ই-পেপার বিজ্ঞাপনের তালিকা বৃহস্পতিবার ৮ জুন ২০২৩ ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
ই-পেপার বৃহস্পতিবার ৮ জুন ২০২৩
http://www.shomoyeralo.com/ad/Amin Mohammad City (Online AD).jpg

শিশু সুরক্ষায় বঙ্গবন্ধু
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: বুধবার, ১৭ মার্চ, ২০২১, ১০:১৮ পিএম আপডেট: ১৬.০৩.২০২১ ১০:৫৫ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ  Count : 3944

শিশুদের খুবই ভালোবাসতেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কোনো অনুষ্ঠানে গিয়ে শিশুদের দেখলে কাছে টেনে আদর করতেন। তিনি বিশ^াস করতেনÑ আজকের শিশুরাই আগামীর ভবিষ্যৎ। তাই শিশুরা যেন সৃজনশীল, মননশীল এবং মুক্ত মনের মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে, তিনি সবসময় সেটাই চাইতেন। ১৯৬২ সালে যখন তিনি বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেননি তখনও শিশুদের নিয়ে ভাবতেন, শিশু-কিশোরদের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে শিশুদের সান্নিধ্য উপভোগ করতেন। সুতরাং শিশুদের নিয়ে সবসময় ভাবতেন তিনি। সে ভাবনা থেকেই বঙ্গবন্ধু শিশুদের কল্যাণে ১৯৭৪ সালের ২২ জুন ‘জাতীয় শিশু আইন’ (চিলড্রেন অ্যাক্ট) জারি করেন। এই আইনের মাধ্যমে শিশুদের নাম ও জাতীয়তার অধিকারের
স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শিশুর শিক্ষার বিষয়ে ছিলেন খুবই সচেতন। এ জন্য স্বাধীনতা পরবর্তী যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে যখন মানুষের তিনবেলা খাবারের ব্যবস্থা করাই দুরূহ কাজ এবং রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অবস্থাও যখন নাজুকÑ সে সময় প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৩ সালে প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করে ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারি করেন তিনি। স্বল্প সময়ের মধ্যে ১১ হাজারের বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের কাজও করেছিলেন।
লেখাপড়ার পাশাপাশি শিল্প-সংস্কৃতির চর্চার মধ্য দিয়ে শিশুর বিকাশে বঙ্গবন্ধু মনোযোগী ছিলেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান লাকী ইনাম। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন এ দেশের শিশুরা শিল্প-সংস্কৃতি নিয়ে বাঁচুক। পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে তারা শিল্প-সংস্কৃতির চর্চা করতে করতে বড় হোক। উনি এতটাই সংস্কৃতিমনা ছিলেন যে, উনি চাইতেন শিশুরা হাসবে, গাইবে, ছবি আঁকবে, গল্প লিখবে। শিশুরা হেসে-খেলে বড় হবে এবং এজন্য উনি শিশুদের জন্য নির্দেশনাও দিতেন স্কুল বা সংগঠনগুলোতে। কচিকাঁচার মেলা বা তাঁর সময়ে যেসব সংগঠন ছিল, সেগুলোতে। উনি বলতেন, এগুলোর খুব ভালো কাজ হতে হবে। কারণ সংস্কৃতি চর্চা না করলে সত্যিকার অর্থে ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে উঠতে পারবে নাÑ এগুলো উনি বলতেন। এই যে মানুষটা শিশুদের জন্য সবসময় ভাবতেন, শিশুরাই ভবিষ্যৎÑ এটাই বঙ্গবন্ধু।
জানা যায়, ১৯৭৩ সালে প্রাথমিক শিক্ষাকে সম্পূর্ণভাবে জাতীয়করণের সিদ্ধান্ত নেন বঙ্গবন্ধু। প্রস্তাব করা হয়, প্রথম পাঁচশালা পরিকল্পনায় ১৯৭৩-৭৮ সালে দেশে ৫ হাজার নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় তৈরি হবে। ১৯৭৪ সালে কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন সুপারিশ করে, প্রাথমিক শিক্ষার মেয়াদ ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ৮ বছর করা হোক এবং ১৯৮৩ সালের মধ্যে এই ৮ বছরের প্রাথমিক শিক্ষা সার্বজনীন, বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক করা হবে। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের জন্য ‘দ্য প্রাইমারি স্কুল (টেকিং ওভার) অ্যাক্ট ১৯৭৪ প্রণয়ন করেন। এরপর প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়।
১৯৭২ সালের ২৬ জুলাই ড. মুহাম্মদ কুদরত-ই-খুদাকে সভাপতি করে শিক্ষা কমিশন গঠন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। কমিশনের রিপোর্টে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা দর্শনেরই প্রতিফলন ঘটে। যেখানে শিক্ষা খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা চালুর সুপারিশ করা হয়।
