ই-পেপার মঙ্গলবার ২৮ নভেম্বর ২০২৩
মঙ্গলবার ২৮ নভেম্বর ২০২৩

গুনাহ থেকে বাঁচতে হালাল অবলম্বন
প্রকাশ: বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২০, ১০:৫১ পিএম  (ভিজিট : ১১৯৩)
মাওলানা আমিনুল ইসলাম
হারাম ও অবৈধ সম্পদ দুনিয়াতে অশান্তি ও পরকালে জাহান্নামের কারণ। পক্ষান্তরে হালাল ও বৈধ উপায়ে সম্পদ উপার্জন করা ইসলামে কেবল স্বীকৃতি জানানো হয়নি, সওয়াব অর্জনের মাধ্যম হিসেবেও ঘোষিত হয়েছে। উপার্জনহীন ব্যক্তি সাধারণত পরনির্ভরতায় আক্রান্ত হয়ে নানা প্রকার অসামাজিক কাজ ও অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। পবিত্র কোরআন ও হাদিস শরিফের অসংখ্য স্থানে রিজিক তালাশ ও নিজ হাতে উপার্জনকে উৎকৃষ্ট ও নেক কাজ বলে ঘোষিত হয়েছে। সুস্থ ও সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে কোরআন ও হাদিসের বক্তব্যগুলো খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক। সমাজ থেকে বেকারত্ব ও পরনির্ভরশীলতা দূর করতে উক্ত বাণীসমূহ প্রতিষেধকের কাজ দেবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন, ‘নামাজ শেষ হয়ে গেলে তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) সন্ধান কর।’ (সুরা জুমুআ : আয়াত ১০)
হজরত মিকদাদ (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘মানুষ যে খাবার খায় তার মধ্যে সবচেয়ে উত্তম ও উৎকৃষ্ট খাবার হলো নিজ হাতে উপার্জিত খাবার। আল্লাহর নবী দাউদ (আ.) নিজ হাতে উপার্জিত খাবার খেতেন।’ (বুখারি : ২০৭২)। হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘সাহাবায়ে কেরাম (রা.) রিজিক অন্বেষণে সশরীরে কষ্ট ও মেহনত করতেন। পরিশ্রমের কারণে তাদের শরীর ও কাপড় দুর্গন্ধ হয়ে যেত। তাদেরকে বলা হতো (নামাজের সময়) যদি তোমরা গোসল করে আসতে কতই না ভালো হতো।’ (বুখারি : ২০৭১)
সমাজ থেকে বেকারত্বের অভিশাপ বিতাড়িত করতে উপযুক্ত আয়াত ও হাদিস আমাদের পাথেয়। অর্থ সঙ্কট পুষে রাখা ও অর্থ সঙ্কট থেকে উত্তরণ চেষ্টা না করা হাদিসের দৃষ্টিতে বিপজ্জনক কাজ ও ভয়ানক মানসিকতা। রাসুল (সা.) দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি দুনিয়াবিমুখ ব্যক্তি হয়েও অভাব ও ক্ষুধার যন্ত্রণা থেকে মহান আল্লাহর দরবারে সাহায্য চেয়ে দোয়া করেছেন। হজরত আনাস (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘দারিদ্র্য কখনও কখনও কুফুর পর্যন্ত পৌঁছে দেয়।’ (শুআবুল ঈমান : ৬১৮৮)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) দরিদ্র থেকে পানাহ চেয়ে মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে আবেদন করেছেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট দরিদ্র, অভাব ও লাঞ্ছনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ (আবু দাউদ : ১৪৪৪)
নিজ উদ্যোগে ও নিজ হাতে উপার্জনের মাধ্যমে পরিবার পরিজন ও দুস্থ অসহায় মানুষের দুঃখ ও কষ্ট লাঘব করার ফজিলত ও সওয়াব অনেক। পার্থিব সুখ তো এটাই যেÑ তাদের মুখে হাসি ফোটে। অন্যদিকে পরকালীন সওয়াব লাভ হয় অপরিসীম।
হজরত মিকদাদ (রা.) থেকে বর্ণিতÑ রাসুল (সা.) বলেন, ‘নিজ হাতে রোজগারের চেয়ে উত্তম ও উৎকৃষ্ট কোনো রোজগার মানুষের হতে পারে না। মানুষ নিজের জন্য, স্ত্রী-সন্তানের জন্য এবং অধীনস্থদের জন্য যা কিছু খরচ করে সেটা তার আমলনামায় সদকা ও দান হিসেবে পরিগণিত হয়।’ (ইবনে মাজাহ : ২১৩৮)। আরেকটি হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিতÑ রাসুল (সা.) বলেন, ‘বিধবা ও এতিম মিসকিনদের দারিদ্র্য ও দুঃখ কষ্ট লাঘবে যে ব্যক্তি সচেষ্ট হয় সে হলো আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা মুজাহিদের মতো এবং সারা রাত নামাজ এবং সারা দিন রোজা রাখা ব্যক্তির মতো সওয়াবের অধিকারী।’ (ইবনে মাজা : ২১৪০)
অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্রে প্রতিটি মুসলমানের হারাম-হালালের বিষয়টি খুব সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করে চলা উচিত। স্বনির্ভরতা ও অর্থ উপার্জনের নেশায় এমন যেন না হয়Ñ আমরা হারাম রোজগারে লিপ্ত হয়ে পড়ি। চারদিকে অবৈধ ও হারাম কারবারের ছড়াছড়ি। একজন মুমিনের নিকট মহান আল্লাহ তায়ালার বিধিবিধানই শিরোধার্য। আল্লাহ তায়ালার হুকুম ও আদেশ অমান্য করার ভেতরে কোনো শান্তি ও সুখ নেই। বরং শাস্তি আছে সীমাহীন। আমাদের জীবনে হারামের ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে কিন্তু আমরা সবসময় অনুধাবন করতে সক্ষম হই না। হাদিস শরিফে এ ব্যাপারে সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে।
হজরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিতÑ রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় কর এবং রিজিক অন্বেষণে দ্রুত ও অস্বাভাবিক রাস্তা অবলম্বন কর না। যা হালাল করা হয়েছে তা গ্রহণ কর এবং যা কিছু হারাম ঘোষিত হয়েছে সেসব পরিত্যাগ কর।’ (ইবনে মাজা : ২১৪৪)। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিতÑ রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমানতদার ও সত্যবাদী মুসলিম ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন শহীদদের সঙ্গে থাকবেন।’ (তিরজি : ১২০৯)। আল্লাহ তায়ালা সবাইকে বৈধভাবে স্বনির্ভরতার সঙ্গে পার্থিব জীবন অতিবাহিত করার তওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : আলেম ও প্রাবন্ধিক









সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড
এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫। ই-মেইল : shomoyeralo[at]gmail.com