ই-পেপার শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক : যাত্রীবেশে গাড়িতে ডাকাতি, মাইক্রো মানেই আতঙ্ক
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২১, ১১:১০ পিএম আপডেট: ২১.০১.২০২১ ১২:০৪ এএম  (ভিজিট : ১৫০)
রাত হলেই দেশের ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যাত্রীবেশে গাড়িতে ছিনতাই ও ডাকাতি অবাধে চলছে। পুলিশের সঙ্গে হাইওয়ে পুলিশের সমন্বয়হীনতার কারণে ভুক্তভোগীরা কোনো ধরনের প্রতিকার পাচ্ছে না। মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্টে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ক্যাম্প না থাকা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের স্বল্পতার কারণে বেশিরভাগ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে মাইক্রোবাসে এসব ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি ঘটছে। তাই অপরিচিত এসব গাড়ি এড়িয়ে চলতে অনুরোধ করেছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্মকর্তারা।
মহাসড়কে চলাচলকারী চালকসহ সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে ইদানীং যাত্রীবেসে ছিনতাই বেড়েছে। ছিনতাইকারীদের খপ্পরে পড়ে যাত্রীরা সর্বস্ব হারাচ্ছে, কখনও কখনও আহত হচ্ছে। তবে কয়েকজন ভুক্তভোগী যাত্রী বলেন, ছিনতাই রুখতে পুলিশকে আরও দায়িত্বের সঙ্গে তৎপরতা বাড়াতে হবে। জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মিরসরাই, বারইয়ারহাট-সীতাকুণ্ডে যারা প্রতিদিন গাড়িতে যাওয়া-আসা করেন তাদের টার্গেট করে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী দল। সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার বিভিন্ন চাকরিজীবী তাড়াহুড়ো করে ছুটি যাওয়া ও গাড়িতে যাত্রীদের বেশি চাপ থাকার সুযোগ নিয়ে কৌশলে ওইদিন ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি ঘটায়। কয়েকটা সংঘবদ্ধ চক্র ব্যবসায়ী ও ব্যাংকারদের টার্গেট করছে বেশি।
ঘটনার আদ্যোপান্ত
শুক্রবার ৮ জানুয়ারি রাত ৮টায় বারইয়ারহাট থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার জন্য মাইক্রোবাসে উঠলে সোনাপাহাড় এলাকায় ছিনতাইয়ের শিকার ইসলামী ব্যাংক বারইয়ারহাট শাখার কর্মকর্তা আব্দুল মোমিন, এজেন্ট ব্যাংকিং কর্মকর্তা মিজানুর রহমান ও অজ্ঞাত এক ব্যক্তির কাছ থেকে অস্ত্রের মুখে সব ছিনিয়ে নেয় মাইক্রোতে যাত্রীবেসে থাকা ছিনতাইকারীরা। সঙ্গে থাকা মোবাইল, মানিব্যাগ, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, এটিএম কার্ড ছিনিয়ে নেয়। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে আব্দুল মোমিনের এটিএম কার্ড দিয়ে মিরসরাই সদরে অবস্থিত শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের বুথ থেকে ৪০ হাজার টাকা উত্তোলন করে। এরপর উপজেলার ছরারকুল এলাকায় অজ্ঞান করে মাইক্রো থেকে তাদের ফেলে দিয়ে চলে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে।
সর্বশেষ ২০২০ সালের ২৪ নভেম্বর রাত ৯টায় মিরসরাইয়ের বারইয়ারহাট থেকে সুফিয়া রোড় এলাকায় যাওয়ার জন্য একটি সাদা হাইচে উঠে ছিনতাইকারী কবলে পড়েন ব্যবসায়ী মোমিনুল হক। তিনি বলেন, পূর্বে গাড়িতে যাত্রীবেসে থাকা ৬ জন ছিনতাইকারী ছিল তা বুঝতে পারিনি। সোনাপাহাড় এলাকায় যাওয়ার পর তারা আমাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ৩টি স্মার্টফোন, নগদ টাকা-পয়সা নিয়ে ঠাকুরদীঘি এলাকায় নামিয়ে দেয়।
তার ঠিক তিনদিন পর ২৭ নভেম্বর ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছে ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল) মিরসরাই উপশাখার ব্যবস্থাপক জামাল উদ্দিন (৩৮)। রাত আনুমানিক ৯টায় মিরসরাই সদর থেকে মাইক্রোযোগে ফেনী শহরে যাওয়ার পথে এই ঘটনা ঘটে। পরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর ফাজিলপুর এলাকা থেকে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে বারইয়ারহাট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় নিয়ে তাকে চিকিৎসা করানো হয়। দীর্ঘ একমাস চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন।
সম্প্রতি আগে চট্টগ্রাম শহর থেকে মাইক্রোযোগে বাড়ি ফেরার পথে সাহেরখালী ইউনিয়নের দুই ভাইকে জিম্মি করে সর্বস্ব লুট করে নেয়। বড়দারোগারহাটের এক শিক্ষকের ল্যাপটপ, জমি কেনার টাকাসহ লুট করে ওনাকে কুমিল্লায় নিয়ে ফেলে দেওয়া হয়।
গত বছরের ২২ জুলাই ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে সব খুয়েছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অদম্য ২০০৫-এর সাবেক সভাপতি এনামুল হক সোহাগ। গত বছরের ৩১ মে মিরসরাই উপজেলার ছোটকমলদহ এলাকা থেকে চট্টগ্রাম শহরগামী যাত্রী ফয়সাল ইকবালের কাছ থেকে ছিনতাই করে গাড়ি থেকে ফেলে দেওয়ার পর ওই ব্যক্তির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যাতায়াত নিয়মিত যাত্রী শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, আমরা যারা নিয়মিত প্রতিদিন যাতায়াত করি আমরা কোনো অবস্থাতেই যেন কোনো অপরিচিত প্রাইভেটকার এবং মাইক্রোতে না উঠি। প্রায় প্রতিদিন সন্ধ্যায় এমন কালো গ্লাসের মাইক্রোগুলো যাওয়ার জন্য ডাকে। এরা কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে আপনার গতিবিধি লক্ষ করে, নজর রাখে। তারপর টার্গেট করে, কোনোভাবে মাইক্রোতে ওঠাতে পারলেই ছিনতাই করে। তাই যতই তাড়া থাক না কেন, এসব গাড়িতে উঠবেন না।
তিনি আরও বলেন, অহরহ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে, তারপরও প্রশাসন কেন স্ব-উদ্যোগী হয়ে মাঠে নামছে না জানি না। এমন ঘটনা চলতে থাকলে এশিয়ার সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানির কর্মকর্তারা আসতে ভয় পাবে এবং এটা সামগ্রিকভাবে সবার জন্যই ক্ষতিকর। অচিরেই এসব ছিনতাই-ডাকাতি বন্ধ করা উচিত। আমরা নিশ্চিতে যাতায়াত করতে চাই। স্বাভাবিকভাবেই কর্মস্থলে যেতে চাই এবং ঘরে ফিরতে চাই।
এই বিষয়ে জোরারগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ ফিরোজ উদ্দিন বলেন, ইদানীং ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় বারইয়ারহাট কেন্দ্রিক সন্ধ্যার পর আমাদের কয়েকটি টিম কাজ করছে। আমাদের জনবল সঙ্কট রয়েছে। তারপরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। তিনি আরও বলেনÑ চালক, পথচারী ও যাত্রীদের সচেতনতায় লিফলেট বিতরণসহ নানা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে হাইওয়ে পুলিশ। অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে সচেতনতার বিকল্প নেই। অপরিচিত প্রাইভেটকার বা গাড়িতে না ওঠাই উত্তম।












সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close