প্রকাশ: সোমবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১০:৪৪ পিএম আপডেট: ২৭.০৯.২০২০ ১১:৫২ পিএম (ভিজিট : ২২০)
সীমান্ত হত্যা, পেঁয়াজ রফতানি আকস্মিকভাবে বন্ধ ও তিস্তা চুক্তি না হওয়ার মতো বিষয়গুলো বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের কিছুটা হলেও বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। তবে এই পরিস্থিতিতে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে ১৮ আগস্ট বাংলাদেশে ঝটিকা সফর করেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। এই সফরের মধ্য দিয়ে সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় আগামীকাল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার ষষ্ঠ জয়েন্ট কনসালটেটিভ কমিশনের বৈঠক। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন ড. একে আবদুল মোমেন। আর ভারতের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। করোনাভাইরাসের কারণে বৈঠকটি হতে যাচ্ছে ভার্চুয়ালি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছেন, বৈঠকে আলোচনার বিষয় বেশ কয়েকটি অন্তর্ভুক্ত থাকলেও এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে আজকের মধ্যেই চূড়ান্ত হবে। অন্য একটি সূত্রে আভাস পাওয়া গেছে, বৈঠকে দুদেশের মধ্যে এয়ার বাবল চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর পাশাপাশি যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, তিস্তা চুক্তি অগ্রগতি, বাংলাদেশকে ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট দেওয়া, রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বাংলাদেশ সমর্থন দেওয়া, সীমান্তে চোরাচালান ও ভারতীয় ঋণ চুক্তি। এ ছাড়াও ভ্যাকসিন পাওয়ার বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসতে পারে।
সীমান্ত হত্যার প্রসঙ্গ আলোচনায় স্থান পাবে কি না, এই প্রশ্নে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকতা জানান, বিষয়টি এখনও কিছু বলা যাচ্ছে না। তিনি প্রসঙ্গক্রমে বলেন, কিছুদিন আগে বিজিবি আর বিএসএফ সীমান্ত সম্মেলন হয়ে গেল। সেখানে কী ধরনের সুপারিশ এসেছে তা হয়তো বৈঠকে অবহিত করা হতে পারে। তবে সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি জেসিসি বৈঠকে ভারতীয় সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা ও হঠাৎ করে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করার বিষয়টি জেসিসি বৈঠকে জোরালোভাবে উপস্থাপনের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়েছেন।
বাংলাদেশে চীনের উপস্থিতি জোরদারে অস্বস্তির মধ্যে ফেলে দিয়েছিল ভারতকে, এমনই খবর বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রচার করা হয় আর এই অস্বস্তির মূল কারণ মনে করা হচ্ছে তিস্তা প্রকল্পে চীনের বিনিয়োগ। তবে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এখনও সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। অন্যদিকে জেসিসি বৈঠককে কেন্দ্র করে ১৪ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া উইংয়ে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় ভার্চুয়ালি প্রস্তুতি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে সভাপতিত্ব করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামস। বৈঠকে শুরুতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে ভ্যাকসিন সহযোগিতার বিষয়টি পর্যালোচনা করা হয়। এরপর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যেসব ভারতীয় সেনা সদস্য আত্মত্যাগ করেন তাদের কীভাবে কখন সম্মানিত করা হবে সে বিষয়টি আলোচনা করা হয়। বিশেষ করে আখাউড়ায় যেসব ভারতীয় সৈন্য শহীদ হয়েছেন তাদের ভাস্কর্য নির্মাণের অগ্রগতি জানতে চাওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তুতিমূলক বৈঠকে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের ওপর প্রামাণ্যচিত্র তৈরির অগ্রগতির বিষয়টি জানতে চাওয়া হয়। তথ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ভারতের পরিচালক শ্যাম বেনেগালের নাম উল্লেখ করা হয়। আর বাংলাদেশের পরিচালকের নাম খুব শিগগির ঘোষণা করা হবে বলে বৈঠকে অবহিত করা হয়।
বৈঠকে বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে তার একটি খতিয়ান দেওয়া হয়। একই সঙ্গে কেন ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ধীন রয়েছে তাও উল্লেখ করা হয়। বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও আইসিটির ক্ষেত্রে কী ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন তা বৈঠকে অবহিত করা হয়। এর পাশাপাশি জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে কী ধরনের সহায়তা চাওয়া যেতে পারে এ নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। এ ছাড়াও বাংলাদেশিদের ভারতে চিকিৎসা ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়টি প্রাধান্য পায়। পোস্টাল স্ট্যাম্প, কৃষিখাত, পরিবেশ ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বৃত্তির বিষয়ে সহযোগিতার বিষয়ে পর্যালোচনা করা হয় বলে জানা গেছে। এর আগে ২০১৯ সালের শুরুতে দিল্লিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পঞ্চম জেসিসি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই অনুযায়ী এবারের বৈঠকটি ঢাকায় হওয়ার কথা। সেই অনুযায়ী ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস জয়শঙ্করের ঢাকা সফরের কথা থাকলেও চলমান করোনা পরিস্থিতির কারণে বৈঠকটি হতে যাচ্ছে ভার্চুয়ালি।