ই-পেপার শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪

হরেক রকম প্রতারণার ফাঁদ
প্রকাশ: রবিবার, ২২ নভেম্বর, ২০২০, ১০:৫৮ পিএম  (ভিজিট : ৩৫৩)
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার কবিতায় লিখেছেনÑ ‘প্রেমের ফাঁদ পাতা ভুবনে, কে কোথায় ধরা পড়ে কে জানে!’ কবিগুরুর এ বাণী যে কতটা সত্যি তা ব্যাখ্যা করে বলার প্রয়োজন পড়ে না। বাস্তবিক, পৃথিবীতে প্রেমের ফাঁদ পাতা রয়েছে যত্রতত্র, নানা রূপে। কেউ মানুষের প্রেমে পড়ে, কেউ অর্থবিত্তের, আবার কেউ ক্ষমতার। আর এ প্রেমের কারণে অনেকে নানা ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। কেউ কেউ অভীষ্টকে পাওয়ার জন্য অনৈতিকতার আশ্রয় নিতেও দ্বিধা করে না। ইংরেজিতে একটি কথা প্রচলিত আছেÑ ‘এভরিথিং ইজ ফেয়ার ইন লাভ অ্যান্ড ওয়ার’ অর্থাৎÑ যুদ্ধ এবং প্রেমের ক্ষেত্রে সবকিছুই জায়েজ। ফলে কেউ প্রেমিক বা প্রেমিকাকে পাওয়ার জন্য, কেউ অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার জন্য, কেউ বা ক্ষমতাশালী বনে যাওয়ার জন্য নানা ধরনের ছলচাতুরী, কূটকৌশল কিংবা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে থাকে।
তেমনি একটি প্রতারণার খবর বেরিয়েছে ৬ নভেম্বর সময়ের আলোসহ কয়েকটি পত্রিকায়। ঘটনা ভারতের মুম্বাইয়ের নয়ানগর থানার। ঘটনার বিবরণ হলো, বিয়ের সময় মাথায় চুল না থাকার বিষয়টি গোপন করায় এক নারী তার নববিবাহিত স্বামীর বিরুদ্ধে থানায় প্রতারণার মামলা করেছেন। সেপ্টেম্বর মাসে তাদের বিয়ে হয়েছিল। প্রায় এক মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পরে স্ত্রী বুঝতে পারেন, তার স্বামীর মাথায় একটিও চুল নেই এবং তিনি সবসময় পরচুলা পরে থাকেন। স্বামীর টাকমাথার কথা জানার পর ক্ষুব্ধ স্ত্রী থানায় মামলা করে জানিয়েছেন, বিয়ের আগে স্বামীর টাকমাথার কথা জানলে তিনি বিয়েতে রাজি হতেন না। পুলিশ প্রতারণার অভিযোগে স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করে তাদেরকে আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছে।
ঘটনাটি অভিনব সন্দেহ নেই। বিয়ের সময় সঠিক তথ্য গোপন করে কাজ সমাধার নজির আমাদের দেশেও যে নেই তা নয়। বর কিংবা কনের দোষত্রুটির কথা ঘটকরা গোপনে রেখে শুভ বিয়ে সম্পন্ন করে ফেলে। পরে আসল সত্যিটা জানা গেলে তা নিয়ে নানা কেলেঙ্কারির সৃষ্টি হয়। এমনকি হাতাহাতি, লাঠালাঠি, মারামারি থেকে তা থানা-পুলিশ পর্যন্তও গড়ায়। এ বিষয়ে প্রচলিত একটি গল্প এ রকমÑ ঘটক মেয়ের বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এলে তিনি জানতে চাইলেন, ছেলের আর্থিক অবস্থা কেমন? ঘটক বলল, ছেলে ব্যবসায়ী, তার ডাইনে বায়ে দোকান। বাড়ির অবস্থা? ঘটক বলল, আপনাদের দোয়ায় ছেলে চারটা ইটের নিচেই থাকে। শুনে মেয়ের বাবা ভাবলেন, বোধহয় জামাইবাবুর বাড়িতে পাকাদালান আছে। তিনি এক কথায় রাজি হয়ে গেলেন। যথারীতি বিয়েও হয়ে গেল। কিন্তু গোল বাঁধল বৌভাতের দিন। বাবাসহ কনেপক্ষের লোকেরা বরের বাড়িতে গিয়ে দেখল বাড়িতে কোনো দালান নেই, একটি ছনের ঘর আছে। ঘটককে চেপে ধরলেন মেয়ের বাবাÑ কেন মিথ্যে কথা বলে তার মেয়েকে এখানে বিয়ে দেওয়া হলো? তখন ঘটক ছেলের বাবাকে ভিতর বাড়িতে নিয়ে ঘরের চালার দিকে দেখিয়ে বলল, ‘দেখেন তো ওখানে চারটা ইট আছে কি না’। আসলে ছনের চালা ফুটো হয়ে যাওয়ায় একটি পলিথিনের কাগজ দিয়ে দুপাশে চারটা ইট বেঁধে চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। মেয়ের বাবা বোকার মতো তাকিয়ে থাকলেন। কারণ ঘটক বলেনি দালানের কথা। কয়েকদিন পর মেয়ের বাবা হাটে যাওয়ার পথে দেখল, তার জামাই বাবাজি কাঁধে হাঁড়ি-পাতিল, বাসন-কোসনভর্তি বাহক নিয়ে হাটের দিকেই যাচ্ছে। আবার ঘটককে ডাকা হলো। মেয়ের বাবা চিৎকার করে বললেন, ‘ছেলের দোকান কোথায় রে মিথ্যেবাদী?’ ঘটক নির্বিকারচিত্তে বলল, ‘কেন, আপনি দেখেন নাই, আপনার জামাই দুই কান্ধে দুইটা দোকান লইয়া যাইতাছে? আমি কি মিথ্যা কইছি?’ এটি একটি গল্প। বাস্তবে হয়তো এ রকম ঘটে না। তবে, প্রতারণার ঘটনা যে অনেক সময় ঘটে, তার সাক্ষী আমরা অনেকেই।
মানুষ তার কাক্সিক্ষত বস্তুটি পেতে মরিয়া হয়েই চেষ্টা করে। কোনো চেষ্টাতে যখন সফল হওয়ার সম্ভাবনা দেখতে পায় না, তখনই আশ্রয় নেয় প্রতারণার। আবার কেউ কেউ অর্থ সম্পদ হাতানোর জন্যও প্রতারণার আশ্রয় নেয়। ২১ অক্টোবর সময়ের আলো ‘রনি ড্রাইভার থেকে শরণাঙ্ক থের’ শিরোনামে যে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে, তাতে বাবা-মার বিচ্ছেদের পর অসহায় এক কিশোরের গাড়ির হেলপার থেকে বৌদ্ধ মন্দিরের থেরতে পরিণত হওয়ার চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার মতো কাহিনি উঠে এসেছে। রনি নাম পাল্টে শরণাঙ্ক নাম ধারণ করে শ্রমণ হয়ে বৌদ্ধ বিহারে প্রবেশ ও ধর্মাচরের ছদ্মাবরণে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পদুয়ার ফলহারিয়া সংরক্ষিত বনের জায়গা দখল করে সে কীভাবে বৌদ্ধদের ধর্মগুরুর ‘থের’ স্তরে উঠে এসেছে, সে চমকপ্রদ কাহিনি গল্পকেও হার মানায়। সরকারি সংরক্ষিত বন দখল করে সে তার কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সংরক্ষিত বনের জায়গা দখল করে বছরের পর বছর বনভূমির পাহাড় কেটে স্থাপনা নির্মাণ, রাস্তা নির্মাণ, নলকূপ স্থাপন ও অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়া হলেও চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের খুরুশিয়া রেঞ্জের সুখবিলাস বিট অফিস ছিল চুপ। অবশ্য বন বিভাগ গত বছরের ১২ অক্টোবর রনির বিরুদ্ধে মামলা করেছে, তবে তার তৎপরতা বন্ধ হয়নি।
২৬ অক্টোবর দৈনিক কালের কণ্ঠে প্রকাশিত হয়েছে ‘গায়েবি মামলার সিন্ডিকেট’ শিরোনামে একটি চমকপ্রদ প্রতিবেদন। তাতে জানা যায়, ঢাকার মালিবাগ মোড় সংলগ্ন রাজারবাগ এলাকার এক পীর সাহেব প্রতারণার সিন্ডিকেট গড়ে তুলে মুরিদদের জমিজমা হাতিয়ে নেওয়া ব্যবসাটা বেশ ভালোভাবেই জমিয়েছে। তার ওই সিন্ডিকেটে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার লোক রয়েছে, যারা পীর সাহেবের এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। এই প্রতারণা সিন্ডিকেটের পরিধি দেশব্যাপী
বিস্তৃত। ওই প্রতিবেদনে প্রতারিত কয়েকজন মুরিদ ও তাদের স্বজনদের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। তারা বলেছে, প্রথমে পীর সাহেবের চ্যালারা ফুসলিয়ে মুরিদ বানায়। তারপর ওই নব্য মুরিদের জমিজমা পীর সাহেবের নামে লিখে দিতে বলে। কথা না শুনলে তাদের বিরুদ্ধে নানারকম হয়রানিমূলক মামলা করা হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে। প্রতারিত ও ভুক্তভোগীরা এ নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগে