প্রকাশ: বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২০, ৭:৪৮ পিএম (ভিজিট : ১৫৩৬)
মোংলা বন্দরকে আরো কার্যকর বন্দর হিসেবে গড়ে তুলতে এবার বন্দরের ইনার বারেও ড্রেজিং করা হচ্ছে। বুধবার মোংলা বন্দরের সভা কক্ষে এ সংক্রান্ত চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়। অনুষ্ঠানে নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ইনার বারে ড্রেজিং সমাপ্ত হলে পণ্য পরিবহন খরচ সাশ্রয় হবে। মোংলা বন্দরে জাহাজের সংখ্যা অনেক বাড়বে, যা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়নসহ দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
মোংলা বন্দরের জেটিতে স্বাভাবিক জোয়ারের সহায়তায় ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ হ্যান্ডেল করার লক্ষ্যে বন্দর চ্যানেলের ইনার বারে ৮ দশমিক ৫০ মিটার গভীরতায় ড্রেজিং করা হবে। এর আগে নির্ধারিত সময়ের আগেই সম্পন্ন হয় মোংলা বন্দরের নতুন চ্যানেলের ড্রেজিং কাজ।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিয়ানসু হাইহং কন্সট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড এবং চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন কর্পোরেশনের প্রতিনিধি ইয়াং ঝিজুম চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী এসময় মন্ত্রণালয় থেকে অনলাইনে সংযুক্ত ছিলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, মোংলা বন্দরটি বিগত বিএনপি সরকারের আমলে মৃতপ্রায় বন্দরে পরিণত হয়। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বন্দরের কার্গো হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতিসহ অবকাঠামো উন্নয়ন এবং ড্রেজিং করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে বন্দরের বিভিন্ন প্রকার হ্যান্ডলিং ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ, অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং ড্রেজিং করার জন্য নানাবিধ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ব্যয় করে মোংলা বন্দরের আউটার বারে ড্রেজিং করা হয়েছে। এ ড্রেজিংয়ের ফলে বন্দরের এ্যাংকোরেজ এলাকা পর্যন্ত ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ অনায়াসে আসতে পারবে। ইতোমধ্যে ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ আসা শুরু করেছে। ফলে বন্দরে আগত জাহাজের সংখ্যা ও রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ইনার বারে ড্রেজিং এর জন্য ব্যয় হবে ৭৫৪ দশমিক ৮ কোটি টাকা। ২০২১ এ জানুয়ারিতে ড্রেজিং কাজ শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে শেষ হবে। চীনের প্রতিষ্ঠান জিয়ানসু হাইহং কন্সট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড এবং চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন কর্পোরেশন যৌথভাবে ড্রেজিং কাজটি করবে। ইনার বারে ২১৬ দশমিক ৯ লক্ষ ঘন মিটার ড্রেজিং করা হবে। বঙ্গোপসাগর থেকে প্রায় ১৩১ কিলোমিটার উজানে পশুর নদীর পূর্ব তীরে মোংলা বন্দর অবস্থিত। বঙ্গোপসাগর থেকে চ্যানেলের প্রবেশমুখ যা আউটার বার নামে এবং জয়মনিরগোল থেকে বন্দর জেটি পর্যন্ত যা ইনার বার নামে পরিচিত।
পশুর চ্যানেলের নাব্যতা সংকটের কারণে মোংলা বন্দরের জেটিতে ৭ দশমিক ৫ মিটারের অধিক ড্রাফটের জাহাজ হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হতো না। ফলে এসব জাহাজ প্রথমে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার খালাস করে ড্রাফট কমিয়ে মোংলা বন্দরে আসতো। এতে মোংলা বন্দরে কন্টেইনার পরিবহনের খরচ ও সময় বৃদ্ধি পায়। মূলত এ কারণেই কন্টেইনারাইজড মালামাল আমাদানি-রপ্তানিতে ব্যবসায়ীরা মোংলা বন্দর ব্যবহারে অনীহা প্রকাশ করতো।
বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরেও সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৫০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ হ্যান্ডেল করা হচেছ। সে বিবেচনায় এই ড্রেজিং করা হলে চট্টগ্রাম বন্দরের মতো মোংলা বন্দরেও সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৫০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ হ্যান্ডেল করা সম্ভব হবে। সে বিবেচনায় এই ড্রেজিং করা হলে চট্টগ্রাম বন্দর মোংলা বন্দরের ড্রাফটের কোনও পার্থক্য থাকবে না এবং মোংলা বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের উপযুক্ত বিকল্প বন্দরে পরিণত হবে।