ই-পেপার বিজ্ঞাপনের তালিকা সোমবার ২ অক্টোবর ২০২৩ ১৭ আশ্বিন ১৪৩০
ই-পেপার সোমবার ২ অক্টোবর ২০২৩

পুকুরপাড়
জয়শ্রী দাস
প্রকাশ: শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২০, ১০:২২ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ  Count : 336

বাবার দ্বিতীয় বিয়ের পর সংসারের ছোট মেয়ে ডলির আদর কিছুটা কমে যায়। বাবা জহরলালের কিছুই করার ছিল না, প্রথম স্ত্রী মরে যাওয়ার পর তিনি দুই মেয়েসহ সংসারের দায়িত্ব বহন করতে অক্ষম ছিলেন। ডলির বাবা জহরলালের তেমন ভ‚সম্পত্তি নেই, একখানা টিনের চালসহ বসতবাড়ি আর অল্প কিছু ধানী জমি এই হলো তার সম্পদের পরিমাণ। ডলির আসল নাম ডালিয়া, সে ডালিয়া ফুলের মতো সুন্দর। স্কুলে পাঠানোর মতো অর্থ তার বাবার নেই। যাদের দুবেলা দুমুঠো খেয়ে কোনো রকম বেঁচে থাকা তাদের আবার স্কুলে যাওয়া। বাবার দূরসম্পর্কের এক বোনের বাড়িতে ডলিকে পাঠিয়ে দেওয়া হলো। বোনটি বড়লোক, অর্থকড়ি ভালোই আছে। এ বাড়িতে ঘরের সমস্ত কাজ শেষে দশ বছরের ডলি ক্লান্তিতে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে আর মাকে স্বপ্ন দেখে। বারবার ভাবে, মা কোথায় যেন হারিয়ে গেল।
কয়েক বছর যেতেই ডলিকে বিয়ে দেওয়া হলো, স্বামী অশিক্ষিত, নৌকা তৈরির কাজ করে। ডলির বয়স পনেরো আর স্বামী অরুণের বয়স আঠাশ। চলছে সংসার, বিলের ধারে তাদের বাড়ি। প্রকৃতির হাওয়া থাকলেও পয়সার হাওয়া তেমন একটা নেই। সুন্দরী ডালিয়া কপালে সিঁদুরের একখানা ফোঁটা আর মাথায় চুপচুপা করে তেল দিয়ে স্বামীর সাথে মাঝে মাঝে হাওরের বাতাস খেতে খেতে ভালোবাসা বিনিময় করে। মানুষটা কুচকুচে কালো হলেও সুন্দরী বউয়ের সঙ্গে লেপটে থাকতে বেশ পছন্দ করে। নৌকার কাজ না করে সারা দিন বউয়ের মুখের দিকে তাকাতে ইচ্ছে করে কিন্তু পেটের দায় যে।
দুচোখ ভরে স্বামীকে দেখতে দেখতেই দুটো সন্তান এ মেয়ের পেটে বাসা বাঁধে। ডলি কোনো রকম সংসার টানছে, মাঝে মাঝে না খেয়ে থাকতে হয় তার। ডলির একটা ভাবনা সব সময় ভাবায়, তার সন্তানদের যেন কোনো বাড়িতে কাজ করতে না হয়, তারা সব সময়ের জন্য যেন মাকে কাছে পায়। মা হারানোর বেদনা বড় বেশি কঠিন।
চারদিকে বন্যার পানি থইথই, হাতে টাকা-পয়সা একদম নেই। স্বামীর শরীরটা ভালো না। সংসার বাঁচাতে হবে, এভাবে না খেয়ে কত দিন। আবার সেই এক আত্মীয়ের বাড়িতে কাজ করতে শহরে আসে ডলি। ছোট ছেলেটিকে সঙ্গে করে আনলেও মেয়েটিকে রেখে আসে বাপের বাড়িতে, আর অসুস্থ স্বামীকে তার বোনের বাড়িতে রেখে আসে, সমস্ত সংসার তছনছ। ডলির মেয়েটি সারা দিন পুকুরের পাড়ে বসে থাকে। মা ছাড়া সন্তান বড় বেশি অসহায়। হাড্ডিসার মেয়েটি কিছুই খেতে চায় না। জ্যোৎস্না আলো ছড়ায়, পুকুরের জলে মায়াময় খেলায় মাতে, আর সেই আলোতে ছোট্ট মেয়েটি অঝোর ধারায় কাঁদে আর মাকে খোঁজে। সে কেমন করে জানি বোঝে গরিবের জ্যোৎস্না দেখতে নেই, মাকে ভালোবাসতে নেই। তবুও সে পুকুরের টলটলে জলে মায়ের ছবি দেখে।






সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড
এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫। ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com