অভিযোগ করলেও পীর সাহেব রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে নিজেকে ঢাকার নবাব পরিবারের সন্তান হিসেবে পরিচয় দানকারী এক প্রতারকের নানা অপকের্মের খবর। সে ফেসবুকে তার পরিচয় দিয়েছিল ‘নওয়াব আলী হাসান আসকারী’ নামে। নিজেকে দাবি করত নবাব খাজা সলিমুল্লাহর নাতি বলে। নিজেকে নবাবদের শেষ বংশধর হিসেবেও প্রচার করত। বলত দুবাইতে তার বাবার স্বর্ণের কারখানা রয়েছে। এমনকি সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে তার মালিকানা আছে। আর এই দুই প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার কথা বলে মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। আসলে তার নাম কামরুল ইসলাম হৃদয়। বিহারি পরিবারের এ প্রতারকের বাবা এবং ভাইয়েরা সবাই ঢাকার কামরাঙ্গীর চরে বসবাস করে। অবশেষে পুলিশ ওই ভুয়া নবাব কামরুল ইসলাম হৃদয়কে গ্রেফতার করেছে। সময়ের আলোর ১২ নভেম্বরের সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ইমাম হোসেন নাসিম নামে এক গ্যারেজ ব্যবসায়ীর শত কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়ার খবর। ঢাকার মিরপুরের চিড়িয়াখানা রোডের এই ব্যক্তি অপরের জমি দখল করে মার্কেট বানানো, ভাড়া করা জমিতে সাইনবোর্ড লাগিয়ে প্লট, ফ্ল্যাট ও জমি বিক্রির নামে বহুবিধ প্রতারণা করে শত কোটি টাকার মালিক হয়েছে।
৯ নভেম্বর সমকালে প্রকাশিত হয়েছে ‘উপমন্ত্রীকে ‘বেচে’ তিনি টাকা কামাতেন’ শীর্ষক একটি খবর। তাতে জানা যায়, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে ‘বিক্রি’ করে বিপুল টাকা কামিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের কর্মচারী মো. জুয়েল। সে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকের পিয়ন। সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকদের বদলির আবেদনে সুপারিশ লিখে উপমন্ত্রীর সইটি নিজেই করে দিত। ৬ নভেম্বর সই জাল করার ঘটনা ধরা পড়ার পর তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে শিক্ষা উপমন্ত্রী পত্রিকাটিকে বলেছেন, আমার স্বাক্ষর জাল করে ঢাকায় শিক্ষক বদলি করে আনার ঘটনা ঘটেছে। অথচ এসব সই ও লেখা কোনোটাই আমার নয়। তিনি পত্রিকাটিকে আরও বলেছেন, ‘মজার বিষয় হলো, অনেক সময় এমন দুয়েকটা নির্দেশনা আমি দিয়েছি বটে। সেই বদলি কিন্তু হয়নি।’ বিস্ময়কর বটে! মন্ত্রীর সত্যিকার সুপারিশে কাজ হয় না, হয় ভুয়া সুপারিশে। বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়, এর পেছনে রয়েছে ওই অধিদফতরের একটি প্রতারক সিন্ডিকেট। সেখানে রাঘব-বোয়ালদের অস্তিত্ব থাকাও বিচিত্র নয়। ঘটনার তদন্ত চলছে। উপমন্ত্রী নিজেও বলেছেন তদন্তে সব বেরিয়ে আসবে। এখন সে তদন্তের ফলাফল দেখার অপেক্ষায় থাকার পালা। দেখা যাক, কান টেনে মাথা বের করে আনা যায় কি না।
