ই-পেপার বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪

মৃত্যু, কবর ও হাশর
সৎ ও গুনাহগারের কবর কেমন হবে
প্রকাশ: শনিবার, ৮ মে, ২০২১, ১১:১৬ পিএম  (ভিজিট : ১৫১৩)
মানুষের মৃত্যু অবধারিত। এক দিন না এক দিন সবাই মৃত্যুবরণ করবে। মৃত্যুর পর মানুষ হবে কবর জগতের বাসিন্দা। তারপর এক দিন সবাইকে
হাশরের মাঠে পুনরুজ্জীবিত করা হবে। সেখানে দুনিয়ার কৃতকর্মের হিসাব-নিকাশ হবে, আল্লাহর আদালতে হবে ন্যায়বিচার। অতঃপর একদল
মানুষকে জান্নাতে পাঠানো হবে, অন্য দলকে নিক্ষেপ করা হবে জাহান্নামে। দৈনিক সময়ের আলোর পাঠকদের জন্য মানুষের মৃত্যুর বিবরণ, কবর
জগতের অবস্থা ও হাশরের বিচার সম্পর্কে কোরআন-হাদিসের আলোকে ধারাবাহিক লিখছেন আরিফ খান সাদ

মৃত্যুর পর থেকে শুরু হয় মানুষের অজানা এক নতুন অধ্যায়। কবরের অন্ধকার জগতে মাটির চাপ ও সওয়াল-জওয়াবের পর থেকে মহাপ্রলয় সংঘটিত হওয়ার আগ পর্যন্ত কবরবাসী কবরে শান্তি বা শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের হুকুম-আহকাম দুনিয়ার হুকুম-আহকামের সম্পূর্ণ বিপরীত। দুনিয়ার হুকুম-আহকামের সম্পর্ক শরীরের সঙ্গে। আর কবরের হুকুম-আহকামের সম্পর্ক হবে রুহের সঙ্গে। সুতরাং কবরের আজাব হবে রুহের ওপর। শরীরও তা অনুভব করবে। মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা হোক, হিংস্র প্রাণী বা সাগরের মাছ খেয়ে ফেলুক, মাটিতে মিশে যাক কিংবা তাকে আগুনে পুড়িয়ে ছাই বানিয়ে বাতাসে উড়িয়ে দেওয়া হোকÑ আজাব হবেই হবে। মৃত ব্যক্তির রুহ সেই আজাবের কষ্ট অনুভব করবে। শরীরও সে শাস্তির কষ্ট ভোগ করবে।
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিতÑ রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মৃত ব্যক্তিকে যখন কবরে রাখা হয়, অতঃপর তার সঙ্গীরা ফিরে যায়, এমনকি ওই মৃত ব্যক্তি তাদের চলন্ত অবস্থায় জুতার আওয়াজ শুনতে পায়। তখন তার নিকট দুজন ফেরেশতা আগমন করেন। তারপর তারা তাকে উঠিয়ে বসায় এবং জিজ্ঞাসা করে, মুহাম্মদ (সা.) কে? তখন মৃত ব্যক্তি মুমিন হলে বলে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, তিনি আল্লাহর বান্দা ও রাসুল। তখন তাকে বলা হয়, তুমি তোমার জাহান্নামের স্থানটি দেখে নাও। আল্লাহ তায়ালা এটাকে জান্নাতের বিনিময়ে তোমার জন্য পরিবর্তন করে দিয়েছেন। নবীজি (সা.) বলেন, তখন সেই ব্যক্তি উভয় স্থানটি দেখতে পায়। আর যদি মৃত ব্যক্তি কাফের বা মুনাফিক হয়, তা হলে সে বলতে থাকে, আমি কিছুই জানি না। লোকেরা যা বলত আমিও তা বলতাম। তখন তাকে বলা হয় তুমি কিছুই জানার চেষ্টা করনি এবং কিছুই পড়নি। তারপর লোহার হাতুড়ি বা মুগুর দিয়ে তার ঘাড়ে আঘাত করা হয়, ফলে সে এত জোরে চিৎকার করে যে, জিন ও মানবজাতি ছাড়া আশপাশের সবাই তা শুনতে পায়।’ (বুখারি : ১২৭৩)
কবরের আজাব মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের বিষয়। আর মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের বিষয়াদি যেহেতু দুনিয়ার জীবনের বিপরীত, তাই কবরের আজাব জীবিতরা দেখতে পায় না, শুনতে পায় না, অনুভব বা অনুমানও করতে পারে না। এমনকি দুজন মানুষকে একই কবরে পাশাপাশি রাখা হলেী সেখানে একজনের আজাব হলে এবং অন্যজন আরামে থাকলে তাদের একজন অন্যজনের অবস্থা জানতে পারে না। যেমন পাশাপাশি দুজন ঘুমন্ত ব্যক্তি স্বপ্ন দেখলে একজনের স্বপ্ন অন্যজন জানতে পারে না। তার কাছের জাগ্রত ব্যক্তিরাও তা দেখে না। জাগ্রত হয়ে সে যখন স্বপ্নের কথা বলে, অন্যরা তা বিশ^াস করে। ঘুমন্ত অবস্থায় কেউ যদি স্বপ্নে দেখে যে, তাকে পেটানো হচ্ছে এবং সে যদি চিৎকার করে, সেই চিৎকার তার পাশের লোকরা শুনতে পায় না। অথচ ঘুমন্ত ব্যক্তি আসলেই কষ্ট পায় এবং জাগ্রত হয়েও সে কষ্ট অনুভব করে। অনেকেই আবার ঘুমন্ত অবস্থায় সুন্দর দৃশ্য অবলোকন করে শান্তি অনুভব করে। এটি কেউ অস্বীকার করে না। কবরের আজাব ও নেয়ামতের বিষয়টিও এমন হবে।
