ই-পেপার শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

বোরোর ভালো ফলনে খুশি কৃষক
প্রকাশ: বুধবার, ১২ মে, ২০২১, ১২:০০ এএম  (ভিজিট : ১৬২)
এবার সারা দেশে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ঝড়-বৃষ্টির আগেই কাটা সম্ভব হয়েছে সিংহভাগ ধান। নিশ্চিত করা হয়েছে ধানের ন্যায্যমূল্য। সব মিলিয়ে কৃষকদের মধ্যে বিরাজ করছে আনন্দের আমেজ। অনুকূল আবহাওয়া, সার-বীজ বিতরণ, সরকারি প্রণোদনা প্রদানসহ প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ায় চলতি মৌসুমে বোরো ধানের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। আমাদের প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরÑ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : করোনাকালে নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে ধানের বাম্পার ফলন এবং সঠিক সময়ে ধান কেটে বাড়িতে নিতে পাড়ায় কৃষকদের মধ্যে এখন আনন্দের আমেজ বইছে। ইতোমধ্যে জেলায় ৯২ শতাংশ জমির শস্য কর্তন করা হয়েছে। কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, এ বছর জেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৮৮৫ হেক্টর; কিন্তু আবাদ হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৮৯৬ হেক্টরে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ১১ হেক্টর বেশি। কৃষি বিভাগের মতে, কৃষককে বোরো আবাদের জন্য উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে এ বছর বোরো আবাদের এলাকার বৃদ্ধি হয়েছে। উদ্যোগগুলোর মধ্যে ছিলÑ বোরো আবাদ মৌসুমে বীজ, সার, পানি ইত্যাদি উপকরণ নিশ্চিত করা, সরকারি পুনর্বাসন ও প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ৩ হাজার ৮শ কৃষককে ১ বিঘা করে বোরো আবাদের উপকরণ সার ও বীজের সহায়তা প্রদান। ফোর লেন কাজের জন্য সবুজ প্রকল্পের পানিপ্রবাহ ব্যাহত হওয়ায় ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়লেও সব পক্ষের সহায়তায় বিএডিসি সেচ প্রকল্পের পানি সরবরাহ নিশ্চিতের মাধ্যমে বোরো আবাদ এলাকা ঠিক রাখা হয়েছিল। এ ছাড়াও ৩৫ হাজার কৃষককে ২ কেজি করে ৭০ হাজার কেজি বীজ বিনামূল্যে সহায়তা প্রদান, বিভিন্ন বীজ কোম্পানি যেমনÑ সুপ্রীম সিড, বায়ার ১ কেজি করে দেড় হাজার কৃষককে বিনামূল্যে হাইব্রিড বীজ বিতরণ। এদিকে জেলার কসবা উপজেলায় ৫০ একর জমিতে সমালয়ে প্রদর্শনী স্থাপন করা হয়। যেখানে কৃষকরা যন্ত্রের ব্যবহার ও হাইব্রিড আবাদের মাধ্যমে ফলন বৃদ্ধির কৌশল হাতে-কলমে করতে পেরেছে। এবার বোরোর আবাদ এলাকা বৃদ্ধির পাশাপাশি ফলন বৃদ্ধিতেও বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এতে করে বোরোর বাম্পার ফলন হয়। বর্তমানে ধানের বাজারমূল্য নিয়েও কৃষকরা বেশ খুশি। প্রতিমণ কাঁচা ধান ৮০০ থেকে ৮৫০ এবং শুকনা ধান ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। ইতোমধ্যে সরকারিভাবে ধান ক্রয়ের জন্যও লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে।
এ বছর জেলায় ১৪ হাজার ৭১৬ মেট্রিক টন ধান সরকারিভাবে ক্রয় করা হবে। গত ১ মে আনুষ্ঠানিকভাবে জেলার নবীনগরে ধান ক্রয় কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে প্রতিমণ ১০৮০ টাকা দরে। এতে করে কৃষক পর্যায়ে এবার ধানের সঠিক মূল্যও নিশ্চিত হবে বলে আশা কৃষি বিভাগের। এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. রবিউল হক মজুমদার জানান, কৃষক ও কৃষির উন্নয়নে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষি বিভাগ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। সরকারিভাবে কৃষকদের জন্য যখন যে সুবিধা আসছে আমরা তা নিশ্চিত করছি। সার, বীজ বিতরণ থেকে শুরু করে ধানের ফলন বৃদ্ধি ও ধান কেটে ঘরে তোলা পর্যন্ত আমরা কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করছি। চলতি মৌসুমে বোরো ধানের আবাদ ও ফলন বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকরা আনন্দিত।
নেত্রকোনা : আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় নেত্রকোনার বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে। এ ছাড়াও ধানের ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও জেলা কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতায় বাম্পার ফলন হয়েছে বলে জানায় কৃষকরা। জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় ১ লাখ ৮৫ হাজার ২৫৩ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। অর্জিত হয়েছে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৯৮০ হেক্টরে। তবে গরম বাতাস ও শিলাবৃষ্টিতে ৭ হাজার ৪৪০ হেক্টর জমি নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়াও চালের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৬৪ হাজার ৪৯৩ মেট্রিক টন।