সমাজে যত ধরনের দুই নম্বরী কায়কারবার আছে, প্রতারণা সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রতারণার মাধ্যমে নিরীহ মানুষদের সর্বস্বান্ত করে দেওয়ার নজিরের অভাব নেই আমাদের দেশে। পত্র-পত্রিকায় সেসব প্রতারণার খবর হামেশাই প্রকাশিত হয়। সবচেয়ে বেশি প্রতারণার ঘটনা ঘটে আর্থিক বিষয়ে। অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে মানুষকে প্রতারণা করে শত শত কোটি টাকা নিয়ে উধাও হওয়ার খবর প্রায়ই সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। মুম্বাইয়ের একটি দর্শকপ্রিয় চলচ্চিত্রের নাম ‘ফির হেরা ফেরি’। ওই ছবিতে দেখানো হয়েছে ‘পঁচিশ দিনমে পয়সা ডাবল’ বলে মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কাহিনি। আমাদের দেশেও এ ধরনের প্রতারণার খবর মাঝেমধ্যেই পাওয়া যায়। বছর বিশেক আগে মারোয়ারি ব্যবসায়ী কাজলের প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার খবর চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিল। ভুয়া এনজিও বা ঋণদান সংস্থার অতিরিক্ত মুনাফা দেওয়ার লোভে পড়ে সহায়-সম্বল বিক্রি করে টাকা দিয়ে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে কত মানুষ তার হিসাব নেই। একশ্রেণির প্রতারক সরকারি চাকরি দেওয়ার নামে চাকরি প্রত্যাশীদের প্রতারিত করে থাকে। চাকরি দিয়ে বিদেশে পাঠানোর নামে প্রতারণা করে কিছু জনশক্তি রফতানিকারী প্রতিষ্ঠান। এমন প্রতারণার শিকার ২৭ ব্যক্তি অবর্ণনীয় দুর্দশা ভোগ করে সম্প্রতি ভিয়েতনাম থেকে দেশে ফিরে এসেছে। প্রবাসী পাত্র বা পাত্রীর সঙ্গে বিয়ের ব্যবস্থা করে বিদেশে স্থায়ী বসবাসের লোভনীয় প্রস্তাবের ফাঁদে পড়ে অনেকে টাকা পয়সা খুইয়ে নিঃসম্বল হয়েছেন। মাঝেমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় ওইসব প্রতারক সিন্ডিকেটের লোকজন ধরা পড়ার খবর পাওয়া যায়। কিন্তু প্রতারক চক্রের যেন শেষ নেই। এরা সব সময় তৎপর।
প্রতারক চক্র ছড়িয়ে আছে সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বত্র। ব্যাংক থেকে প্রতারণা বা জালিয়াতির মাধ্যমে লোপাট করা হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। শেয়ার বাজার থেকে প্রতারক চক্র উধাও করে দিচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, প্রতিনিয়ত মানুষ প্রতারণার শিকার হচ্ছে, মানুষকে ঠকতে দেখছে, নিজেরা ঠকছে। কিন্তু আবার প্রতারণার ফাঁদে পা দিচ্ছে। নইলে যেসব ঘটনা পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়, সেগুলো পাঠ করার পর একই প্রতারণার শিকার মানুষ পুনরায় হয় কেন? বলা বাহুল্য, সচেতনতার অভাব এবং বেশি লাভের আশার কুহেলিকায় পড়েই তারা ওই ফাঁদে পা দেয়। ‘অতি আশা সর্বনাশা’ বলে যে প্রবাদটি আমাদের দেশে চালু আছে, সেটা অনেকেই ভুলে যায়।
বলাটা বোধকরি অত্যুক্তি হবে না যে, নদী, খাল, বিলে পেতে রাখা কারেন্ট জালের মতোই আমাদের সমাজে প্রতারণার ফাঁদ পাতা আছে। যারা সবদিক বিবেচনা করে পা ফেলে, বিবেক-বুদ্ধি খাটিয়ে, আগপিছ ভেবে কাজ করে, তারা ওইসব প্রতারণার কারেন্ট জালের বাইরে থাকতে পারেন। আর যারা অসতর্ক থাকে তারাই ধরা পড়ে। আশির দশকের শেষদিকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে একজন পকেটমারের সাক্ষাৎকার প্রচার করা হয়েছিল। তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলÑ পকেট কাটা বন্ধ করার উপায় কী? জবাবে সে বলেছিল, ‘পৃথিবীতে যতদিন পকেট থাকবে, পকেট কাটাও চলবে। যারা নিজের পকেট সাবধানে রাখবে, তাদের পকেট কাটা যাবে না।’ সেভাবে বলা যায়Ñ মানুষ যতদিন থাকবে, সমাজে প্রতারণাও থাকবে, প্রতারকরাও বিচরণ করবে। তবে যারা সতর্ক ও সজাগ থাকবে তারা রেহাই পাবে, বাকিরা ওই ফাঁদে ধরা খাবে।

ষ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close