প্রকাশ: বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২০, ১০:৫১ পিএম (ভিজিট : ৩৬৯৯)
সায়েম আহমাদ
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যা কিছু করি না কেন সব কিছুই নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। হোক সেটা ছোট কিংবা বড় কোনো কাজ। প্রত্যেক কাজে নিয়ত বিশুদ্ধ হতে হবে। নিয়ত আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, ইচ্ছা, স্পৃহা, মনের দৃঢ় সংকল্প। শরিয়তের পরিভাষায়, আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের জন্য কোনো কাজ বা আমলের দিকে মনোনিবেশ করাকে নিয়ত বলে। মূলত আমাদের প্রতিটি কাজের উদ্দেশ্য হবে আল্লাহর সন্তুষ্টির অর্জনে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমরা কি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়ত করি? প্রশ্ন থেকে যায়। আমাদের জীবনের প্রতিটি কাজে বিশুদ্ধ নিয়ত থাকা জরুরি। নামাজ, রোজা থেকে শুরু করে সব কিছুতেই নিয়ত বিশুদ্ধ হওয়া জরুরি। যদি নিয়ত বিশুদ্ধ না থাকে তা হলে কাজটি যতই সুন্দর হোক না কেন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব নয়। আল্লাহর কাছে সেই কাজ গ্রহণযোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হয় না। নিয়ত সম্পর্কে মহান রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘বলে দাও যেন প্রত্যেকেই নিজ নিজ নিয়ত অনুযায়ী কাজ করে।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ৮৪)
আমরা সাধারণত দুনিয়া লাভের আশায় নিয়ত করে থাকি। কিন্তু পরকালে শান্তি লাভের আশায় খুব কমই নিয়ত করি। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘যে কেউ পরকালীন ফসল চায়, আমি তার ফসল বৃদ্ধি করি। আর যে লোক দুনিয়ার ফসল চায় তাকে দুনিয়ায় হতে দান করি। কিন্তু পরকালের তার কিছুই প্রাপ্য হবে না।’ (সুরা শুরা : ২০)। অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়ার নিয়ত রাখবে, আমি তাকে ইহজগতে যতটুকু ইচ্ছা প্রদান করব। অতঃপর তার জন্য জাহান্নাম নির্ধারণ করব। সে এতে দুর্দশাগ্রস্ত বিতাড়িত অবস্থায় প্রবেশ করবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আখেরাতের নিয়ত রাখবে এবং তার জন্য যেমন চেষ্টার প্রয়োজন তেমন চেষ্টাও করবে; যদি সে প্রকৃত মুমিন হয় এমন লোকদের চেষ্টা কবুল হবে।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ১৮-১৯)
আল্লাহ মানুষের নিয়ত দেখেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিতÑ তিনি বলেন নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তোমাদের সৌন্দর্য ও সম্পদের দিকে দেখেন না; বরং তোমাদের অন্তঃকরণ ও কাজের দিকে লক্ষ্য করেন।’ (মুসলিম)। আরও বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদেরকে বলেন, আমার বান্দা কোনো গুনাহের কাজ করার নিয়ত করলে তা না করা পর্যন্ত তার জন্য কোনো গুনাহ লিপিবদ্ধ কর না। তবে সে যদি গুনাহের কাজটি করে ফেলে, তা হলে কাজটির অনুপাতে তার গুনাহ লিখ। আর যদি আমার কারণে তা পরিত্যাগ করে তা হলে তার জন্য একটি নেকি লিপিবদ্ধ কর। সে যদি কোনো নেকির কাজ করার জন্য ইচ্ছা বা নিয়ত করে কিন্তু এখনও তা করেনি তা হলে তার জন্য একটি নেকি লিপিবদ্ধ কর। আর যদি কাজটি সে করে তা হলে তার জন্য দশগুণ থেকে (আন্তরিকতা অনুপাতে) সাতশগুণ পর্যন্ত নেকি লিপিবদ্ধ কর।’ (বুখারি)। নিয়ত ছাড়া কোনো আমল গ্রহণযোগ্যতা পাবে না মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে। আমরা প্রতিটি কাজ নিয়তের ওপর অবিচল থাকব এবং নিয়ত অনুসারে প্রত্যেকটি কাজ সম্পাদনা করব। আর এই জন্যই জীবনের প্রতিটি কাজে নিয়ত বিশুদ্ধ হওয়াটা জরুরি।