বিজ্ঞান
ও প্রযুক্তি শিক্ষায় দেশে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও
প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়কে (বশেফমুবিপ্রবি) রোল মডেল হিসেবে গড়ে তোলার
প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন
আহমেদ। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্যই আমাদের এ বিশ^বিদ্যালয়। আমরা আমাদের
শিক্ষার্থীদের এমনভাবে গড়ে তুলতে চাই যেন তারা বিশে^র সঙ্গে তাল মিলিয়ে
চলতে পারে। আমরা সবসময় তাদের পাশে রয়েছি এবং থাকব। সে লক্ষ্যেই নতুন
বিশ^বিদ্যালয়টিকে এক অনন্য জায়গায় নিয়ে যেতে আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করছি। যাতে
ভবিষ্যতে দেশের অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান এটিকে রোল মডেল হিসেবে
গ্রহণ করে। আমি এমন স্বপ্ন নিয়েই এগিয়ে চলেছি। বিশ^বিদ্যালয়ের তৃতীয়
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার দুবছর পূর্তি উপলক্ষে
সময়ের আলোর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় বশেফমুবিপ্রবির গড়ে তোলার ক্ষেত্রে
নিজের পরিকল্পনা, পদক্ষেপের কথা জানান তিনি।
অধ্যাপক ড. সামসুদ্দিন
বলেন, শূন্যে দাঁড়িয়ে থাকা একটি প্রতিষ্ঠানকে আকৃতি দেওয়া বেশ চ্যালেঞ্জের।
আমি উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে তা গ্রহণ করি। দায়িত্ব নেওয়ার দুই মাসের
মধ্যেই অল্প সংখ্যক লোকবল দিয়েই ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম
সম্পন্ন হয়। জামালপুর শহরের দেওয়ানপাড়ায় বঙ্গবন্ধু আইডিয়াল স্কুলের একটি
ভবন ভাড়া নিয়ে সেখানে আধুনিক সুবিধা সংবলিত মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের
মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হয়। এর মাঝে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের
শিক্ষার্থীরাও ক্লাস করে। তিনি জানান, দ্বিতীয় শিক্ষাবর্ষে ইলেকট্রিক্যাল ও
ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। বর্তমানে
ছয়টি বিভাগে প্রায় ৫শর মতো শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে বলে জানান তিনি।
শুরুর
দিনগুলোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১৭ সালের ২৪ নভেম্বর বঙ্গমাতা শেখ
ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় আইন পাস হয়।
বিশ^বিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও মহামান্য রাষ্ট্রপতি ২০১৮ সালের নভেম্বরে
দায়িত্ব দেন। আমি ১৯ নভেম্বর যোগদান করেই অল্প সময়ের মধ্যে বিশ^বিদ্যালয়ের
শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ নিই। মার্চে ক্লাস শুরু হলেও নির্দিষ্ট
সময়ের মধ্যেই আমরা ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের সেমিস্টার পরীক্ষা সম্পন্ন করি এবং
পরবর্তী সেমিস্টারের ক্লাসও সম্পন্ন করা হয়। কোভিড-১৯-এর এই পরিস্থিতিতে
অনলাইনে প্রতিটি ব্যাচের ক্লাস অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ড. সামসুদ্দিন বলেন,
নতুন বিশ^বিদ্যালয় মানেই চ্যালেঞ্জ। শিক্ষা কার্যক্রম চালুসহ স্থায়ী
ক্যাম্পাস নির্মাণের বিষয়টাই চ্যালেঞ্জ। তবে এখানে এসে দেখলাম একটা সমস্যা
রয়েছে। মেলান্দহে ২০০০ সালে শেখ ফজিলাতুন্নেছা ফিশারিজ কলেজ প্রতিষ্ঠা করা
হয়। এখানকার শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের (বাকৃবি) অধীনে
ডিগ্রি প্রদান করা হতো। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনগণের দাবি ছিল যে,
এই কলেজটিকে বিশ^বিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা হোক। তবে ‘বঙ্গমাতা শেখ
ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় আইন ২০১৭’ তে এ
বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। ফলে এ নিয়ে একটা সমস্যা সৃষ্টি হয়।
তিনি বলেন,
কলেজটি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুশাসনও ছিল। আমি যথাযথ পদ্ধতি
