ই-পেপার শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪

ঈদুল আজহা ও কোরবানি: সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা বয়ে যাক
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২০ জুলাই, ২০২১, ৫:৩৫ এএম আপডেট: ২২.০৭.২০২১ ৯:৩২ এএম  (ভিজিট : ৪৫৪)
ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। তবে আনন্দ-খুশিকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। সেজন্য ইসলাম কিছু বিধিবিধান দিয়েছে। হজরত আনাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) হিজরত করে মদিনায় এসে দেখেন মদিনাবাসী বছরে দুদিন আনন্দ-উৎসব করে। তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এই দুটি দিন কী? মদিনাবাসী বলেন, জাহেলি যুগে এই দুদিন আমরা উৎসব করতাম। তখন রাসুল (সা.) বললেন, আল্লাহ তায়ালা এই দুটি উৎসবের বিনিময়ে এর চেয়ে উত্তম দুটি উৎসব দান করেছেন। তা হলো- ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর। (আলফিয়াতুল হাদিস : ৪৩২)

‘আজহা’ শব্দটির অর্থ ত্যাগ। আর কোরবানি অর্থ নৈকট্য। উল্লেখিত শব্দদ্বয় থেকে বোঝা যায় ত্যাগ বা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে যা অর্জিত হয় তাই কোরবানি। সর্বোপরি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার নামই কোরবানি। কোরবানির বিধান ওয়াজিব হওয়ার পর রাসুল (সা.) প্রতিবছর কোরবানি করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) মদিনার দশ বছর জীবনের প্রতিবছরই কোরবানি করেছেন। (তিরমিজি : ১৫০৭)। ঐতিহাসিক বিদায় হজের দিনে রাসুল (সা.) ১০০টি উট কোরবানি করেছিলেন। ৬৩টি উট তিনি নিজ হাতে জবাই করেছেন, বাকি ৩৭টি তাঁর পক্ষে হজরত আলী (রা.) জবাই করেছেন। (তহাবি : হাদিস ৬২৩৬)। কোরবানির ব্যাপারে রাসুল (সা.) সতর্ক করে বলেছেন, যে ব্যক্তি সচ্ছলতা থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করবে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে উপস্থিত না হয়। (ইবনে মাজা : ৩১২৩)

আমরা যদি কোরবানির ইতিহাসের দিকে তাকাই, তা হলে খুব সহজেই অনুমান করতে পারি; কোরবানি ভোগের কোনো উৎসব নয়। কোরবানি ইবরাহীম (আ.)-এর প্রভু প্রেমের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত; কলজে ছেড়া ধন ইসমাইলকে বিসর্জনের বিনিময় পুরস্কারস্বরূপ। আর এই ইবরাহীমি আদর্শে উত্তীর্ণ হওয়ার সংগ্রামে নিজের সবটুকু বিলিয়ে দিয়েছিলেন আমাদের মহানবী (সা.)।

আজকের মুসলিম সমাজে যে কোরবানির প্রচলন রয়েছে তা মূলত জাতির পিতা ইব্রাহীম (আ.)-এর দেখানো পথ ধরেই আমাদের পর্যন্ত এসেছে। যার মূলে ছিল নির্ভেজাল ইখলাস ও পরিপূর্ণ আত্মত্যাগ। কিন্তু আমরা যারা কোরবানি করি আমরা কি ইখলাস আর আত্মত্যাগের মর্মবাণী উপলব্ধি করতে পারি? আমরা কি খুশির এই সর্বজনীন উৎসবকে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা, ধনী-গরিব, উঁচু-নীচু, ছোট-বড়, বিদ্বান-মূর্খ সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সামাজিকতার এক আকাশের নিচে শামিল হতে পারছি? ভ্রাতৃত্ববোধ আর সহমর্মিতার এই মহোৎসবে আমরা নিজেরা বিলাসিতায় ভাসি ঠিকই, কিন্তু আমাদের খুব কাছের প্রতিবেশীও অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করে। আমরা কোনো খোঁজখবর রাখি না অভুক্ত মানুষের।

ইসলাম ধর্মের গর্বময় এক বৈশিষ্ট্যই হলো ত্যাগ আর বিসর্জন। ত্যাগই একজন মুসলমানের আসল চরিত্র। রাসুল (সা.) বলেছেন, সব সৃষ্টি মিলে আল্লাহর পরিবার। (মুজামে তাবরানি : ৫৫৪১)। আল্লাহর পরিবার হিসেবে সব মানুষ সমান; এতে কাছের-দূরের, আত্মীয়-অনাত্মীয় কোনো ভেদাভেদ নেই। এ বাঁধনে সবাই এক। এমন ভ্রাতৃত্বের মহতি উৎসবের নামই ঈদ। তবে অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হলো, ভ্রাতৃত্বের সুমহান আদর্শের ছোঁয়া আমাদের সমাজ জীবনকে স্পর্শ করে না; আমাদের গরিব অসহায় দুস্থদের ঘরে ঈদ নামে না আনন্দের বন্যা হয়ে। ফলে সমাজের নিম্ন শ্রেণির মানুষদের ভিক্ষার ঝুলি হাতে নিয়ে নামতে হয় ঈদ আবেদন পূর্ণ করতে। আর যারা পথে নামতে পারে না তাদের চোখের জল আর দীর্ঘশ্বাস ছাড়া কিছুই দেওয়ার থাকে না পরিবারকে।

একদিকে সাধ আর সাধ্যের সবটুকু উজাড় করে দিয়েও একশ্রেণির মানুষের ঈদ উদযাপনের তওফিক মেলে না; অন্যদিকে চলে নানা অপচয়-অপব্যয় সমেত লাখো টাকায় লৌকিকতাপূর্ণ দেশি-বিদেশি গরু কেনার হিড়িক। যাতে না থাকে ইখলাস, না থাকে হালাল-হারামের কোনো বাছ-বিচার। এমন অসম প্রতিযোগিতায় মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করা দেশের কোটি কোটি মানুষ।

মুসলিম উম্মাহর এই দুর্দিনে আমরা ঈদের মতো ধর্মীয় সামাজিক উৎসবকে কেবলমাত্র লৌকিকতার উপসর্গ করেছি; অথচ ঈদের সামাজিক উদ্দেশ্য ছিল- অসহায় দুস্থ মানুষের সহযোগিতা করা, প্রতিটি পরিবারে ঈদ আনন্দ ছড়িয়ে দেওয়া। এজন্যই তো ইসলাম ঈদুল ফিতরের সময় সদকাতুল ফিতর আর ঈদুল আজহায় কোরবানির মতো আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিধান দিয়েছে। আল্লাহ আমাদের বোঝার ও আমল করার তওফিক দান করুন।




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close