ই-পেপার বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪

ভৈরবে বঙ্গবন্ধুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালনে বিপদে পড়েছিলেন যারা
প্রকাশ: শনিবার, ১৫ আগস্ট, ২০২০, ১০:৫৯ পিএম আপডেট: ১৪.০৮.২০২০ ১১:৪১ পিএম  (ভিজিট : ২৪৯)
ভৈরবের হাজী আসমত কলেজের তৎকালীন ছাত্রাবাস দোতলায় একদল পুলিশ উঠে বলে উঠল, তোরা কিসের মিলাদের আয়োজন করেছিস। এত দুঃসাহস তোদের? কুত্তার বাচ্চা বলে গালি দিয়েই সেদিন পুলিশ সদস্যরা সবাইকে লাঠিপেটা শুরু করল। পায়ের বুট আর রাইফেলের বাট দিয়ে আঘাত করতে লাগল যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদেরকে। পুলিশের নির্যাতনে সেদিন অনেকেই রক্তাক্ত হয়েছিলেন। এরপর উপস্থিত ২২ জন নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে গেল। তারপর তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দেওয়া হলো থানায়। সেদিন তাদের অপরাধ ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী দিবসে তারা মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করেছে।
ঘটনাটি ঘটেছিল বঙ্গবন্ধুকে ঘাতকরা সপরিবারে হত্যার এক বছর পর ১৯৭৬ সালের ১৫ আগস্ট। এদিন ছিল বঙ্গবন্ধুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের আয়োজনে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়েছিল সেদিন। এই আয়োজনের প্রধান নেতা ছিলেন তৎকালীন ভৈরব উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আলম আক্কাছ। সেদিন গ্রেফতারকৃত ২২ জনের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠায়। তারপর দীর্ঘদিন কারাভোগ করার পর তারা পর্যায়ক্রমে জেল থেকে ছাড়া পায়। সেদিনের সাহসীদের কথা এখন আর কেউ স্মরণ করে না। তারা আজও অবহেলিত হয়ে আছে। বর্তমানে বঙ্গবন্ধুর দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় রয়েছে। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের দলীয় অনুষ্ঠানগুলোতেও তারা দাওয়াত পায় না। এমনকি নেতারা তাদের বক্তব্যে এই সাহসী বীরদের নামটিও উচ্চারণ করে না। এসব ক্ষোভের কথাগুলো বললেন সেদিনের গ্রেফতারকৃত ছাত্রনেতা রসরাজ সাহা। সেদিনের ঘটনায় যারা গ্রেফতার হয়েছিল তারা হলোÑ তৎকালীন থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আলম আক্কাছ (বর্তমানে পৌর মেয়র), ছাত্রলীগ নেতা আসাদুজ্জামান ফারুক (বর্তমানে সাংবাদিক), রুহুল আমীন, মাহবুব, মতিউর রহমান, মফিজুর রহমান, মোশারফ হোসেন (জজ মিয়া), জিল্লুর রহমান জিল্লু, আসাদ মিয়া, আতাউর রহমান, আসাদুল হক শিশু, ফিরুজ মিয়া, দীলিপ চন্দ্র সাহা ও তার ভাই দীজেন্দ্র চন্দ্র সাহা, ফজলুর রহমান, আবদুল হামিদ, ইদ্রিছ মিয়া, মাহবুব আলম, রসরাজ সাহা, সুবল চন্দ্র কর, শাহজালাল হোসেন ও আজমল ভূঁইয়া।