বঙ্গবন্ধু সব শিশুর অধিকার নিশ্চিতে কাজ করতেন। এজন্য স্বাধীনতা পরবর্তী তিনি দেশে যেসব যুদ্ধশিশু জন্ম নিয়েছিল তাদেরসহ বীরাঙ্গনাদের পুনর্বাসনে বঙ্গবন্ধু গঠন করেন বাংলাদেশ পুনর্বাসন বোর্ড। ঢাকার ধানমন্ডিতে যে পুনর্বাসন কেন্দ্রটি ছিল তা পরিচালনা করতেন বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব। ১৯৭২ সালজুড়ে অনেক যুদ্ধশিশুর জন্ম হয়। বঙ্গবন্ধু সরকার এ সময় বিশে^র নানা দেশে যুদ্ধশিশুদের দত্তকের ব্যবস্থা করেন। এর জন্য ১৯৭২ সালে তিনি একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেন।
বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তা বাংলাদেশের প্রতিটি শিশুর জন্য অনুকরণীয় আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ১৭ মার্চকে ‘জাতীয় শিশু দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ২০২০ সালের জাতীয় শিশু দিবস আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও মুজিব বর্ষের আয়োজনে। জাতি জাতির পিতার প্রতি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ।
মুজিব বর্ষে নারী-পুরুষ সমতাকে সুসংহত করার জন্য এবং দেশের ভবিষ্যৎ কাণ্ডারি শিশুদের গড়ে তুলতে সবাইকে একযোগে কাজ করার মানসিকতা ধারণ করতে হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নারী ও শিশুর জন্য যে অবদান রেখেছিলেন, তাকে নির্দেশনা হিসেবে দাঁড় করাতে পারলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় আদর্শ এক সমাজ গঠনের কাজ অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে।
শিশুর প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসার প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শিশুদের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অনেক গুরুত্ব দেন। তিনি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী হয়েও স্বাধীনতার পর কচিকাঁচার মেলার অনুষ্ঠানগুলোতে আসতেন। উনি যখন দ্বিতীয় বিপ্লবের জন্য বাকশাল করলেন, তখন কচিকাঁচার মেলা ও খেলাঘরকে একত্রিত করে দুটিকে সরকারি শিশু প্রতিষ্ঠান করা হয়। শিশুদের দিকে কতটা নজর ছিল যে, দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি বা বাকশাল ঘোষণার সময় এই দুটি প্রতিষ্ঠান যেহেতু প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক তাদের দিয়ে তিনি জাতীয় শিশু সংগঠন গড়ে দিয়েছেন। এসব পদক্ষেপের বাইরেও বঙ্গবন্ধুর শিশুদের প্রতি টান ছিল অনন্য। শিশুদের প্রতি তার সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ ছিল উল্লেখ করার মতো।
কেন বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনকে শিশু দিবস করা হলো : বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, যে শ্রম দিয়েছেন তা বাংলাদেশের প্রতিটি শিশুর জন্য অনুকরণীয় আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ১৭ই মার্চকে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনকে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালন করাকে তার কর্মের প্রতি সম্মান দেখানো হয়েছে। এ বিষয়ে শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান লাকী ইনাম বলেন, বঙ্গবন্ধু এমন একজন মানুষ, যাকে ছাড়া বাংলাদেশ কল্পনাও করা যায় না। তিনি যে ত্যাগ-তিতিক্ষা করেছেন, সাধারণ মানুষের জন্য ওনার ভালোবাসা অল্প বয়স থেকেই। তিনি অবিসংবাদিত নেতা। এ রকম একজন মানুষÑ বাংলাদেশ বলতে যাকে বোঝায় এবং শিশুরাই হচ্ছে জাতির ভবিষ্যৎ, তো এটা খুব রিলেটেড একটা ধারণা যে মানুষটির জন্মদিনকে আমরা শিশু দিবস হিসেবে কেন ভাবব না?
লেখক-অধ্যাপক নীলিমা ইব্রাহিম বঙ্গবন্ধু শিশুকিশোর মেলায় প্রথম এ প্রস্তাব দিয়েছিলেন জানিয়ে লাকী ইনাম বলেন, ‘নীতিগতভাবে আমি মনে করি, যেকোনো দেশের একজন নেতা যার নামে, যার কর্মে যার ত্যাগে একটি দেশের সৃষ্টি হয়, তার জন্মদিনকে শিশুদের সঙ্গে যুক্ত করা সবচেয়ে যুক্তিসঙ্গত।’




http://www.shomoyeralo.com/ad/Google-News.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড
এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫। ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com