ই-পেপার শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪

পিকে হালদার কাণ্ড
সহযোগীদের অ্যাকাউন্টে আরও প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা
প্রকাশ: শুক্রবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২১, ১১:২১ পিএম আপডেট: ২১.০১.২০২১ ১১:৩৫ পিএম  (ভিজিট : ১৫৩)
প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেলেও দেশে নামে-বেনামে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে তার। ইতোমধ্যে ফ্রিজ করা হয়েছে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে তার ৬২ সহযোগীর নামে থাকা ৩ হাজার কোটি টাকা। সে আর কেউ নয়, অবৈধভাবে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদার। ফ্রিজ করা ৩ হাজার কোটি টাকা ছাড়াও আরও প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা তার সহযোগীদের অ্যাকাউন্টে রয়েছে বলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। এই ৭ হাজার কোটি টাকাও ফ্রিজ করা হচ্ছে শিগগিরই।
শুধু তাই নয়, পিকে কাÐে গ্রেফতারও হচ্ছে তার একের পর এক সহযোগী। আইনের বেড়াজালে ইতোমধ্যে ধরা দিয়েছে বান্ধবী অবন্তিকা বড়াল এবং মামাতো ভাই শঙ্খ বেপারি। বৃহস্পতিবার গ্রেফতার হয়েছে আরও দুই সহযোগী সুকুমার মৃধা এবং
মেয়ে অনিন্দিতা মৃধা। অপর অনত্যম দুই সহযোগী বাসুদেব ব্যানার্জি এবং পাপিয়া ব্যানার্জিকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হয়েছে ইতোমধ্যে। তারাও শিগগিরই গ্রেফতার হচ্ছেন বলে জানিয়েছে দুদক। সংস্থাটি বলছে, ছাড় পাব না অর্থ পাচার কাÐে জড়িত কেউই। ইন্টারপোলের সাহায্যে পিকে হালদার তো গ্রেফতার হবেনই তার সঙ্গে দেশে থাকা তার দোসরদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে।
দুদক সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সুকুমার মৃধা ও তার মেয়ে অনিন্দিতা মৃধাকে গ্রেফতার করেছে কমিশনের উপপরিচালক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। পিকে হালদারের সহযোগী হিসেবে যে পরিচিত ২৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সে তালিকায় রয়েছে সুকুমার মৃধা এবং তার মেয়ে অনিন্দিতা মৃধাও। দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে প্রমাণিত হয়েছে, পিকের অপর দুই সহযোগী বাসুদেব ব্যানার্জি ভুয়া কোম্পানির নামে ঋণ দেখিয়ে তার একাধিক হিসাবে জমা করেছেন ৭৬৪ কোটি টাকা, উত্তোলন করেছেন ৪৬২ কোটি টাকা। তার হিসাব থেকে ইতোমধ্যে ৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ফ্রিজ করা হয়েছে। একইভাবে তার স্ত্রী পাপিয়া ব্যানার্জি কয়েক বছরে ভুয়া কোম্পানির নামে ঋণ দেখিয়ে তার একাধিক হিসাবে জমা করেছেন ৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, উত্তোলন করেছেন ৩৪ কোটি। তাদের হিসাব থেকে ফ্রিজ করা হয় ৬১ লাখ টাকা। তাদেরও গ্রেফতারের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।
এর আগে গত ১৭ জানুয়ারি পিকে হালদার ও তার সহযোগীদের ৩ হাজার কোটি টাকা ফ্রিজ করা হয়। দুদক বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) মাধ্যমে ওই পরিমাণ টাকা ফ্রিজ করে। দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপপরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে থাকা ওই পরিমাণ টাকা ফ্রিজ করতে বিএফআইইউতে চিঠি দেন। তার চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে পিকে হালদার ও তার সহযোগীদের ওই পরিমাণ টাকা ফ্রিজ করা হয়। ৩০টি কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে জালিয়াতি করে ঋণের নামে আত্মসাৎ করা হয়েছিল ওই ৩ হাজার কোটি টাকা। তবে এই ৩ হাজার কোটি টাকার বাইরেও পিকে হালদারের বিরুদ্ধে দেশের অতিগুরুত্বপূর্ণ একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। প্রতারণা জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় ১০ হাজারে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এর মধ্যে ৩ হাজার কোটি টাকা ফ্রিজ করা হয়েছে। বাকি ৭ হাজার টাকাও তদন্তের ভিত্তিতে যেকোনো সময় ফ্রিজ করা হতে পারে বলে জানিয়েছে দুদক।
দুদকের অনুসন্ধান থেকে জানা গেছে, পিকে হালদার রিলায়েন্স ফিন্যান্সে এমডি থাকা অবস্থায় প্রভাব খাটিয়ে তার আত্মীয়স্বজনকে বেশ কয়েকটি লিজিং কোম্পানির ইন্ডিপেনডেন্ট পরিচালক নিযুক্ত করেছিলেন। একক কর্তৃত্বে কোনো এক অদৃশ্য শক্তির ছত্রছায়ায় পিপলস লিজিংসহ বেশ কয়েকটি লিজিং কোম্পানির টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি। এর মধ্যে পিপলস লিজিংয়ের আমানতকারীদের ৩ হাজার কোটি টাকা বিভিন্ন কৌশলে আত্মসাৎ করে কোম্পানিটিকে পথে বসিয়েছেন। কর্তৃত্ব খাটিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বিক্রি করেন। আমানতকারীদের শেয়ার সংক্রান্ত পোর্টফোলিও থেকেও শেয়ারও বিক্রি করা হয়। ৩০টি কোম্পানি ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ঋণের নামে আত্মসাৎ করা হয় ৩ হাজার কোটি টাকা।
দুদকের অনুসন্ধান থেকে জানা যায়, নওশেরুল ইসলাম ভুয়া কোম্পানির নামে ঋণ দেখিয়ে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, এফএএস লিজিং ও পিপলস লিজিং থেকে ২০১৫-২০১৯ সাল পর্যন্ত তার একাধিক হিসাবে জমা করেছেন ৩ হাজার ৫২০ কোটি টাকা। পরে উত্তোলন করেন ২ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা। তার ব্যাংক হিসাব থেকে ফ্রিজ করা হয় ৯৫২ কোটি টাকা। দুদকের জিজ্ঞাসাবাদের হাজির হওয়া বান্ধবী মমতাজ বেগম জানান, ভুয়া কোম্পানির নামে ঋণ দেখিয়ে কয়েক বছরে তার একাধিক হিসাবে জমা করেছেন ৪ কোটি টাকা, উত্তোলন করা হয় আড়াই কোটি টাকা। তার হিসাব ও তাদের হিসাব থেকে ফ্রিজ করা হয় ২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। পিকে হালদারের বন্ধু মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালক একেএম শহীদ রেজার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে ১০৪ কোটি টাকা ও অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের সাতটি ঋণ হিসাব থেকে ৩৩টি চেকের মাধ্যমে ওয়ান ব্যাংকের একটি শাখার গ্রাহক ব্যাংক এশিয়ার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইরফান আহমেদ খানের জে. কে ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের নামে পরিচালিত একটি হিসাবে ৭৪ কোটি টাকা সরিয়ে নিয়ে আত্মসাৎ করা হয়। শুধু তাই নয়, পিকে হালদারের ব্যক্তিগত একটি হিসাবে ১৫৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা জমা ও সমপরিমাণ উত্তোলনের তথ্য মিলেছে, যা একজন ব্যাংকারের স্বাভাবিক লেনদেন নয়।
পিকের দোসর হিসেবে অর্থ আত্মসাৎ কাÐে জড়িত থাকার তালিকায় আছেন আনান কেমিক্যালের এমডি অমিতাভ অধিকারী, বর্তমান পরিচালক ও চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দী, পরিচালক অনিতা করও (উজ্জ্বল কুমার নন্দীর স্ত্রী)। অমিতাভ অধিকারী পিকে হালদারের আপন খালাতো ভাই ও উজ্জ্বল কুমার নন্দী পিকে হালদারের পুরনো সহকর্মী। অন্যদিকে উজ্জ্বল কুমার নন্দী পিপলস লিজিংয়ের চেয়ারম্যান হিসেবে ও অমিতাভ অধিকারী পিপলস লিজিংয়ের পরিচালক হিসেবে ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তার সহযোগী ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক এমডি রাশেদুল ইসলাম, সাবেক সিএফও আবেদ হোসেন ও হেড অব বিজনেস আহমেদও সরাসরি জড়িত। তাদের সবার বিরুদ্ধে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে জানিয়েছে দুদক।
প্রসঙ্গত, পিকে হালদার ওরফে প্রশান্ত কুমার হালদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকা অবস্থায় বিভিন্ন ব্যক্তিকে ব্যবহার করে তিনি ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সরিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাতিয়েছেন প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। এসব অবৈধ উপার্জনের টাকা দেশ বিদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। তার বিরুদ্ধে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছে দুদক।





সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close