আসছে কোরবানির ঈদ। সারা দেশে লকডাউন চলছে। তাই কোরবানির পশু কেনা নিয়ে বাড়তি দুশ্চিন্তা। করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বগতির কারণে সারা দেশের জেলায়-উপজেলায় বন্ধ রয়েছে পশুর হাট। এতে ক্রেতা থেকে শুরু অনেক খামারি পড়েছে অনিশ্চয়তায়। তবে আশা দেখাচ্ছে ডিজিটাল পশুর হাট।
সাইটে ঢুকে পছন্দমতো গরু কেনার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছেন না অনেকেই। শুধু গরু কেনা নয়, কোরবানি দিয়ে বাড়িতে মাংস পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও করবে এসব প্রতিষ্ঠান।
আবার পশু জবাই ও মাংস কাটার কাজ করার জন্য পেশাদার কসাইয়ের খোঁজও দিচ্ছে বহুপ্রতিষ্ঠান। বিক্রিও হচ্ছে বেশ। প্রতিদিন গড়ে ৪ হাজার ৩৮৪টি পশু বিক্রি হয়েছে বলে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে। সবচেয়ে বেশি পশু বিক্রি হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে। দ্বিতীয় স্থানে ঢাকা, তৃতীয় স্থানে আছে রাজশাহী বিভাগ। অধিদফতরের তথ্যমতে, ইতোমধ্যে কোরবানিযোগ্য ১ লাখ ৪১ হাজার গবাদিপশুর তথ্য অনলাইনে আপলোড করা হয়েছে। অনলাইনে সবচেয়ে বেশি কোরবানিযোগ্য পশু বিক্রি হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে। বিভাগটিতে ৫১ হাজার ৬৪৯টি গবাদিপশুর তথ্য অনলাইনে আপলোড আছে।
যার মধ্যে ১১১ কোটি টাকায় ১৫ হাজার ৭৫টি পশু কেনাবেচা হয়েছে। অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রিতে দ্বিতীয় স্থানে ঢাকা, তৃতীয় স্থানে আছে রাজশাহী বিভাগ। সর্বশেষ ৭৪১টি অনলাইন বাজারের তথ্যের ভিত্তিতে এসব কথা জানিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। অনলাইন বাজারের মধ্যে সরকারি উদ্যোগ ৫৩০টি। আর বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত হচ্ছে ২১১টি। তবে এর বাইরেও অনেকে ব্যক্তি পর্যায়ে অনলাইনে পশু বিক্রি করছেন। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (খামার) জিনাত সুলতানা বলেন, গত বছর ৯৪ লাখ ৫০ হাজারের মতো পশু কোরবানি হয়েছে। যার মধ্যে অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রি হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার। এবার এখন পর্যন্ত ২৬ হাজার ৩০৮টি পশু অনলাইনে বিক্রি হয়েছে।
খামারিদের নিজস্ব ফেসবুক পেজ, সাইটসহ বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মে তারা পশুর তথ্য আপলোড করছেন। সারা দেশে সরকারি কর্মকর্তারা খামারিদের আপলোড করা পশুর সুস্থতা, ওজন, দাম নজরদারি করছে। কেউ অসুস্থ পশু বা ভুল তথ্য দিলে তা সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
ডিজিটাল হাটে পশু বিক্রি
সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় অনলাইনে কোরবানির গরু কেনার প্লাটফর্ম ডিজিটাল হাট ডট নেট (www.digitalhaat.net)। বিক্রয় ডটকম (www.bikroy.com) বিরাট হাট’ নামের ক্যাম্পেইন নিয়ে বেশ কবছর ধরে গরু-ছাগল বিক্রি করে আসছে। কেউ চাইলে অংশীদারি কোরবানিরও সুযোগ করে দেবে বিক্রয় ডটকম। ক্রেতা চাইলে ক্যাশ অন ডেলিভারি বা কোরবানির পশু হাতে পেয়ে, দেখেশুনে দাম পরিশোধ করতে পারবেন।
দারাজ (www.daraz.com.bd) গরুর হাট’ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে কোরবানির পশু বিক্রি করছে। তারা গরুর লাইভ ওয়েট, রঙ, দাঁত এসব দেখে কেনার এবং ছবির পাশাপাশি খামার ও গরুর ভিডিও দেখার সুযোগ করে দিচ্ছে। ২০২০ সাল থেকে অনলাইন কোরবানির হাট’ শিরোনামে কোরবানির পশু বিক্রি করে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অথবা ডটকম (www.othoba.com)।
পাবনায় আছে বেঙ্গল মিটের খামার। তবে রাজধানীসহ সারা দেশেই (https://qurbani.bengalmeat.com/) অনলাইনে তারা কোরবানির পশু সরবরাহ করছে। অর্গানিক খাবারের অনলাইন প্লাটফর্ম শুদ্ধ (shooddho.com) খামারে নয়, গ্রামের মাঠে চরে বেড়ে ওঠা অর্গানিক গরু সরবরাহের নিশ্চয়তা দিচ্ছে। তারা সরাসরি কৃষকের প্লাটফর্ম হিসেবে ভূমিকা রাখে। কোরবানির গরুর ছবি সরাসরি ভিডিওতে দেখানো হচ্ছে। থাকছে ফ্রি হোম ডেলিভারির ব্যবস্থা।
