পশুবাদ
প্রকাশ: শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২০, ১১:১৯ পিএম আপডেট: ০৪.১২.২০২০ ১২:০৬ এএম (ভিজিট : ২৪৮)
গুহার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল খরগোশ। এমন সময় ভেতর থেকে হাঁক এলো, ‘ভেতরে আয়।’ বাঘের এই কথায় তার প্রাণ উড়ে গেল। থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে গেল গুহার মুখে। ভেতর থেকে বাঘ বলল, ‘ভয় পাচ্ছিস? আয়, আমরা গল্প নিয়ে কথা বলব।’
খরগোশ কাঁপতে কাঁপতে বলল, ‘বিশ^^াস করুন, গল্পের ওই খরগোশটা কিন্তু আমি ছিলাম না। ওটা অন্য একটা খরগোশ, ওটাকে আমি চিনি না।’
শোয়া থেকে উঠে গুহার মুখে এলো বাঘ। বলল, ‘কুয়োতে লাফিয়ে পড়া ওই বাঘটিও তো আমি না এবং আমি ওটাকে চিনি না, তাই না?’
বাঘের কথায় মাথা নাড়ল খরগোশ। তখন বাঘ বলল, ‘কিন্তু একটা বাঘকে ছলনা করে কুয়োতে ফেলা নিশ্চয়ই অন্যায়? তোর কি মনে হয়?’
‘তা তো অবশ্যই।’
‘তাহলে সেই অন্যায়ের প্রায়শ্চিত্তও তো করা উচিত!’
খরগোশ এবার কী বলবে কথা খুঁজে পেল না। বাঘ আবার বলল,
‘পৃথিবীর সব খরগোশ সব খরগোশের আত্মীয়, আর সব বাঘ সব বাঘের আত্মীয়। তাই আত্মীয় হিসেবে আজ তোকেই প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে।’
ভয়ে আরও কুঁচকে গেল খরগোশ। ভাবল, এই বুঝি এক কামড়ে বাঘটা তাকে খেয়ে ফেলবে! কেন যে একটা কচি ঘাস মুখে দেবার জন্য আজ ঘর থেকে বের হয়েছিল! আর এখন প্রাণটাই যাবে! নিজেকে মনে মনে দোষারোপ করল খরগোশ।
এসব যখন ভাবছিল তখন বাঘ বলল, ‘চল আমার সঙ্গে।’
খরগোশের মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছিল না। চলতে লাগল বাঘের পিছু পিছু। এক সময় গিয়ে পৌঁছল কুয়োর সামনে। বাঘ বলল, ‘এমন একটা কুয়োতেই তো তোর আত্মীয় আমার আত্মীয়কে মেরেছিল? এখন তুইও এক লাফ দিয়ে ওই কুয়োতে পড়বি।’
ভয়ে খরগোশের শরীর একেবারে হিম হয়ে গেল। ভেবে দেখল, কুয়োতে পড়লে মরতে হবে, আবার না পড়লে বাঘের পেটে যেতে হবেÑতাহলে বাঘের পেটে না গিয়ে কুয়োতে পড়ে মরাই ভালো।
পাশ দিয়ে যাচ্ছিল এক শেয়াল। খরগোশের প্রাণলীলা সাঙ্গ হতে চলেছে দেখে সাহস করে এগিয়ে এলো, ‘আরে বাঘ মামা যে, এখানে কী করছেন?’
বাঘ হেসে বলল, ‘এসেছ ভালোই হয়েছে। মহৎ একটা ঘটনার সাক্ষী হবে তুমিও। খরগোশটা তার আত্মীয়ের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে এসেছে।’
শেয়াল বলল, ‘মহৎ ঘটনা, প্রায়শ্চিত্ত! ঠিক বুঝতে পারলাম না।’
বাঘ তখন সব খুলে বলল। শুনে শেয়াল বলল, ‘সব ঠিক আছে, কিন্তু একটা ভুল হয়ে যাচ্ছে যে মামা!’
‘ভুল!’ হুঙ্কার দিয়ে উঠল বাঘ। তারপর গলাটা সামান্য নামিয়ে বলল, ‘তুমি কোনো নতুন ফন্দি আঁটছ না তো শেয়াল? তাহলে কিন্তু তোমারও আজ রক্ষা নেই।’
‘কী বলছেন মামা! আপনার বিরুদ্ধে ফন্দি আঁটব, এত্ত বড় কলিজা আমার!’
‘তাহলে?’
‘যে গল্পের জন্য খরগোশকে শাস্তি দিচ্ছেন, সেটা কি কোনো পশুর লেখা? না। এটা লিখেছে মানুষ। আর আমাদের পশুদের মধ্যে বিভেদ ঘটাতেই এটা লিখেছে। আপনি, আমি, আমরা দীর্ঘদিন ধরে পশুবাদ নিয়ে একসঙ্গে কাজ করছি। এখন আপনি যদি অন্যের কারণে এই ভুল করেন, তাহলে আমাদের আন্দোলনের মূল্য রইল কোথায়!’
বাঘ একটু ভ্রƒ কুঁচকে ভাবল। তারপর বলল, ‘তাই তো, আমাদের শত্রæ মানুষের দোষের বলি চড়াচ্ছিলাম আমার ভাইয়ের ওপর! ছি ছি ছি! কী ভুলটাই না করছিলাম! যাক, সময়মতো এসে তুমি ভুলটা ধরিয়ে দিলে।’
আর এভাবেই বেঁচে গেল খরগোশ।