ই-পেপার শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪

ভুয়া এনআইডিতে ব্যাংক ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৪ মার্চ, ২০২১, ১০:০৯ পিএম আপডেট: ০৩.০৩.২০২১ ১০:৩৩ পিএম  (ভিজিট : ১৪৪)
ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), ট্রেড লাইসেন্স ও টিন সার্টিফিকেট জালিয়াতি করে ফ্ল্যাট মালিক কিংবা ক্রেতা সেজে ব্যাংক লোন নিয়ে প্রতারণা করত একটি চক্র। দীর্ঘদিন তারা এমন কাজ করে আসছিল। অবশেষে চক্রটির পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। মঙ্গলবার খিলগাঁও ও রামপুরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতাররা হলোÑ আল-আমিন ওরফে জমিল শরীফ, খ ম হাসান ইমাম ওরফে বিদ্যুৎ, আব্দুল্লাহ আল শহীদ, রেজাউল ইসলাম ও শাহজাহান। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়েছে।
ডিবি জানিয়েছে, এ ঘটনার পর প্রমাণ পেয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র পরিবর্তন করে তাদের এই জালিয়াতির কাজে সহায়তা করায় বিভিন্ন সময়ে নির্বাচন কমিশনের ৪৪ জনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ পর্যন্ত চক্রটি ১১টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এমন প্রতারণা করেছে। ভুয়া এনআইডি, টিনসহ অন্যান্য তথ্য জালিয়াতির মাধ্যমে ঢাকা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে গত বছরের ডিসেম্বরে খিলগাঁও ও পল্টন থানায় মামলা হয়। সেই মামলা তদন্ত করতে গিয়ে ডিবির মতিঝিল বিভাগ এসব তথ্য পায়। বুধবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার।
তিনি জানান, এমন জালিয়াতির পর মামলা হলে তদন্ত করতে গিয়ে নির্বাচন কমিশনের কয়েকজন কর্মচারীর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। এরপর ২৮ ফেব্রুয়ারি বিপ্লব নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে ১ মার্চ তাকে আদালতে তোলা হলে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশ প্রতারকচক্রের মূল হোতা আল-আমিনকে গ্রেফতার করে। আল-আমিনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর প্রতারণার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন লোকের সন্ধান পাওয়া পায় ডিবি। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বিদ্যুৎকে গ্রেফতার করা হয়।
ডিবি জানায়, প্রতারক বিদ্যুৎ ও আল-আমিন তাদের অন্য সহযোগীদের প্রয়োজন অনুযায়ী কখনও ক্রেতা আবার কখনও বিক্রেতা, কখনও জমির মালিক, কখনও ফ্ল্যাটের মালিক সেজে প্রতারণা করত আব্দুল্লাহ আল শহীদ ভুয়া এনআইডি তৈরির মিডলম্যান হিসেবে কাজ করত। রেজাউল ইসলাম ও শাহ জাহান ভুয়া ট্রেড লাইসেন্স ও টিন সার্টিফিকেট তৈরি করেন।

যেভাবে চলত প্রতারণা : প্রতারকচক্রটি বড়ই চতুর। তারা ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার জন্য প্রথমে ব্যাংকে যেত। সেখানে গিয়ে ফ্ল্যাট কেনার নামে লোন চাইত। এরপর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কোন ফ্ল্যাট কেনা হবে তা তারা ভিজিট করবেন বলে জানাতেন। প্রতারকরা আগে থেকেই সব ঠিক করে রাখত। ব্যাংকের লোকদের তারা ভুয়া সাইনবোর্ড দেখাত। তা দেখে ব্যাংকের লোকরা ভাবত সব ঠিক আছে। এই কাজ শেষে তারা ফ্ল্যাট মালিকের কাছে ফ্ল্যাট সংক্রান্ত কাগজপত্র ও তার জাতীয় পরিচয় চাইত। সরল বিশ^াসে মালিক এনআইডি দিলে তা নিয়ে তারা নির্বাচন কমিশনে চলে যেত। সেখানে আগে থেকে ঠিক রাখা কয়েকজন কর্মচারী এনআইডিতে ছবি পাল্টিয়ে তাদের ছবি বসিয়ে দিত। এরপর সার্ভারে ওই ব্যাংকের কর্মকর্তারা প্রবেশ করলেই তাদের ছবি সংবলিত এনআইডি দেখতে পেত। এরপর ব্যাংকের লোকেরা তাদের অফিস ভিজিটের জন্য যেত। তারা আগে থেকেই দুই-এক মাসের জন্য ভাড়া নেওয়া অফিসটি সাজিয়ে গুছিয়ে রাখত। সব ঠিক থাকায় ব্যাংকের কর্মকর্তারাও তাদের ঋণ দিত। কিন্তু ঋণ নেওয়ার পরই তারা আর কিস্তি পরিশোধ করত না। এভাবে চক্রটি প্রায় ৪০ কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করেছে। এই জালিয়াতিতে নির্বাচন কমিশনের ৪৪ জন পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করেছে বলে প্রমাণ মিলেছে। যদিও তাদের বরখাস্ত করেছে কমিশন। এ ঘটনায় গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে খিলগাঁও ও পল্টন থানায় পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে।






সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close