প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০, ১০:২৩ পিএম (ভিজিট : ১৬৭৭)
মাওলানা দৌলত আলী খান
ইসলামে অসিয়ত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। অসিয়তের আভিধানিক অর্থ হলো অন্তিম উপদেশ বা নির্দেশ। পারিভাষিক অর্থে কোনো ব্যক্তি মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে কারও জন্য কোনো বিষয়ে বিশেষভাবে নির্দেশ প্রদান করাকে অসিয়ত বোঝায়। ইসলামে অসিয়তের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা রয়েছে। শরিয়তের বিধানকে তোয়াক্কা না করে নিজের ইচ্ছামতো অসিয়ত করলে তা পালন করা ওয়ারিশদের কর্তব্য নয়। যেমন সমস্ত সম্পদের এক-তৃতীয়াংশের বেশি ওয়ারিশ ব্যতীত অন্য কোনো ব্যক্তিকে দিয়ে দেওয়া অথবা কোনো একজন ওয়ারিশকে সমস্ত সম্পদ দিয়ে দেওয়ার অসিয়ত করে যাওয়াÑ এসব অসিয়ত অনুচিত ও শরিয়ত পরিপন্থি। ওয়ারিশ ও উত্তরসুরিদের জন্য এ ধরনের অসিয়ত ক্ষতিকর। যে ব্যক্তি এ ধরনের অবৈধ অসিয়তের মাধ্যমে ওয়ারিশকে সম্পদ থেকে বঞ্চিত করবে, তাকে জাহান্নামের আজাব ভোগ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, ‘কোনো পুরুষ বা নারী ষাট বছর যাবৎ আল্লাহর ইবাদত করে। অতঃপর তাদের নিকট মৃত্যু পৌঁছলে (মৃত্যুর লক্ষাণাদি প্রকাশ পেলে) তারা যদি অন্যায় অসিয়তের মাধ্যমে ওয়ারিশদের ক্ষতি করে তা হলে তাদের জন্য জাহান্নামের আগুন আবশ্যক হয়ে যায়।’ (তিরমিজি : ২২৬৩; আবু দাউদ : ২৮৬৯)
এ ছাড়াও যে ব্যক্তি নিজের ওয়ারিশদেরকে অতিরিক্ত অসিয়তের মাধ্যমে মিরাস বা উত্তরাধিকারী সম্পদ থেকে বঞ্চিত করবে আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাত প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করবেন। কারণ অতিরিক্ত অসিয়ত দ্বারা ওয়ারিশদের সম্পদ কমিয়ে ফেলা বা তাদেরকে মিরাস থেকে বঞ্চিত করা হয়। এমনটি ইসলামে জায়েজ নেই। তবে অসিয়তকারী তার ওয়ারিলদের মধ্যে দ্বীনের দিকটা প্রাধান্য দিয়ে কারও ব্যাপারে মিরাসি সম্পত্তির কিছু অংশ বেশি দেওয়া জায়েজ আছে। উদাহরণস্বরূপ নিজের ওয়ারিশদের মধ্যে কেউ আলেম থাকলে তখন ওই আলেম ওয়ারিশের জন্য নিজের সম্পদের অতিরিক্ত কিছু অংশ অসিয়ত করতে পারবে। (ফাতহুল মারাম)
সুতরাং দ্বীনি কারণ ছাড়া কারও জন্য অতিরিক্ত অসিয়ত করা জায়েজ নেই। যদি কোনো ব্যক্তি নিজের ওয়ারিশদের সঙ্গে প্রবৃত্তির প্ররোচনায় অসিয়ত বিষয়ে অবিচার করবে, সে জান্নাত লাভ থেকে বঞ্চিত হবে। এ মর্মে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি অতিরিক্ত অসিয়তের মাধ্যমে ওয়ারিশের অংশ কর্তন করবে কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তার জান্নাতের মিরাসের অংশ কর্তন করবেন।’ (ইবনে মাজা : ২৮০৭)
লেখক : শিক্ষক, নাজিরহাট বড় মাদ্রাসা, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম