ই-পেপার শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪

নতুন বছরের শুরুতেই আসছে করোনার ভ্যাকসিন
প্রকাশ: রবিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২০, ১১:২২ পিএম আপডেট: ২৮.১১.২০২০ ১১:৪৩ পিএম  (ভিজিট : ২০৩)
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কাকে সত্যি করেই দেশে আবারও ব্যাপকভাবে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। কেউ কেউ বলছেন, এটি করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। উন্নত দেশগুলোতে এই দ্বিতীয় ঢেউ আরও আগে এলেও বাংলাদেশে তা শুরু হয়েছে শীত নামার সঙ্গে সঙ্গে। ফলে দেশবাসীর কাছে এ মুহূর্তে সবচেয়ে কাক্সিক্ষত বস্তুটির নাম হলো ‘ভ্যাকসিন’। ভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে বিশে^র কয়েকটি দেশ করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরিতে কাজ করছে। কেউ কেউ বলছেন, ২০২১ সালের শুরুতেই অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেও দ্রুত এবং অত্যন্ত সহজলভ্যভাবে পাওয়া যাবে করোনার ভ্যাকসিন।
করোনা প্রতিরোধে অক্সফোর্ড বিশ^বিদ্যালয় আবিষ্কৃত ভ্যাকসিনের ৩ কোটি ডোজ পেতে ইতোমধ্যে ভারত ও নিজ দেশের দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে সরকার। অক্সফোর্ডের উদ্ভাবিত ভ্যাকসিন করোনা প্রতিরোধে গড়ে ৭০ শতাংশ কার্যকর বলে দাবি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহারের জরুরি অনুমোদন পেতে শিগগিরই আবেদন করবে তারা। আশা করা হচ্ছে, জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন ডিসেম্বর মাসে হয়ে গেলে ২০২১-এর জানুয়ারির শেষদিকে উৎপাদনের প্রথম ধাপ থেকেই ৫ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন পাবে বাংলাদেশ। এরপর পৃষ্ঠা ১১ কলাম ৪
নতুন বছরের শুরুতেই আসছে করোনার ভ্যাকসিন

