শীতের শুরুতেই রাজশাহী বিভাগে বাড়তে শুরু করেছে করোনা রোগীর সংখ্যা। বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। বিভাগের আট জেলায় ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৭০ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এরপরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে উদাসীন বেশিরভাগ মানুষ। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান, ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ নিয়ে সরকারের নির্দেশনা এমনকি চিকিৎসকদের শঙ্কামূলক সতর্কবার্তা, কোনো কিছুই সচেতন করতে পারছে না মানুষকে। রাজশাহী বিভাগের বাজার-হাট এমনকি গণপরিবহনেও মাস্ক ছাড়াই চলাচল করছে বেশিরভাগ মানুষ।
রাজশাহী বিভাগে গত তিন দিনে করোনায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে বিভাগের আট জেলায় ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত করোনায় ৩৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. গোপেন্দ্রনাথ আচার্য এ তথ্য দিয়ে জানান, বিভাগের আট জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ ২০৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বগুড়ায়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে রাজশাহীতে। এর বাইরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৪, নওগাঁয় ২৪, নাটোরে ১২, জয়পুরহাটে সাত, সিরাজগঞ্জে ১৪ এবং পাবনায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিভাগে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২২ হাজার ৪৯১ জন। এদের মধ্যে ২০ হাজার ৬৯০ জন সুস্থ হয়েছেন।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক জানান, বিভাগ জুড়ে বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছে ২ হাজার ৬০৯ জন। অক্টোবরেও এই সংখ্যা ছিল অনেক কম। বিভাগে গত মাসের বেশিরভাগ দিনে শনাক্তের সংখ্যা থাকত ৩০ জনের নিচে। কিন্তু এক মাসের ব্যবধানে বর্তমানে আড়াই থেকে তিনগুণ বেশি মানুষের করোনা শনাক্ত হচ্ছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী জানান, শীতের কারণে বর্তমানে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, করোনা সংক্রমণ বাড়লেও সতর্কতার প্রতি অধিকাংশ মানুষেরই আগ্রহ নেই। ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ বলা হলেও মাস্ক ছাড়াই রাস্তাঘাট, শপিংমলে দিব্বি ঘুরে বেড়াচ্ছে মানুষ। প্রয়োজন ছাড়াও অনেকেই হাট-বাজারে, রাস্তার মোড়ে মোড়ে, নদীর পাড়ে আড্ডা দিচ্ছে। জনসমাবেশ, বিয়ে, পিকনিক, জন্মদিনসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান অব্যাহত আছে। কোনোখানেই স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না, মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব। অধিকাংশ রেস্টুরেন্টে নেই হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হলেও নিয়ম মানছে না সিংহভাগ মানুষ।
অধ্যাপক ডা. নওশাদ আলী বলেন, শীতে তাপমাত্রা ও কম আর্দ্রতা করোনাভাইরাসকে আরও বেশি সময়ের জন্য বেঁচে থাকার সুযোগ করে দেবে। সেই সঙ্গে ভিটামিন ‘ডি’র ঘাটতি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার ফলে করোনাভাইরাস মানুষের ওপর আরও বেশি প্রভাব ফেলবে। শীতকালে নিউমোনিয়া, হাঁপানি ও অন্যান্য সর্দিজনিত রোগের কারণে করোনায় মৃত্যুর হারও বাড়তে পারে। তাই সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানান।
রাজশাহী বিভাগীয় অতিরিক্ত কমিশনার এএনএম মঈনুল ইসলাম বলেন, শীতে যেন করোনাভাইরাস ছড়িয়ে না পড়ে, সে জন্য আমরা কাজ শুরু করেছি। বিশেষ করে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ‘নো মাস্ক, নো সেবা’ এবং ‘নো মাস্ক, নো বিক্রয়’ বাস্তবায়ন করতে বিভাগের আট জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিয়মিত এ কার্যক্রম মনিটরিং করা হচ্ছে।