এবারের ১৫ আগস্ট হবে বঙ্গবন্ধুর ৪৫তম মৃত্যুদিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে ঘাতকরা নির্মমভাবে হত্যা করে। এই হত্যাকাণ্ডের পর দেশে সামরিক শাসন জারি করা হয়। তখন সামরিক আইন প্রশাসক ছিলেন জিয়াউর রহমান। তখন সামরিক সরকারের ভয়ে কেউ বঙ্গবন্ধুর নামটি উচ্চারণ করতে ভয় পেত। দেশের অধিকাংশ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ছিল জেলে এবং কেউ ছিল পলাতক। এই দুঃসময়ে ভৈরবে ২২ জন নেতাকর্মী তৎকালীন হাজী আসমত কলেজের শহীদ আশুরঞ্জন ছাত্রাবাসে (বর্তমান শৈবাল হোটেল) বঙ্গবন্ধুর প্রথম শাহাদাতবার্ষিকীর আয়োজন করেছিল। এই উপলক্ষে মিলাদ মাহফিল, দোয়া ও কোরআন খতমের আয়োজন করা হয়। বিকাল সাড়ে ৩টায় ১২ জন মৌলভী ছাত্রাবাসে এসে কোরআন খতম শুরু করে। বিকাল ৪টার মধ্য ২২ জন নেতাকর্মী মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়। যুবলীগ নেতাদের নিমন্ত্রণে স্থানীয় অনেক যুবলীগ ছাত্রলীগের নেতাকর্মী মিলাদে অংশ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সে সময় সামরিক সরকারের ভয়ে অনেকেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়নি। তারপরও স্বল্পপরিসরে আয়োজনটি করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
সেদিন মিলাদ শুরুর আগেই গোয়েন্দাদের কাছে খবর পৌঁছে যায়। সামরিক সরকারের উচ্চ পর্যায়ে এ খবর পৌঁছলে ওয়ারলেস ম্যাসেজে নির্দেশ দেওয়া হয় আয়োজন বন্ধ করে আয়োজনকারীদের গ্রেফতার করতে। এই নির্দেশ দেওয়ার পর ভৈরব থানা পুলিশের ২০-৩০ জন পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে এসে ছাত্রাবাসটি ঘিরে ফেলে। এ সময় পুলিশ ছাত্রাবাসে ঢুকেই অকথ্য ভাষায় গালাগালি ও নির্যাতন শুরু করে। পুলিশ কোরআনগুলো ছিড়ে ফেলে। এরপর ২২ জনকে গ্রেফতার করে এবং মৌলভীদেরকে আটক করার পর থানায় নিয়ে মুচলেকা রেখে মৌলভীদেরকে ছেড়ে দিলেও ২২ জনকে আটক করা হয়।
সেদিনের গ্রেফতারকৃত যুবলীগ নেতা ফখরুল আলম আক্কাছ বলেন, তখন সামরিক শাসকের নির্দেশে আমাদের গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়। এ কারণে আমি এক বছর কারাগারে বন্দি ছিলাম। তখন ফাঁসির সেলে আমাকে বন্দি করে রেখেছিল।
আরেক গ্রেফতারকৃত নেতা শাহজালাল হোসেন এই প্রতিনিধিকে বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর কয়েক বছর এ দেশে কেউ তার নামটি উচ্চারণ করতে ভয় পেত। আমরা সেদিন দুঃসাহসিকতার সঙ্গে মিলাদের আয়োজন করেছিলাম। এখন আমাদের দল ক্ষমতায় কিন্তু দলীয় নেতারাও আমাদের স্মরণ করে না। প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ যদি পেতাম তবে ক্ষোভের কথাগুলো বলতে পারতাম।
সেদিন গ্রেফতারকৃত ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান ফারুক বলেন, সে সময় আমি কলেজে পড়তাম। একজন মুসলমান হিসেবে সেদিন বঙ্গবন্ধুর জন্য মিলাদ ও দোয়ার আয়োজনে অংশ নিয়ে গ্রেফতার হয়ে পাঁচ মাস ২৭ দিন কারাগারে ছিলাম। সেদিনের গ্রেফতারকৃত কয়েকজন অর্থকষ্টে, রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। তাদের পরিবারগুলোর অনেকেই এখন কষ্টে রয়েছে।






সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close