সবুজ অরণ্যের বান্দরবান ছুটির দিনে অগণিত পর্যটকের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে। চারদিকে উঁচু-নিচু পাহাড় আর পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে সৌন্দর্য লুকানো পার্বত্য জেলা বান্দরবান। এই মৌসুমে ভোরে পাহাড়ি পথে বের হলেই পাহাড়ের ওপর থেকে নিচের দিকে তাকালে দেখা মিলবে কুয়াশার চাদর যেন পাহাড়ে লুকোচুরি খেলছে। আর কিছু স্থানে ঘন কুয়াশা ভেসে যাচ্ছে এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে। প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে সাপ্তাহিক দুদিন ছুটি আর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের একদিনের ছুটি মিলিয়ে টানা তিন দিনের ছুটিতে পর্যটকদের পদচারণায় এখন মুখর পাহাড়িকন্যা বান্দরবান।
বান্দরবানের অন্যতম দর্শনীয় স্থান হলোÑ মেঘলা, নীলাচল, নীলগিরি, স্বর্ণজাদি, রামজাদি, শৈল প্রপাত, বন প্রপাত, শীলবান্ধা ঝরনা, দেবতাকুম, চিম্বুক, শুভ্রনীলা, থানচির রেমাক্রি, নাফাকুম, রুমার বগালেক, কেউক্র্যাডং, লামার মিরিঞ্জা ও আলীকদমের আলীর সুড়ঙ্গসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পট।
শুক্র ও শনিবার বান্দরবানের পর্যটন স্পটগুলো ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পর্যটকরা মেঘলা, নীলাচল, শৈলপ্রপাত ও চিম্বুকে ভিড় করছেন। তবে বান্দরবান থেকে সবচেয়ে কাছের পর্যটন স্পট মেঘলা, নীলাচলে সন্ধ্যার দিকে পর্যটকদের এতই ভিড় যে, সেখানে তিল পরিমাণ ফাঁকা জায়গা নেই। বাড়তি সময় নিয়ে আসা পর্যটকদের কেউ কেউ ছুটে যায় দর্শনীয় স্থান থানচির নাফাকুম ও আমিয়াকুম রেমাক্রিতে।
সপরিবারে ঢাকার মিরপুর থেকে বেড়াতে আসা মো. মাজহারুল ইসলাম জানান, করোনার টিকা গ্রহণের পর মনের ভয় কাটিয়ে এই তিন দিনের ছুটিতে পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছি।
আরেক পর্যটক চট্টগ্রাম আন্দরকিল্লা থেকে বেড়াতে আসা পিয়াসু পাল জানান, সকালে স্বর্ণমন্দির, শৈল প্রপাত, নীলগিরি আর এখন মেঘলা পর্যটন স্পটে ঘুরতে এসেছি। তবে নীলগিরি যাওয়ার পথে পাহাড়িদের জীবন-বৈচিত্র্য আর মাচাংঘর আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে।
মা-বাবার সঙ্গে ঘুরতে আসা ছোট মামুনি মণি পাল। তার ভাষায় ব্যক্ত করেছে অনেকদিন পর মা-বাবার সঙ্গে ঘুরতে বের হয়েছি। অনেক জায়গায় ঘুরেছি। এই মেঘলাতে ক্যাবল কার, নৌকায় চড়েছি এবং চিড়িয়াখানা দেখেছি। তবে আসার পথে ঝুলন্ত ব্রিজে যখন পা দিলাম এদিক-সেদিক নড়াচড়া করতে থাকায় ভয় লাগছিল। মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার সুকুমার চাকমা জানান, শুক্র ও শনিবার দুদিনে ৬ হাজারেরও বেশি টিকেট বিক্রি হয়েছে। অনেক মাস পর পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটকের ভিড় দেখা যাচ্ছে।
জেলার আবাসিক হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম জানান, করোনার কারণে দীর্ঘ প্রায় ৫ মাস ধরে সবধরনের পর্যটনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হোটেল-মোটেল বন্ধ ছিল। দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় এই কয়েকদিন টানা ছুটিতে বান্দরবানে পর্যটকরা ভিড় করছেন। কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে।
বান্দরবান জেলা জোন ইনচার্জ ট্যুরিস্ট পুলিশ মোহাম্মদ আমিনুল হক জানান, জেলা প্রশাসন থেকে ট্যুরিস্টদের ভ্রমণকালে যেকোনো নিরাপত্তাজনিত সমস্যায় আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে, আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। তা ছাড়া কয়েকটি পর্যটন স্পট সিসি ক্যামেরা দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হয়।