কিশোরগঞ্জ : উজানে অতিবৃষ্টির আশঙ্কা, লু হাওয়ার হানাসহ নানা ঝক্কি-ঝামেলার পর শেষ পর্যন্ত অনুকূল আবহাওয়ায় কোনো ধরনের দুর্যোগ-দুর্বিপাক ছাড়াই ভালোয় ভালোয় শেষ হয়েছে কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন হাওরের ধান কাটা। ঝড়ের সময় লু হাওয়ায় বি-আর২৯ জাতের ধান কিছুটা নষ্ট হলেও সব মিলিয়ে বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি বিভাগ বলছে, সঠিক তদারকি ও ধান কাটায় যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ানোয় নির্ধারিত সময়ে ক্ষেতের ধান কাটা সম্ভব হয়েছে। আর হাওরে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায় সহজেই কৃষক তার জমির ফসল ঝাড়াই-মাড়াই শেষে বাড়িতে নিয়ে আসতে পেরেছে।
এদিকে সরকারি খাদ্যগুদামে ধান কেনা এখনও পুরোপুরি শুরু হয়নি। এবার মৌসুমের শুরুতে বাজারে ধানের দাম বেশি থাকায় সরকারি ক্রয়কেন্দ্রে ধান বিক্রিতে কৃষকদের খুব একটা আগ্রহ নেই। তবে চলতে সপ্তাহে ধানের দাম কিছুটা কমেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার পর্যন্ত কিশোরগঞ্জে ৯৯ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়ে গেছে। এখন চলছে মাড়াই-ঝাড়াই শেষে পরিবহন। আবহাওয়া ভালো থাকায় অনেক কৃষক হাওরে থেকেই ধান শুকিয়ে বস্তাবন্দি করে বাড়িতে নিয়ে আসছে। হাওরের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত করিমগঞ্জ উপজেলার চামড়া নৌবন্দরে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আসছে হাজার হাজার মেট্রিক টন ধান। এ ছাড়া হাওরের বিভিন্ন নদীতে পাঁচটি ফেরি চালু হওয়ায় বালিখোলা, বাজিতপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়কপথে ধান পরিবহন করা হচ্ছে।
কৃষকরা জানান, নানা ঝক্কি-ঝামেলার পরও এবার বোরো ধানের ফলন হয়েছে বাম্পার। গত মাসে আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাস ছিল, উজানে অতিবৃষ্টি হতে পারে। তাই ধান কাটা নিয়ে অন্য সবার মতো সংশয় ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত ভালোয় ভালোয় সময়মতো ধান কেটে নিরাপদে নিয়ে আসতে পারায় খুশি কৃষকরা। দুর্যোগ-দুর্বিপাক ছাড়াই সময়মতো কষ্টে বোনা ফসল ঘরে তুলতে পেরে হাওরের হাজার হাজার কৃষকের মুখে তৃপ্তির হাসি।
এদিকে ধানের দাম ভালো থাকায় খুশি কৃষক। ধান বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৭শ’ থেকে সাড়ে ৯শ’ টাকায়। বাজারে দাম বেশি থাকায় সরকারি গুদামে ধান দিতে খুব বেশি আগ্রহ নেই কৃষকের। বর্তমানে বাজারে বিআর২৮ জাতের শুকনো ধান ৯শ’ থেকে সাড়ে ৯শ’, বিআর২৯ ৮শ’ থেকে সাড়ে ৮শ’ এবং হিরা জাতের ধান ৭৫০ থেকে ৮শ’ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম জানান, অ্যাপস এবং লটারির মাধ্যমে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনা শুরু হয়েছে। এবার জেলায় ২৩ হাজার ৩৪৬ মেট্রিক টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর করোনা মহামারিতে হাওরের ধান কাটা নিয়ে বিপাকে পড়ে কৃষক। এ অবস্থায় অন্য জেলা থেকে প্রশাসনের উদ্যোগে ধান কাটার শ্রমিক আনা হয়। ছাত্রী লীগ, যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে কৃষকদের জমির ধান কেটে দেওয়া হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. ছাইফুল আলম জানান, গত বছরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবার যন্ত্রের সাহায্যে ধান কাটায় কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। কাস্তে দিয়ে ধান কাটার পাশাপাশি সরকারের ৭০ ভাগ ভর্তুকিতে দেওয়া কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে ধান কাটা হয়। কৃষি বিভাগের উদ্যোগে ১৩০টি কম্বাইন হারভেস্টার ও ৫০টি রিপার দিয়ে ধান কাটায় দ্রুত শেষ হয়েছে হাওরের ধান কাটা।
একই এলাকার কৃষক মনির হোসেন জানান, ধানের ভালো ফলন ও ন্যায্য দাম পাওয়ায় আমরা খুশি। সরকারি ধান সংগ্রহের সময় প্রকৃত কৃষকরা যাতে সরকারি গুদামে ধান দিতে পারে সেদিকে কৃষি কর্মকর্তার কাছে অনুরোধ রইল। প্রকৃত কৃষকরা যাতে তালিকাভুক্ত হয় সে ব্যাপারে সরকারের কাছে আহ্বান রইল।






সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close