প্রিয়শপ ডটকম (priyoshop.com) আয়োজন করেছে অনলাইন কোরবানি হাট। পরিবারের সব সদস্যকে দেখিয়েই কেনা যাবে পশু। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিক্রেতারা তাদের পশুর ছবি আজকের ডিল ডটকমে (https://classified.ajkerdeal.com/) দিচ্ছেন। দেশি গরু ডটকম (www.deshigoru.com) অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রি করছে। হেক্সা ট্রেডিং (fb.com/hexatrading) কোরবানি আর মাংস প্রস্তুতের পুরো দায়িত্ব নিচ্ছে। আছে নিজস্ব পশু জবাইকেন্দ্র। করোনা সময়ে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে কোরবানির ব্যবস্থা করছে মাদল (fb/madolzonebd)। পশু কেনা থেকে শুরু করে মাংস কাটা এবং তা বাসায় পৌঁছে দেওয়া অবধি সব ধরনের সহযোগিতা করবে প্রতিষ্ঠানটি।
তা ছাড়া এবার কিউকম ডটকম, সামারাই ক্যাটল, সাদেক অ্যাগ্রো, দেশিগরুবিডি ডটকম, মেঘডুবি অ্যাগ্রোসহ শতাধিক প্রতিষ্ঠান অনলাইনে পশু বিক্রি করছে। অনলাইনে মূলত জীবন্ত অবস্থায় ওজনের (লাইভ ওয়েট) ভিত্তিতে দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে কেজিপ্রতি দাম ধরা হচ্ছে ৩৭০ থেকে ৪০০ টাকা। সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রেতাদের কাছে সেবা পৌঁছে দিচ্ছে। উদ্যোক্তা-ক্রেতাদের সুবিধা দুটোই নিশ্চিত করা হচ্ছে। সরাসরি সাইট থেকে কেনার আগে তার বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করে নেওয়া উচিত। আগের রিভিউ দেখে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বাজার গবেষকরা।
উদ্বোধনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ডিজিটাল পশুর হাটে ১২টি গরু ও ২টি ছাগল বিক্রি হয়ে যায়। ডিজিটাল হাট উদ্বোধনের সময়েই স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম ১ লাখ ৪৮ হাজার ৭৫০ টাকায় ৩৫০ কেজি ওজনের একটি দেশি ষাঁড় কিনে ডিজিটাল হাটের উদ্বোধন করেন। অনলাইন হাটে পশু কেনাবেচা হলে সংক্রমণ কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে আসবে। করোনা সংক্রমণের কারণে গত বছর থেকে বড় পরিসরে ডিজিটাল হাট আয়োজন করা হচ্ছে। গত বছর ডিজিটাল হাটে ২৭ হাজার পশু বিক্রি হয়। তবে এবারে আয়োজকদের লক্ষ্য ১ লাখ পশু বিক্রির।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনানুসারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অধীনে এবারের ডিজিটাল হাট বাস্তবায়ন কাজ করছে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশন। সহায়তা করছে বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল, এটুআই-একশপ। ডিজিটাল হাট ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উদ্যোগ হলেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ছাড়াও সাভার পৌর এলাকার ক্রেতারা গরু কিনতে পারবেন। তা ছাড়া দেশের অন্যান্য পৌরসভা অনলাইনে হাট করার সিদ্ধান্ত নিলে ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করতে পারবেন। অনলাইনে গরু কিনলে সিটি করপোরেশনকে হাসিল দিতে হবে না।
গত বছরের অনলাইন হাটের অভিজ্ঞতায় এবারের হাটে অনলাইনে কসাই বুকিংয়ের সুবিধাও রাখা হচ্ছে। কসাইখানায় সর্বোচ্চ এক হাজার পশু কোরবানি হবে। সব মিলিয়ে ২৬টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যানের মাধ্যমে ক্রেতার কাছে মাংস পৌঁছে দেওয়া হবে। বিক্রেতা-ক্রেতার মধ্যে সব ধরনের বিরোধ হলে তা নিষ্পত্তি করবে ই-ক্যাব। পশু বা মাংস, যা ডেলিভারি দেওয়া হোক না কেন, তার দাম বিক্রেতা বহন করবে। ক্রেতার কাছ থেকে এ বাবদ আলাদা অর্থ নেওয়া হবে না।
ডিজিটাল হাটের সাইটে কিছুটা বদল আনা হয়েছে। ফিল্টারের মাধ্যমে পশুর আকার, দাম, স্থান এসব নির্ধারণের করা হবে। শুধু ই-ক্যাব বা বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা ডিজিটাল হাটে গরু বিক্রি করতে পারবেন। তা ছাড়া প্রান্তিক খামারিরা সরাসরি জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন বা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে যোগাযোগ করে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সরাসরি হাটে অংশ নিতে পারবেন। তবে অনিবন্ধিত কেউ হাটে অংশ নিতে পারবেন না।
/টিএম/এসএইচ/