অনুসরণ করে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি। স্থানীয়
এমপি মির্জা আজমও এ বিষয়ে সহযোগিতা করেন। পরে মন্ত্রণালয় এ কলেজটি বিষয়ে কী
ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যায়Ñ সে বিষয়ে একটি ত্রিপক্ষীয় কমিটি গঠন করে দেয়।
এতে বিশ^বিদ্যালয়, ইউজিসি ও মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি থাকে। কমিটি কয়েকবার
সভা ও সরেজমিনে পরিদর্শন করে কলেজটি আত্তীকরণের সুপারিশ করে। এরপর ফিশারিজ
কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় যোগ্যতার
ভিত্তিতে বিশ^বিদ্যালয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, তৎকালীন ফিশারিজ
কলেজের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিশ^বিদ্যালয়কে হস্তান্তর করা হয়েছে।
সেখানে কিছু অবকাঠামো রয়েছে। সেগুলো সংস্কার করে আমরা ব্যবহার করব। দুটি
হোস্টেল রয়েছে, সেগুলোও সংস্কার করে ছাত্রছাত্রীদের ব্যবহার উপযোগী করে
তোলা হচ্ছে। এরই মাঝে আমরা সেখানে অস্থায়ী ভিত্তিতে ৫০ কক্ষবিশিষ্ট দুটি
অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণ করছি। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই স্থায়ী
ক্যাম্পাসে স্থানান্তর হব আমরা। এ ছাড়া বিশ^বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য উন্নয়ন
প্রকল্প (ডিপিপি) প্রণয়নের কাজও পুরোদমে এগিয়ে চলছে বলে জানান তিনি।
মানসম্পন্ন শিক্ষা ও গবেষণা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে অধ্যাপক
সামসুদ্দিন বলেন, এটি যেহেতু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়, তাই শুরু
থেকেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহারে গবেষণা খাতকে শক্তিশালী করতে প্রয়োজনীয়
উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি
অ্যাসুরেন্স সেল (আইকিউএসি) স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। এ বিষয়ে দেশি-বিদেশি
বিশেষজ্ঞ-গবেষকদের অংশগ্রহণে কর্মশালা এবং ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বৈশি^ক
মহামারি করোনা পরিস্থিতিতে বিশ^বিদ্যালয়টির ভ‚মিকা তুলে ধরে তিনি বলেন,
জামালপুরে এ বিশ^বিদ্যালয় স্থাপনের মধ্য দিয়ে স্থানীয় জনগণের মধ্যে নতুন
প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। তাই এখানকার গবেষকেরা স্থানীয় সমস্যা চিহ্নিত করে
সমাধানের পথ বের করতে কাজ করবেন। ওই অঞ্চলের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ধারণ করেই
বিশ^বিদ্যালয়ের পরিবেশ তৈরি করা হবে। করোনার শুরুতেই বিশ^বিদ্যালয়ের
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের
তৈরি হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ সুরক্ষাসামগ্রী বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে
শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের
এক দিনের বেতনসহ ১০ লাখ টাকার অনুদান দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আর্থিকভাবে
অস্বচ্ছলদের বৃত্তি দেওয়ার পাশাপাশি করোনাকালে ভার্চুয়াল ক্লাসে অংশ নেওয়ার
জন্য শিক্ষার্থীদের ডিভাইসের বিষয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
২০১৮
সালের ১৯ নভেম্বর বিশ^বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেন
রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের (রাবি) ভ‚তত্ত¡ ও খনিবিদ্যা বিভাগের স্বনামধন্য এই
অধ্যাপক। দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে অধ্যাপক ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ রাবি
মাদারবক্স হলের প্রভোস্ট, রাবি প্রেসের প্রশাসক, সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য
ছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু ও
মুক্তিযুদ্ধ এবং দেশের সাম্প্রতিক অবস্থা নিয়ে পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত কলাম
লিখে চলেছেন দেশের এই প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ।