ই-পেপার শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪
শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪

বছরের মাঝামাঝি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন
মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখতে হবে
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২১, ১১:৩৫ পিএম  (ভিজিট : ১২৯)
রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে আবারও কিছুটা নমনীয় মনোভাব প্রকাশ করেছে মিয়ানমার। এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সঙ্গে তারা এবার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও অন্তর্ভুক্ত করায় সম্মতি প্রকাশ করেছে। ফলে চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে মঙ্গলবার বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে ত্রিপক্ষীয় ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। চীনের মধ্যস্থতায় অনুষ্ঠিত হয় এই বৈঠক। তবে হতাশার কথা এই, কী প্রক্রিয়ায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে এ ব্যাপারে বৈঠকে একমত হতে পারেনি কোনো দেশ।
২০১৭ সালের শেষদিকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযান ও উগ্র বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নিপীড়নে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এই ঘটনাকে সাম্প্রতিক ইতিহাসে বিশে^র সবচেয়ে বড় মানবিক সঙ্কট বলে চিহ্নিত করেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। জাতিসংঘ এই ঘটনাকে উল্লেখ করেছে গণহত্যা হিসেবে। আর নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালত (আইসিজে) মিয়ানমারকে এই গণহত্যা প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। সেনা অভিযানের সময় যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে; তাদের নাম, পরিচয় ও বিস্তারিত বিবরণসহ বায়োমেট্রিক নিবন্ধন করা হয়েছে। নিবন্ধনের তথ্য মোতাবেক, মিয়ানমারে অভিযানের পর ৮ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তবে এর আগে থেকেই কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বাস করছে। বিভিন্ন সময়ে তারা বাংলাদেশে এসেছিল। তারা এখনও নিবন্ধনের বাইরে রয়ে গেছে। তাদের সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ হবে বলে অনুমান করা হয়। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে বর্তমানে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ১১ লাখের বেশি। ইতঃপূর্বে ৮ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মিয়ানমার এই তালিকা থেকে মাত্র ৪২ হাজার যাচাই-বাছাই করেছে এবং এ থেকে ৩০ শতাংশ নাম বাদ দিয়েছে। অর্থাৎ এখন পর্যন্ত তারা মাত্র ২৮ হাজার রোহিঙ্গাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। মিয়ানমার কর্তৃক স্বীকৃত এই রোহিঙ্গাদের কাউকে এখনও ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। এরই মধ্যে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে কি না এ নিয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে আস্থার অভাব দেখা দিয়েছে। এ কারণে দুই দফায় ফেরত পাঠানোর আয়োজন করা হলেও রোহিঙ্গাদের কেউ রাখাইন রাজ্যে ফিরে যেতে চায়নি। এরপর শুরু হয় করোনা মহামারি। এই মহামারির মধ্যেই মিয়ানমারে পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও করোনার অজুহাত দেখিয়ে তারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার গতি ধীর করছে।
তবে সঙ্কট সমাধানে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনা নানাভাবে অব্যাহত রাখা হয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির এই প্রচেষ্টা আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিজ্ঞজনোচিত সিদ্ধান্ত এবং দূরদর্শিতার ফলেই সম্ভব হচ্ছে। অন্যদিকে মিয়ানমার বরাবরই এই সঙ্কট সমাধানে আন্তরিক নয় এটা এখন সবার কাছেই স্পষ্ট।
প্রধানমন্ত্রীর তৎপরতার কারণে ২০১৯ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনকে সামনে রেখে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে মিয়ানমারের ওপর বড় পরিসরে চাপ আসতে যাচ্ছিল। সেই চাপ সরিয়ে দিতে মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে এক ধরনের কূটনৈতিক নাটক করে। ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বরও মিয়ানমার একই কাজ করেছে। এই দুই দফা ঘটনা থেকে এখন আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত। আমরা যাতে কোনোভাবেই তৃতীয়বারের মতো মিয়ানমারের ফাঁদে আটকে না যাই সেদিকে এবার বিশেষভাবে নজর দেওয়া জরুরি। দেশটির ওপর আন্তর্জাতিক ও কূটনৈতিক চাপ আরও জোরালো করতে হবে। তবেই এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে এবং ধীরে ধীরে তা এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।








সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close