তারপর প্রতি মাসে ৫ মিলিয়ন ডোজ হিসাবে ৬ মাসে পাবে মোট ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ভ্যাকসিনের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। তবে কম দাম, সহজ সংরক্ষণ ব্যবস্থাসহ নানা সুবিধার কারণে ইতোমধ্যে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন আনতে চুক্তি করেছে সরকার, যা শিগগিরই বাজারজাত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, মাইনাস ২০ থেকে ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ভ্যাকসিনের সংরক্ষণ ও পরিবহনের সক্ষমতা নেই বাংলাদেশের। ফলে গ্যাভি ভ্যাকসিন সরবরাহ করলেও তার সবই নেওয়া সম্ভব হবে না। তবে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন বাজারে এলেই ৩ কোটি ডোজ পাবে বাংলাদেশ। সম্প্রতি এমনই চুক্তি করেছে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড। একজনকে দুটি ডোজ নিতে হবে। সে হিসাবে দেড় কোটি মানুষ পাবে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সরবরাহ করা করোনার ভ্যাকসিন। প্রতি ডোজের দাম পড়বে ৫ ডলার। এরই মধ্যে ভ্যাকসিনের অর্ধেক টাকা ছাড় করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে ভ্যাকসিন পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন কোভিড মোকাবিলায় গঠিত কারিগরি জাতীয় পরামর্শক কমিটির সদস্য ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান। সময়ের আলোকে তিনি জানান, তাপমাত্রাজনিত জটিলতায় মডার্না বা ফাইজারের ভ্যাকসিন আমরা আনতে না পারলেও অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনটা আমাদের জন্য উপযোগী। কেউ কেউ বলছেন, মার্চ-এপ্রিলের আগে দেশে করোনার ভ্যাকসিন আসবে না। তবে আমরা যতটা জানি এর আগেই ভ্যাকসিন পাবে দেশের মানুষ।
তিনি জানান, করোনার সম্ভাব্য সব ভ্যাকসিনের মধ্যে এই ভ্যাকসিনটির দাম হতে পারে সর্বনিম্ন, মাত্র তিন থেকে চার ডলার। এ ছাড়া মার্কিন কোম্পানি ফাইজার ও জার্মানির কোম্পানি বায়োএনটেকের তৈরি করোনার ভ্যাকসিনও কার্যকর বলে দাবি করা হয়েছে। তবে ফাইজারের টিকার সংরক্ষণ ও পরিবহন করতে হবে মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়। যে অবকাঠামো বাংলাদেশসহ বিশে^র অধিকাংশ দেশেরই নেই। এদিকে মডার্নার তৈরি করোনার টিকা রেফ্রিজারেটরে ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ৩০ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে। আর মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এটা সংরক্ষণ করা যাবে ৬ মাস পর্যন্ত। কিন্তু অক্সফোর্ডের তৈরি ভ্যাকসিন সাধারণ ফ্রিজেই সংরক্ষণ করা সম্ভব। এমনকি টিকা সংরক্ষণে অতি কম তাপমাত্রারও প্রয়োজন নেই।
তবে ভ্যাকসিন পাওয়ার সময় নিয়ে এখনও পুরোপুরি ধোঁয়াশার মধ্যেই রয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ। সময়ের আলোকে তিনি জানান, বিশে^র বিভিন্ন দেশের ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, তারা সফল। কিন্তু আমরা বারবারই দেখছি কোনো না কোনো একটা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। এর আগে বলেছিল সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যে ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে। কিন্তু তা পাওয়া যায়নি। এরপর বলেছিল নভেম্বর-ডিসেম্বরে বাজারে আসবে। তাও হয়নি। এখন বলছে আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিল মাসে তারা বাজারজাত করতে পারবে; কিন্তু তাও হয়তো সম্ভব হবে না। উৎপাদনের পর তা বিশ^স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদনের বিষয় আছে। তারপর বাজারজাত। দেখা যাক কী হয়!
পৃথিবীতে এখন ১৯০-এর বেশি ভ্যাকসিন নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে গবেষণা চলছে। বাংলাদেশেও একটি ভ্যাকসিন নিয়ে তৃতীয় পর্যায়ে ট্রায়ালের চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া সানোফি পাস্তর এবং ভারতের বায়োএনটেকের টিকা বাংলাদেশে ট্রায়াল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পৃথিবীর সেরাদের মধ্যে সেরা এবং এগিয়ে থাকা অনেকগুলো ভ্যাকসিনের মধ্যে চীনের সাইনোপ্যাক (আনুমানিক দাম ৬০ ডলার), রাশিয়ার স্পুটনিক ভি (আনুমানিক দাম ১০ ডলার), অক্সফোর্ড, মডার্না (আনুমানিক দাম ৩৫-৩৭ ডলার), ফাইজার (১৯ দশমিক ৫০ ডলার) ভ্যাকসিন বর্তমানে জরুরি ব্যবহার অনুমোদন পাওয়ার অগ্রাধিকার পর্যায়ে রয়েছে। সাইনোপ্যাক ভ্যাকসিন বাংলাদেশে তৃতীয় পর্যায়ে ট্রায়াল হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু হয়নি এবং এটির মূল্যও অত্যন্ত বেশি। রাশিয়ার টিকার মূল্য কিছু কম হলেও এটা মাইনাস ৯০ ডিগ্রি টেম্পারেচারে (সাব-জিরো ভ্যাকসিন) সংরক্ষণ ও পরিবহন করতে হবে, যার কোনো পরিকাঠামো বাংলাদেশে নেই। সুতরাং এই ভ্যাকসিনও বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য হবে না। এই টিকা দিয়ে ম্যাস ভ্যাক্সিনেশন সম্ভব নয় বলেই অভিজ্ঞদের মত। মডার্না এবং ফাইজারের ভ্যাকসিন দামেও বেশি এবং তাদের মাইনাস ২০ ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রায় (সাব-জিরো ভ্যাকসিন) সংরক্ষণ ও পরিবহন করতে হবে। সুতরাং এ দুটোও বাংলাদেশের চিন্তা থেকে বাদ রাখতে হচ্ছে, এগুলো বাংলাদেশের ম্যাস ভ্যাক্সিনেশনের জন্য সুবিধাজনক নয়।




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close