মরণ নেশা ইয়াবা ট্যাবলেট এখন সর্বগ্রাসী হয়ে উঠেছে। কি গ্রাম আর কি শহর, সবখানেই ছড়িয়ে গেছে ইয়াবা। হতাশাগ্রস্ত তরুণ সমাজ থেকে শুরু করে নেশাগ্রস্তরা মরিয়া ইয়াবার জন্য। এ কারণে দেশে প্রতিনিয়তই বাড়ছে ইয়াবার চাহিদা। তাই সরবরাহ ঠেকানোর দিকেই মূলত নজরদারি করতে যাচ্ছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (ডিএনসি) মিয়ানমারের সঙ্গে যৌথভাবে সীমান্তে টহল অভিযান পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে। প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রাথমিক আলোচনার পর ইতোমধ্যেই মিয়ানমারকে অফিসিয়ালি চিঠি দিতে যাচ্ছে ডিএনসি।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, মিয়ানমারের ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট ডিভিশনের (ডিইডি) সঙ্গে ১৫ ডিসেম্বর দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়। বৈঠকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ইয়াবার কারখানা ও ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য তুলে ধরে বাংলাদেশ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। অনলাইন জুমে আয়োজিত ওই বৈঠকে সীমান্তে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের যৌথ টহল অভিযান পরিচালনার প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ। তবে বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়নি। মূলত বৈঠকের পর ডিএনসির পক্ষ থেকে দুই দেশের যৌথ টহল অভিযানের বিষয়ে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু করা হয়। তাতে সম্মতিও জানিয়েছে মিয়ানমার। এ বিষয়ে একটি রূপরেখা তৈরির পরামর্শ দেয় তারা। সে আলোকে কাজ শুরু করেছে ডিএনসি। এরই মধ্যে যৌথ টহল অভিযানের বিষয়ে লিখিত প্রস্তাব ও চিঠি তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি ডিএনসি ও ডিইডির পক্ষ থেকে দুই দেশের বর্ডার লিয়াজোঁ অফিসার (বিএলও) নিয়োগ করা হবে। যারা সার্বক্ষণিক উভয়ের সঙ্গে যোগাযোগ ও সহযোগিতা নিতে পারবেন। শিগগিরই যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ বিষয়গুলো মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে বলেও জানান কর্মকর্তারা। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপপরিচালক (অপারেশন্স) মো. আহসানুর রহমান সময়ের আলোকে বলেন, ইয়াবাসহ সব ধরনের মাদক চোরাচালান রোধে সীমান্তে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের যৌথ টহল অভিযান পরিচালনার বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এই উদ্যোগের প্রাথমিক কার্যক্রম চলছে। ডিএনসির পক্ষ থেকে লিখিত প্রস্তাব ও রূপরেখার খসড়া পাঠানো হবে। সেটির ওপর তারাও (মিয়ানমার) মন্তব্য বা সংযোজন-বিয়োজন করতে পারে। তারপর এটি চূড়ান্ত হতে পারে।
আহসানুর রহমান বলেন, এ কাজটি করা গেলে ইয়াবার সরবরাহ বা পাচার আরও অনেক বেশি ঠেকানো সম্ভব হবে। দুই দেশ একই ইস্যুতে টহল দিলে স্বাভাবিকভাবেই ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি বিএলও নিযুক্ত হলে তাৎক্ষণিক তথ্য আদান-প্রদানসহ অভিযান বিষয়েও দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যাবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের সীমানার দৈর্ঘ্য ১৯৩ কিলোমিটার। এর মধ্যে কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদের অংশ দিয়েই ইয়াবাসহ চোরাচালান পণ্য সবচেয়ে বেশি ঢুকছে বাংলাদেশে। এর বাইরেও বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ি পথেও অনেক চোরাইপণ্য প্রবেশের অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে মাদকরোধে বিজিবি, কোস্ট গার্ড, র্যাব, পুলিশ ও ডিএনসি অনেক ক্ষেত্রেই যৌথ টহল আয়োজন করে থাকে। তবে এ এলাকায় আরও বেশি নজরদারির লক্ষ্যে মিয়ানমার সীমান্তের বাংলাদেশ অংশে নাফ নদের তীর ঘেঁষে ৬১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সীমান্ত সুরক্ষা সড়ক নির্মাণকাজ চলছে। এ সড়কটি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম থেকে উখিয়ার পালংখালী হয়ে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত হবে।
জানা যায়, গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশ-মিয়ানমার যৌথ বৈঠকে ডিএনসির পক্ষ থেকে বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ দেওয়া হয়। কিন্তু ওই বৈঠকে মিয়ানমার প্রায় সবই অস্বীকার করেছে। তবে তারা আরও বেশি খোঁজখবর নেওয়ার কথাও জানায়। এর মধ্যে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সীমান্ত এলাকায় ইয়াবা তৈরির ৪৮টি কারখানা চালু থাকার কথা জানানো হয়। এর মধ্যে ৩৭টি কারখানাসহ দেশটির ১২ জন ইয়াবা কারবারির তালিকাও দেয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর।