যেসব কলেজ শিক্ষকদের বেতন দিচ্ছে না, সেগুলোর অধিভুক্তি বাতিল করা হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান।
তিনি বলেছেন, প্রত্যেক শিক্ষকের বেতন কলেজ থেকে দেওয়া হবে বলে কলেজ প্রতিষ্ঠার সময় অঙ্গীকারপত্র জমা থাকে। কিন্তু অনেক কলেজ নিয়মিত বেতন-ভাতা দিচ্ছে না। এ বিষয়ে প্রতিটি কলেজে চিঠি দিয়েছি, যেসব কোর্সের শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হচ্ছে না, ওই বিষয়ের কোর্সটির অধিভুক্তি বাতিল করা হবে। শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি মোরসালীন নোমানি ও সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত এই উপাচার্য বলেন, এ বিষয়ে প্রতিটি কলেজে চিঠি দিয়েছি, যেসব কোর্সের শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হচ্ছে না, ওই বিষয়ের কোর্সটির অধিভুক্তি বাতিল করা হবে। তবে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেই বিষয়টি মাথায় রেখে এটি করা হবে।
তিনি বলেন, কিছু দুর্নীতিবাজ ছাড়া অধিকাংশ শিক্ষক সততার সঙ্গে জীবনযাপন করেন। অনেক অধ্যাপককে দেখেছি অবসরের পর একটি ফ্ল্যাট কিনতে হিমশিম খান। অনেক শিক্ষক একটি রঙ্গিন টিভিও কিনতে পারেন না। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নয়, মাধ্যমিক প্রাথমিকের ৯৫ ভাগ শিক্ষক সততার সঙ্গেই জীবন ধারণ করছেন। অথচ আমরা সংবাদমাধ্যমে দেখতে পাই শিক্ষকের দুর্নীতির সচিত্র প্রতিবেদন, যা খুবই দুঃখজনক।
দুর্নীতি প্রতিরোধে বিশ্ববিদ্যালয়ে সেল গঠিত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, নীতিগতভাবে এটি করা হয়েছে। এর জন্য একটি অফিস লাগবে, যার কাজ চলছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অবশ্যই জবাবদিহি নিশ্চিত করবে।
মহামারিকালে সেশনজট দূর করতে পরীক্ষা ছাড়াই পরবর্তী বর্ষে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে অধ্যাপক মশিউর বলেন, শিক্ষার্থীরা যাতে এক ক্লাসে ২ থেকে ৩ বছর আটকে না থাকে, তাদের পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত করা হয়েছে। তার মানে, তাদের অটোপ্রমোশন দেওয়া হয়নি। পরিস্থিতি ভালো হলে আমরা তাদের পরীক্ষাগুলো নেব।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জন্মলগ্ন থেকে ‘ফেস টু ফেস’ শিক্ষাদানে অভ্যস্ত। অনলাইনে পরীক্ষার বিষয়েও কাজ করছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এখন আমরা যত বেশি অনলাইন শিক্ষায় অভ্যস্ত হতে পারব, ততবেশি এগিয়ে যেতে পারব। গত বছর আমরা বৈঠকে বসেছিলাম এবং সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিটি কোর্সে ১০টি করে লেকচার আমরা অনলাইনে আপলোড দেব। সেই হিসাবে প্রায় ১৩ হাজার লেকচার হয়। ইতোমধ্যেই আমরা প্রায় সাত হাজার লেকচার আপলোড দিয়েছি এবং বাকিগুলো শিক্ষকদের কাছ থেকে পেলে ধীরে ধীরে দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, আর অনলাইনে পরীক্ষার বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা হয়েছে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্সের কয়েকজনকে নিয়ে কমিটিও গঠন করা হয়েছে। আগামী ১ জুলাই এই কমিটির সভা রয়েছে। সেখানে আমরা অনলাইনে এমসিকিউ পদ্ধতিতে কোনো সফটওয়্যারের মাধ্যমে বা পরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তন করে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া যায় কিনা সে বিষয়ে আলোচনা করব।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত স্নাতক কলেজে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে উপাচার্য বলেন, যেসব শিক্ষার্থী এইচএসসি পাস করে বসে আছে, ভর্তি হতে পারছে না তাদের জন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে। অনলাইনে যদি ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারি তাহলে আমরা শিগগিরই নতুন শিক্ষার্থীদের নিয়ে অনলাইনে ক্লাস শুরু করব।
তিনি বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এর আগেও অনলাইনে ভর্তি সম্পন্ন করেছে। শুধু রেজিস্ট্রেশন ফরম এবং ভর্তির টাকা দেওয়ার জন্য তাদের নির্দিষ্ট কলেজে যেতে হতো। এবার এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি অনলাইনে সম্পন্ন করার জন্য আমরা ভর্তির খরচ মোবাইল ব্যাংকিংগুলোর মাধ্যমে নিতে পারি কিনা তা বিবেচনা করছি। এটি সম্ভব হলে আমরা সম্পূর্ণ ভর্তি অনলাইনে সম্পন্ন করতে পারব।