নারায়ণগঞ্জে মৃত স্কুলছাত্রীর জীবিত ফিরে আসার ঘটনার বিষয়ে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এটা পুরো পুলিশ বাহিনীর গায়ে মাখানোর দরকার নেই।’ ওই ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে শুনানিতে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার এসব কথা বলেন।
এ সময় আদালত বলেন, ‘যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে তা হলে সেটা থেকে কীভাবে উত্তরণ ঘটানো যায়, সেটা পুলিশ বাহিনীর ভেবে দেখা উচিত।’ আদালত আরও বলেন, ‘আমাদের পাশ^বর্তী দেশ ভারতে যদি পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় কোনো ব্যক্তিকে কোনো কটু কথা পর্যন্ত বলা হয়, তা হলে সেটা অপরাধ হিসেবে দেখা হয়।’ শুনানিতে সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনসুরুল হক চৌধুরী বলেন, ‘বিচারিক তদন্ত কমিটির রিপোর্টে পুলিশ বাহিনীর ওপর একটা দোষ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমি মনে করি, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অতিরঞ্জিত কিছু করেননি। তিনি তার আওতার মধ্যে থেকেই আসামি গ্রেফতার ও রিমান্ডে নিয়েছেন। আসামিদের কোনো নির্যাতন করা হয়নি। কারণ আসামিরা জুডিশিয়াল কমিটির বাইরে আর কারও কাছে নির্যাতনের কথা তুলে ধরেননি।’
তখন আদালত বলেন, ‘জবানবন্দিতে আসামিরা যে বক্তব্য দিয়েছে সেটা সত্য নয়। ভিকটিমকে মেরে নদীতে ফেলার যে জবানবন্দি তাতে আসামিদের স্বার্থ কী? ক্ষুদিরাম ফাঁসির মঞ্চে যেতে চেয়েছিল। এজন্য কি সবাই ফাঁসিতে যেতে চায়? এ বিষয়ে আমাদের একটি সিন্ধান্তে আসতে হবে।’ হাইকোর্ট বলেন, ‘আমরা বিচারপতি, আমরা এই মাটির সন্তান। আমরা সব কথা কোর্টে বলতে পারি না। এখানে শুনানির সময় সাংবাদিকরাও থাকেন। ফাঁসি হবে জেনেও আসামিরা কি স্বেচ্ছায় মিথ্যা জবানবন্দি দিয়েছেন? জবানবন্দিতে আসামিরা মেয়েটিকে হত্যা করার কথা তা হলে কি শখ করে বলেছেন? এটা দুর্ভাগ্যজনক। অভাগা তো হলো এদেশের জনগণ।’
এ পর্যায়ে অ্যাডভোকেট মনসুরুল হক চৌধুরী বলেন, ‘ভিকটিম বিচারিক কমিটির কাছে বলেছেন, আসামি আবদুল্লাহ তাকে ধর্ষণ করেছেন।’ আদালত বলেন, ‘২২ ধারায় জবানবন্দিতে মেয়েটি আদালতে কী বলেছেন? দুটো জবানবন্দির মধ্যে কোনটিকে আমরা ঠিক মনে করব?’
শুনানিতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মো. সরোয়ার হোসেন বাপ্পী বলেন, ‘আসামিরা রিমান্ডের পর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দি দেওয়ার সময় তারা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নির্যাতনের কথা বলেননি।’ আদালত বলেন, ‘আপনাদের দুজনের শুনানি গ্রহণ করলে আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি সত্য বলে ধরে নিতে হয়।’
মনসুরুল হক চৌধুরী আরও বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা ভিকটিমকে উদ্ধার করেছেন, সেজন্য জুডিশিয়াল রিপোর্টে তার প্রশংসাও করা হয়েছে। এই মামলায় তদন্ত কর্মকর্তাকে দোষী সাব্যস্ত করা ঠিক হবে না। তদন্ত কর্মকর্তা শামীম আল মামুনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক।’
এ পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিনকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, ‘ভারতে কোনো আসামিকে রিমান্ডে নেওয়া হলে সেখানে আইনজীবী রাখার সুযোগ আছে। সেজন্য তারা সিআরপিসি সংশোধন করেছে। আমাদের তো কোর্ট থেকে আইন সংশোধনের কথা বললে নানা প্রতিক্রিয়া হয়।’ মনসুরুল হক চৌধুরী বাংলাদেশ বনাম ব্লাস্ট মামলার উদাহরণ তুলে ধরে হাইকোর্ট বলেন, ‘এই মামলা বলে দেয় রিমান্ডে আইনজীবী রাখার সুযোগ আছে।’ তখন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘ওই মামলাটি এখন রিভিউ বিচারাধীন রয়েছে। সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আপিল বিভাগকে এ বিষয়ে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।’ তখন আদালত বলেন, ‘হাইকোর্টের কাজ কি তা হলে রুল মঞ্জুর, রুল খারিজ করা আর জামিন দেওয়া?’
এ পর্যায়ে রিভিশন মামলার আইনজীবী মো. শিশির মনির বলেন, ‘ব্লাস্ট বনাম রাষ্ট্র মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে যে রিভিউ চাওয়া হয়েছে সেখানে রিমান্ডে আইনজীবী রাখার বিষয়ে কোনো বিরোধিতা করা হয়নি।’ পরে আদালত এই মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী বুধবার দিন ধার্য করেন। এর আগে নারায়ণগঞ্জে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে করা মামলায় আসামিদের স্বীকারোক্তি আদায় সংক্রান্ত সদর থানার কার্যক্রমের বিষয়ে বিচারিক তদন্ত প্রতিবেদন গত ৪ জানুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সিলগালা করে দাখিল করা হয়।