করোনা মহামারির পরে সব মানুষই অর্থনৈতিকভাবে বিপন্ন সময় পার করছে। এর মধ্যেও বেশিরভাগ স্কুলে ভর্তি কার্যক্রম চলছে। কিন্তু অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদফতরের নির্দেশনা মানছে না।
নিয়ম ভঙ্গ করে ভর্তিতে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে। যেসব ফি অত্যাবশ্যকীয় নয়, সেসবও নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে এক থেকে দুই মাসের অগ্রিম বেতন নেওয়া হচ্ছে। এমনকি গত শিক্ষা বর্ষে আদায় করা অতিরিক্ত ফি সমন্বয় করছে না। বিষয়টি অভিভাবকদের কাছে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা মনে হলেও স্কুলগুলো এ ব্যাপারে নাছোড়বান্দা। শিক্ষকরা বলছেন, ছাত্ররা টাকা না দিলে তারা চলবেন কি করে। তাদেরও পরিজন রয়েছে।
অন্যদিকে অভিভাবকরা বলছেন পুরো বছর স্কুল বন্ধ রেখে তারা টাকা চায় কীভাবে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ফলে স্কুলের কোনো পরীক্ষাই হয়নি। আগামী ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত স্কুল বন্ধ রয়েছে। এই ছুটি আরও বাড়তে পারে। মাউশি অধিদফতর নির্দেশনায় বলা হয়েছে পত্রিকান্তরে প্রকাশ, বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো (এমপিওভুক্ত ও এমপিওবিহীন) শিক্ষার্থীদের কাছ শুধু টিউশন ফি নিতে পারবে। আ্যসাইনমেন্ট, টিফিন, পুনর্ভতি, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞানগার, ম্যাগাজিন ও উন্নয়ন বাবদ কোনো ফি নেবে না। কোনো অভিভাবক চরম আর্থিক সঙ্কটে পতিত হলে তার সন্তানের টিউশন ফির বিষয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ বিশেষ বিবেচনায় নিবে। কোনো শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন যেন কোনো কারণে ব্যাহত না হয় সে বিষয়টি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সবাইকে যত্নশীল হতে হবে।
এগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে, তা কি অধিদফতর পর্যবেক্ষণ করছেন? দেশব্যাপী বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি। পৃথিবীর অনেক দেশ আছে, যেখানে মোট জনসংখ্যাও এত নয়। শিক্ষার্থীদের এই সংখ্যা নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য গর্বের। শিক্ষায় সরকার ও পরিবারের বিনিয়োগ বেড়েছে। দেশের বেশিরভাগ স্কুলই বেসরকারি পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু দুঃখজনক হলো, শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে টেকসই ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অভাব রয়েছে বলে ওয়াকিবহাল মহলের অভিমত। বিষয়টি যে অসত্য নয়, করোনাকালীন বাস্তবতায় তা স্পষ্ট হয়েছে। এটা ঠিক, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় অর্থের প্রয়োজন রয়েছে।
কিন্তু বিশেষ পরিস্থিতিতে অর্থের চাপটি কেন শুধু অভিভাবকরা বহন করবেন? সরকার তো বিভিন্ন খাতে প্রণোদনা দিচ্ছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও এর আওতায় আনলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আরও উপকৃত হতো। মনে রাখতে হবে, ৪ কোটি শিক্ষার্থী মানে ৪ কোটি ভবিষ্যৎ।
কোনো কারণে তাদের পথচলা বাধাগ্রস্ত হোক, তা কারও প্রত্যাশা নয়। এ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে। আবার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলতি শিক্ষা বর্ষে নানা ধরনের ফির সঙ্গে অগ্রিম বেতনও নেওয়া হচ্ছে, যা অমানবিক। অভিভাবকরা স্কুলে যা চাচ্ছে, তা দিতে বাধ্য হচ্ছেন। অচিরেই এটা বন্ধে সংশ্লিষ্ট মহলের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।
ষ মীর ইমরান আলী
শিক্ষার্থী, আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও
প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়