২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত চলমান প্রাথমিক অনুসন্ধানের পরিপ্রেক্ষিতে গোল্ডেন মনিরের ৬১০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। শুধু তাই নয়, তার স্ত্রী রওশন আক্তারের নামে আরও সাড়ে ৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ রয়েছে বলে দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। আর এই অনুসন্ধানের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশনের উপপরিচালক মো. সামছুল আলম সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিস জারির সুপারিশ দিয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। দুদক সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে একটি মামলাও করেছিল দুদক। ওই মামলায় মনির হোসেনকে আসামি করা হয়েছে, যার তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। দুদকের পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, মনিরের বিরুদ্ধে একাধিক অনুসন্ধান ও তদন্ত চলছে। যত দ্রুত সম্ভব অনুসন্ধান শেষ করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দুদক কর্মকর্তা জানান, মনির হোসেনের ৩ কোটি ৮৪ লাখ ৯৮ হাজার ৬০০ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ পাওয়া গেছে অনুসন্ধানে। র্যাবের অভিযানে জব্দ করা টাকা, বৈদেশিক মুদ্রা, স্বর্ণালঙ্কার ও গাড়িসহ ৪৫ কোটি ১৭ লাখ ২৭ হাজার টাকার সম্পদেরও বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ ৪৯ কোটি ২ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ টাকার সম্পদের স্বপক্ষে মনির হোসেন কোনো তথ্য-প্রমাণ দিতে পারেনি। এ ছাড়া মনির হোসেনের স্ত্রী রওশন আক্তারের নামে দুদকের অনুসন্ধানে ৩ কোটি ৭৫ লাখ ৯২ হাজার ২৯৩ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ পাওয়া যায়। শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে নোটিস দেওয়া হবে।
দুদকের অনুসন্ধান সূত্রে আরও জানা গেছে, মনির হোসেনের স্ত্রী রওশন আক্তার একজন গৃহিণী। কিন্তু তার এসব সম্পদ অর্জনের কোনো বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি। তিনি ২০১৬ সালের পর এসব অবৈধভাবে অর্জন করেছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, ২০১২ সালে কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে একটি মামলাও করেছিল দুদক। ওই মামলায় মনির হোসেনকে আসামি করা হয়েছে, যার তদন্ত এখনও শেষ হয়নি।
বর্তমানে রিমান্ডে থাকা ব্যবসায়ী গোল্ডেন মনিরকে অবৈধ অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেফতার করে র্যাব। গ্রেফতারের পর অবৈধ অস্ত্র ও মাদক রাখায় রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় গাড়ি ও স্বর্ণ ব্যবসায়ী গ্রেফতার মনিরুল ইসলাম ওরফে গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে দুটি পৃথক মামলা হয়। সে সঙ্গে বিভিন্ন দেশের মুদ্রা রাখায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে আরেকটি মামলা করা হয়েছে। এই তিন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে গোল্ডেন মনিরকে বাড্ডা থানায় সোপর্দ করা হয়। পরে রোববার অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের পৃথক দুই মামলায় গাড়ি ও স্বর্ণ ব্যবসায়ী মো. মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনিরের ১৪ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত।
এর আগে গত শুক্রবার রাতে মেরুল বাড্ডায় মনির হোসেনের বাড়িতে অভিযান চালায় র্যাব। ছয়তলা বিলাবহুল ওই বাড়ি থেকে নগদ ১ কোটি ৯ লাখ টাকা, ৯ লাখ টাকা মূল্যমানের ১০টি দেশের বৈদেশিক মুদ্রা, ৪ লিটার মদ, ৮ কেজি স্বর্ণ, একটি বিদেশি পিস্তল এবং কয়েক রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। এ সময় র্যাব জানায়, ছয়তলা বাড়ির তিনটি ফ্লোর নিয়ে গোল্ডেন মনির নামে পরিচিত এই ব্যবসায়ী থাকে। বাকি তিনটি ফ্লোর খালি। অভিযানে বিপুল পরিমাণ টাকা, অস্ত্র ও স্বর্ণালঙ্কার পেয়েছে র্যাব। চারটি গাড়ি পাওয়া গেছে। যার মধ্যে তিনটি গাড়ির বৈধ কাগজপত্র নেই। যে পরিমাণ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে তা গণনা করা হচ্ছে। স্বর্ণালঙ্কারগুলো ব্যবহৃত।