পায়ে চলা পথ গিয়েছে বনবস্তির অল্প কয়েক ঘর বাসিন্দার ঘর-গেরস্থালির মধ্য দিয়ে। মধুপুরের সেই রাস্তা পাকা সেখানে এক বাড়িতে পৌঁছে দুদণ্ড বিশ্রাম। এদিক-ওদিক তাকাতেই মনোযোগ কেড়ে নিল রহস্যে ঘন হয়ে থাকা দুই মহিরুহ। তাদের শরীরে শেষ বিকালের রোদ। অতি প্রাচীন দুই গাছে ভর করে নিশ্চিন্তে আছে শালসহ শত শত গাছ, আরও কত অজানা উদ্ভিদ, পাখি, প্রজাপতি, নানা প্রজাতির প্রাণী। হেক্টরের পর হেক্টর জঙ্গল ধ্বংসের যুগেও এই মহিরুহ আশ্রয়দাতার ভূমিকায় এখনও অটল। দিনের আলো নিভে এলো। ঘন জঙ্গলের মধ্যে তখন শুকনো পাতায় হাওয়া ওঠার শব্দ আর ক্ষণে ক্ষণে ডেকে ওঠা বন মোরগের ডাক।
মধুপুর জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের অন্যতম একটি জীববৈচিত্র্যপূর্ণ উন্মুক্ত উদ্যান, এই বনাঞ্চল টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় অবস্থিত। নিসর্গপ্রেমীদের কাছে মধুপুরের জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। ঢাকা থেকে প্রায় ১২৫ কিলোমিটার দূরত্বে মধুপুর বনাঞ্চল।
মধুপুর বনাঞ্চলের আয়তন প্রায় ৮৪ হাজার ৩৬৬ হেক্টর। নানান প্রজাতির লতাগুল্ম ও বৃক্ষরাজি রয়েছে, যেমনÑ শাল, বহেড়া, আমলকি, হলুদ, আমড়া, জিগা, ভাদি, অশ^ত্থ, বট সর্পগন্ধা, শতমূলী, জয়না, বিধা, হারগাজা, বেহুলা ইত্যাদি অন্যতম। মধুপুর বনাঞ্চলে আছে প্রায় ১১ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৭ প্রজাতির সরীসৃপ, ৪ প্রজাতির উভচর এবং ৩৮ প্রজাতির পাখি। মুখপোড়া হনুমান, লালমুখ বানর, বন্য শূকর, চিত্রা হরিণ, মায়া হরিণ, পেঁচা, কাঠ ময়ূর, বন মোরগ আরও কত কী সব।
প্রায়ই খবর হয়ে আসে, বনাঞ্চল উজাড় নিয়ে নানা রকম দুঃখজনক খবরাখবর যা কি না বনাঞ্চল প্রেমিক হিসেবে প্রত্যাশা করি না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মধুপুর বনাঞ্চল সংরক্ষণে সচেষ্ট থাকবেন বলে আশা রাখি।
ষ লিয়াকত হোসেন খোকন
রূপনগর, ঢাকা