কবরে সৎ ও গুনাহগার ব্যক্তির অবস্থা কেমন হবে তা একটি হাদিসে চিত্রিত হয়েছে। হজরত বারা ইবনে আজিব (রা.) থেকে বর্ণিতÑ আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, সৎ ব্যক্তি কবরে সওয়াল-জওয়াবে উত্তীর্ণ হওয়ার পর আসমান থেকে ঘোষণা করা হয়Ñ এই বান্দার জন্য জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও এবং তাকে জান্নাতের পোশাক পরিয়ে দাও। তার জন্য জান্নাতের একটি দরজা খুলে দাও, যেন সে জান্নাতের বাতাস ও সুঘ্রাণ পেতে পারে। ফলে তার কবর দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত প্রশস্ত করে দেওয়া হয়। একজন সুন্দর
আকৃতি ও উজ্জ্বল চেহারাবিশিষ্ট লোক উত্তম পোশাক পরিহিত অবস্থায় এবং সুঘ্রাণে সুরভিত অবস্থায় তার কাছে আগমন করেন এবং বলেন, তুমি খুশি হয়ে যাও। তোমার সঙ্গে যে ওয়াদা করা হয়েছিল তা আজ পূর্ণ করা হবে। সৎ লোক তাকে জিজ্ঞেস করে, আপনি কে? তিনি বলেন, আমি তোমার সৎ আমল। তখন সৎ লোকটি বলেন, হে আল্লাহ! আপনি এখনই কেয়ামত সংঘটিত করুন! আমি আমার পরিবারের সঙ্গে মিলিত হতে চাই। তখন তাকে বলা হয়, তুমি এখানে আরামে ও স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করতে থাক। তোমার কোনো চিন্তা ও ভয় নেই।’ অন্যদিকে অবিশ^াসী ও গুনাহগার লোকদের উদ্দেশে কবরে ঘোষণা করা হয়, এই লোককে জাহান্নামের পোশাক পরিয়ে দাও, তার জন্য জাহান্নামের বিছানা বিছিয়ে দাও এবং তার জন্য জাহান্নামের দরজা খুলে দাও। যাতে তার কাছে জাহান্নামের গরম বাতাস ও তাপ পৌঁছতে পারে। তার কবর অতি সঙ্কীর্ণ করে দেওয়া হয়। মাটি তাকে এমনভাবে চেপে ধরে যাতে তার এক পাশের হাড় অন্য পাশে ঢুকে যায়। অতঃপর কালো চেহারাবিশিষ্ট, কালো পোশাক পরিহিত ও দুর্গন্ধযুক্ত এক ভয়ানক আকারের লোক এসে বলতে থাকেÑ তুই দুঃখের সংবাদ গ্রহণ কর। ধ্বংস হোক তোর! আজ তোর সেই দিন যার অঙ্গীকার তোর সঙ্গে করা হয়েছিল। তখন কাফের ও গুনাহগার লোকটি বলে, তোমার পরিচয় কী? তোমার চেহারা দেখেই মনে হচ্ছে তুমি কোনো দুঃখের সংবাদ নিয়ে এসেছ! উত্তরে লোকটি বলে, আমি তোর সেই খারাপ আমল, যা তুই দুনিয়ায় করেছিলি। আল্লাহর শপথ করে বলছি, তুই ছিলি আল্লাহর আনুগত্যের কাজে গাফেল এবং আল্লাহর নাফরমানিতে অগ্রগামী। অতঃপর তার কবরে একজন বোবা ও বধির ফেরেশতা পাঠানো হয়। তার হাতে থাকে লোহার এমন একটি হাতুড়ি, সেটা দিয়ে যদি কোনো কঠিন পাহাড়ে আঘাত করা হতো তা হলে ওই পাহাড়
চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে ধুলায় পরিণত হয়ে যেত। তা দিয়ে তাকে এমন জোরে প্রহার করা হয় যাতে সে মাটির সঙ্গে মিশে যায়। আল্লাহ তাকে পুনরায় জীবিত করেন। ফেরেশতা আবার তাকে আঘাত করেন। সে এমন প্রকটভাবে চিৎকার করতে থাকে যার আওয়াজ জিন-ইনসান ছাড়া সব সৃষ্টিজীবই শুনতে পায়। অতঃপর তার জন্য জাহান্নামের দরজা খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের বিছানা বিছিয়ে দেওয়া হয়। কেয়ামতের দিন যেহেতু তার জন্য আরও কঠিন আজাব রয়েছে তাই সে বলে, হে আল্লাহ! কেয়ামত যেন না হয়! (মুসনাদে আহমাদ : ১৮৫৫৭)
আগামী শনিবার পড়ুন :
‘কবরে মানুষ কতদিন থাকবে’







সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close