বিশিষ্ট সাহাবি হজরত জাবের (রা.) তাঁর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি এক ব্যক্তিকে দেখলাম। সবাই তাঁর নির্দেশ মতে চলছে। বিনা বাক্যে তাঁর কথা মেনে নিচ্ছে। তাঁর মুখ থেকে কোনো কথা বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সবাই তা পালন করছে। উপস্থিত লোকদেরকে জিজ্ঞাসা করলামÑ ইনি কে? তারা বলল, ইনি আল্লাহর রাসুল। আমি তাঁর কাছে গিয়ে দুবার বললামÑ ‘আলাইকাস সালাম ইয়া রাসুলুল্লাহ।’ তিনি বললেন, ‘আলাইকাস সালাম’ বল না। ‘আলাইকাস সালাম’ তো মৃতদের জন্য অভিবাদন বাণী। তুমি বল ‘আসসালামু আলাইকা।’ তারপর রাসুল (সা.) বললেন, ‘আমি সেই আল্লাহর রাসুল, যে আল্লাহকে যদি তুমি কোনো বিপদের সময় ডাক, তা হলে তিনি তোমার বিপদ দূর করে দেন। আমি সেই আল্লাহর রাসুল, যদি তুমি দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত হয়ে তার কাছে প্রার্থনা কর, তা হলে তিনি তোমার জন্য জমিন থেকে ফসল উৎপাদন করেন। আমি ওই আল্লাহর রাসুল, কোনো গাছপালাবিহীন জনশূন্য মরুভূমিতে তোমার বাহন হারিয়ে গেলে তুমি যখন তার নিকট দোয়া কর, তা হলে তিনি তোমার বাহন তোমার কাছে ফিরিয়ে দেন।’ হজরত জাবির (রা.) বুঝে নিলেন এবং ঈমান গ্রহণ করলেন। তারপর রাসুলুল্লাহকে (সা.) বললেন, ‘আমাকে বিশেষ উপদেশ দান করুন।’ তখন রাসুল (সা.) তাকে (পাঁচটি উপদেশ দিয়ে) বললেনÑ
গালিগালাজ করবে না : কোনো মানুষকে কোনো প্রকারের গালি দেওয়া যাবে না। এমনকি কোনো অমুসলিমকেও নয়। অন্যদেরকে গালি দিলে সেও আমাকে গালি দেবে। অন্য ধর্মের কোনো ব্যক্তিকে গালি দিলে সেও আমার ধর্মের পবিত্র বিষয় নিয়ে গালি দেবে। তাই সতর্কতা কাম্য। সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা।
ভালো কাজকে তুচ্ছ মনে করবে না : আল্লাহ ছোট আমলেরও অনেক বড় প্রতিদান দেন। হাশরের মাঠে সামান্য একটা নেকির জন্য মানুষ পেরেশান হয়ে ছোটাছুটি করতে থাকবে। হাদিসে এসেছে, বনি ইসরাঈলের এক নারী একটি ক্ষুধার্ত কুকুরকে পানি পান করিয়েছিল। এর বিনিময়ে তার পাপের পরিমাণ অনেক হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের ফয়সালা করেছেন। তাই নফল, মুস্তাহাব ও সুন্নত আমলও খুব গুরুত্বের সঙ্গে আদায় করা।
হাসি মুখে কথা বলবে : অন্য এক হাদিসে এটাকে সদকা বলা হয়েছে। বর্তমানে এই সুন্নত কমে যাচ্ছে। হাসি মুখে কথা বলা যে সুন্নত ও সওয়াবের কাজ তা অনেকের জানাও নেই। হজরত জারির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-এর দিকে যতবার তাকিয়েছি ততবার তিনি মুচকি হাসি দিয়েছেন।
পোশাক পায়ের গোছার ওপরে রাখবে : লুঙ্গি, পায়জামা বা প্যান্ট পায়ের নিসফে সাক তথা অর্ধ নলা পর্যন্ত উঁচু রাখা। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তা যদি মানতে না চাও, তা হলে টাখনু পর্যন্ত ঝুলাতে পার। টাখনুর নিচে লুঙ্গি ঝুলিয়ে পরা থেকে দূরে থেক। কেননা, এতে অহঙ্কার জন্মায়। আর নিশ্চয় আল্লাহ অহঙ্কারকে পছন্দ করেন না।’
অন্যকে লজ্জা দেবে না : হাদিসের শেষের দিকে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যদি কেউ তোমাকে গালি দেয় অথবা এমন দোষ ধরে তোমাকে লজ্জা দেয়, যা তোমার মধ্যে বাস্তবেই আছে এবং সে ওটা জানে, তা হলে তুমি তার এমন দোষ ধরে তাকে লজ্জা দিও না, যা তার মধ্যে বাস্তবে আছে এবং তুমি তা জান। যেহেতু তার কুফল তার ওপরই বর্তাবে।’ (আবু দাউদ : ৪০৮৪; তিরমিজি : ২৭২১)