ই-পেপার বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪
বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪

ব্যাংক কর্মকর্তা মোর্শেদ চৌধুরী আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলা
আট দিন পরেও আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে
প্রকাশ: শনিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২১, ৩:৪৬ পিএম  (ভিজিট : ১২৬৭)
ব্যাংক কর্মকর্তা আবদুল মোর্শেদ চৌধুরীর আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলার আসামিদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না। অভিযোগ উঠেছে, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপে মামলার আট দিন পরও আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন। কোন অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে আসামিরা গ্রেফতার হচ্ছেন না, তা নিয়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে।

এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘মামলা হলেই আসামি ধরতে হবে এমন বিধান নেই। তদন্ত হচ্ছে, শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মামলার আট দিনেও আসামি গ্রেফতার না হওয়া প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর আরও বলেন, ‘তদন্তে অপরাধী প্রমাণিত হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’ চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বিষয়টিকে অন্যভাবে দেখছেন। সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন চট্টগ্রাম জেলা সম্পাদক ও বিশিষ্ট মানবাধিকার সংগঠক অ্যাডভোকেট আকতার কবির চৌধুরী বলেছেন, ‘এমন মামলায় অপরাধী আসামির গ্রেফতার না হওয়া প্রশ্নবোধক। এর নেপথ্যে কোনো প্রিয় লোকের হাত আছে কি না তাও খতিয়ে দেখা দরকার।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা সংস্থার (ডিবি) ইন্সপেক্টর মাইনুর রহমান কোনো আসামির প্রকাশ্যে থাকার অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে এখন কিছুই খোলাখুলি বলা যাচ্ছে না। তবে গ্রেফতার অভিযান চলছে। বিভিন্ন স্থানে সোর্স লাগিয়ে খবর নেওয়া হচ্ছে।’

মোর্শেদ চৌধুরীর স্ত্রী ইশরাত জাহান চৌধুরী জানান, সুনির্দিষ্ট নাম উল্লেখ করা আসামিরাও এলাকায় প্রকাশ্যে ঘোরাঘুরি করছেন। নিজের নিরাপত্তাহীনতার কথাও উল্লেখ করলেন তিনি। ইশরাত জাহান চৌধুরী বলেন, ঘটনার নেপথ্যে জড়িতদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব দায়িত্বশীলদেরই।

কথিত লগ্নিকৃত টাকা ফেরত নেওয়ার অন্যায় দাবিতে চাপ প্রয়োগ, অত্যাচার ও নির্যাতনে মানসিক যন্ত্রণার কারণে আত্মহত্যায় বাধ্য হওয়ার অভিযোগ এনে করা হয় মামালাটি। আসামিদের সহযোগী হিসেবে হুইপপুত্র শারুন চৌধুরী ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আরশেদুল আলম বাচ্চুর নেতৃত্বে ব্যাংকার মোর্শেদের বাড়িতে সদলবলে হানা দেওয়া হয়েছিল বলেও অভিযোগ করেন ইশরাত। এর আগে সেই ঘটনায় একটি জিডিও হয়েছিল।

ইশরাতের অভিযোগ, ব্যবসায় পুঁজি খাটানোর জন্য নেওয়া প্রায় ২৫ কোটি টাকার বিপরীতে ৩৫ কোটি টাকা পরিশোধ সত্ত্বেও ব্যাংকার মোর্শেদ চৌধুরীকে উপর্যুপরি চাপ দেওয়া হচ্ছিল। হামলা-মামলা, নির্যাতন, ভয়ভীতি-হুঙ্কার দেওয়া হয় প্রকাশ্যেই। তার সবই পুলিশ প্রশাসনও জানত। পুলিশের মধ্যস্থতায় দুই পক্ষে বৈঠক হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চাপ সইতে না পেরে অপমানে ভয়ে আত্মহত্যা করেন মোর্শেদ চৌধুরী। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে সচেতন মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ জন্ম নিলেও আসামি কাউকেই এখনো ধরতে পারেনি পুলিশ।

এমন বাস্তবতায় চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, গ্রেফতার করতে পারছে না নাকি নেপথ্য শক্তির চাপে করছে না, তাও এখন খতিয়ে দেখার বিষয়। নগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের দাবি, দলীয় পরিচয়ের বাইরে গিয়ে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

এদিকে ব্যাংকার মোর্শেদ চৌধুরীর স্ত্রী ইশরাত জাহান ঘটনার যে বর্ণনা দিয়েছেন তাতে স্পষ্ট বোঝা যায় ঘটনাটিতে হুইপপুত্র নাজমুল হক চৌধুরী শারুনের সংযোগ আছে। ইশরাতের অভিযোগ, অপরাধীরা এখনো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আসামি পারভেজ ইকবালকে নিজ এলাকায় ইফতারি বিতরণে সক্রিয় দেখেছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে জানান ইশরাত। তিনি বলেন, ‘হুইপপুত্র শারুন ও সাবেক ছাত্রনেতা বাচ্চু সদলবলে বাসায় হামলা চালিয়ে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছিলেন এবং সে ঘটনার সূত্র ধরে পরে নির্যাতন, মানসিক চাপ প্রয়োগে জড়িত সবাইকেই এ মামলায় বিচারের আওতায় আনতে চাই।’ সঠিক তদন্তই নেপথ্যে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

ব্যাংক কর্মকর্তার আত্মহত্যার বিষয় নিয়ে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনেও তোলপাড় চলছে। নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নাগরিক কমিটির অন্যতম কর্ণধার অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন বাবুল বলছেন, দলীয় পরিচয়ের বাইরে গিয়ে আসামিদের ধরতে হবে। তিনি বলেন, ‘এ মামলায় তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধের সব উপাদান উদ্ঘাটন করতে হবে। কেন তিনি (মোর্শেদ) আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছিলেন, কেন বা কীভাবে তাকে প্ররোচিত করা হয়েছিল তার সত্যাসত্য তুলে এনে অপরাধীকে গ্রেফতার করতে হবে। অপরাধী যিনিই হোন তিনি সরকারদলীয় বা বিরোধীদলীয় প্রচলিত আইনেই তাকে শাস্তি দিতে হবে।’

উল্লেখ্য, গত ৭ এপ্রিল আত্মহত্যা করেন ব্যাংকার মোর্শেদ চৌধুরী। ৮ এপ্রিল তার স্ত্রী বাদী হয়ে আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলা করেন। এ মামলার আসামিরা হলেন চিটাগাং চেম্বারের সাবেক পরিচালক জাবেদ ইকবাল ও তার ভাই পারভেজ ইকবাল, নিকটাত্মীয় নইমুদ্দিন শাকিব ও কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা শহীদুল হক চৌধুরী রাসেল। এ মামলায় এদের সুনির্দিষ্ট আসামি করা হয়।




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close