেশি পরীক্ষা করতে পারলে মানুষগুলোকে পৃথক করে ফেলা যেত। টেস্টের কোনো বিকল্প নেই। করোনা নিয়ন্ত্রণের মূল কাজই হলো টেস্ট করে পৃথক করে ফেলা।
এদিকে কোরবানির ঈদের ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরেছে। ঢাকা আবারও কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। রোববার রাজধানীর সড়কে তীব্র যানজট দেখা গেছে। লোকজন স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। মাস্ক পরতে অনীহা দেখা যায়।
দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত শনাক্ত ২ হাজার ৪৮৭ জনকে নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ৫৭ হাজার ৬০০ জন হলো। আর গত এক দিনে মারা যাওয়া ৩৪ জনকে নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে মোট মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ৩৯৯ জনে দাঁড়াল।
রোববার নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির এই সবশেষ তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ১ হাজার ৭৬৬ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তাতে সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা দাঁড়াল ১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৭০ জন।
স্বাস্থ্য বুলেটিনে ডা. নাসিমা জানান, করোনার ঝুঁকি এড়াতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও স্বাস্থ্যবিধি সবাইকে মানতে হবে। তিনি বলেন, আপনাদের কাছে অনুরোধ, আপনারা নমুনা পরীক্ষা করান। শুধু লক্ষণ বা উপসর্গ থাকলেই নয়, যারা চিহ্নিত রোগীর কাছে যাবেন, তারাও নমুনা পরীক্ষা করাবেন।
তিনি বলেন, যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের মধ্যে পুরুষ ৩১ জন এবং নারী তিনজন। তাদের মধ্যে ২১-৩০ বছরের একজন, ৩১-৪০ বছরের চারজন, ৪১-৫০ বছরের পাঁচজন, ৫১-৬০ বছরের ছয়জন, ৬১-৭০ বছরের ১১ জন, ৭১-৮০ বছরের ছয়জন এবং ৮১-৯০ বছরের একজন ছিলেন। এ পর্যন্ত মৃতদের মধ্যে শূন্য থেকে ১০ বছরের ১৮ জন, ১১-২০ বছরের ৩৩ জন, ২১-৩০ বছরের ৮৯ জন, ৩১-৪০ বছরের ২১৮ জন, ৪১-৫০ বছরের ৪৭১ জন, ৫১-৬০ বছরের ৯৭১ জন এবং ৬০ বছরের অধিক বয়সের ১ হাজার ৫৯৯ জন ছিলেন। যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের ১৪ জন, খুলনার সাত, চট্টগ্রামের ছয়, রাজশাহীর চার, ময়মনসিংহের এক এবং রংপুর বিভাগের দুজন ছিলেন। মোট মৃতদের মধ্যে পুরুষ ২ হাজার ৬৮৬ জন (৭৯ দশমিক ০২ শতাংশ) এবং নারী ৭১৩ জন (২০ দশমিক ৯৮ শতাংশ)।
ঢাকা বিভাগের ১ হাজার ৬২৭ জন, চট্টগ্রামের ৮০৪ জন, রাজশাহীর ২১৩ জন, খুলনার ২৫৯ জন, বরিশালের ১৩২ জন, সিলেটের ১৫৮ জন, রংপুরের ১৩৪ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগের ছিলেন ৭২ জন।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে ৮ মার্চ। তা আড়াই লাখ পেরিয়ে যায় ৭ আগস্ট। এর মধ্যে ২ জুলাই ৪ হাজার ১৯ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়, যা এক দিনের সর্বোচ্চ শনাক্ত। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ২৮ জুলাই সেই সংখ্যা তিন হাজার স্পর্শ করে। এর মধ্যে ৩০ জুন এক দিনেই ৬৪ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয় বুলেটিনে, যা এক দিনের সর্বোচ্চ মৃত্যু।
বিশে^ শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ১ কোটি ৯৬ লাখ ছাড়িয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যায় ইতালিকে ছাড়িয়ে বিশে^ এখন পাকিস্তানের পরই পঞ্চদশ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। করোনাভাইরাসে বিশে^ মৃতের সংখ্যা ৭ লাখ ২৭ হাজার ছাড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যায় বাংলাদেশের অবস্থান এখন ২৯তম।






সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close