ই-পেপার বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪

বিশুদ্ধ পানির সংস্থান নিয়ে ভাবতে হবে
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৮:৩৮ এএম  (ভিজিট : ৩২৩)
সৌরজগতের গ্রহগুলোর মধ্যে একমাত্র পৃথিবী নামক গ্রহেই প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে। প্রতিটি প্রাণীর জীবনের অস্তিত্ব টিকে রাখার জন্য পানির গুরুত্ব অপরিসীম। বিজ্ঞানীরা পানির অপর নাম জীবন বলেন। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পানির গুরুত্ব অনস্বীকার্য। আমাদের ভূমণ্ডলের চার ভাগের তিন ভাগই পানি। পৃথিবীর মোট আয়তনের প্রায় ৭১ শতাংশ জায়গাজুড়ে রয়েছে বিশাল জলরাশি। প্রশ্ন হলো, পানির এত সংস্থান থাকা সত্ত্বেও বিশুদ্ধ পানির প্রাপ্তি নিয়ে ভাবতে হবে কেন! পানির এমন বিশাল আধার থাকা সত্ত্বেও আমরা বেশিরভাগই ব্যবহার করতে পারি না। 

কারণ পানির মোট পরিমাণের শতকরা ৯৭ শতাংশ সমুদ্রের লবণাক্ত বা অন্যান্য কারণে ব্যবহারের অযোগ্য। আমাদের ব্যবহারযোগ্য পানির পরিমাণ খুবই সীমিত, যার পরিমাণ মাত্র ৩ শতাংশ। এর মধ্যে বায়ুমণ্ডলে ০.০১ শতাংশ, হিমবাহগুলোয় ১.৭২৫ শতাংশ, মাটিতে ০.০০১২ শতাংশ, ভূভাগে ০.১৪১ শতাংশ এবং ভূগর্ভে ০.৪-১.৭ শতাংশ পানি সঞ্চিত রয়েছে। পানি মানবজাতির অস্তিত্ব ও সমৃদ্ধিতে অবদান রাখে উল্লেখ করে পানি বিজ্ঞানী স্টিফেন জনসন বলেছেন, ‘জল আমাদের দেহ, আমাদের অর্থনীতি, আমাদের জাতির প্রাণবন্ত এবং আমাদের মঙ্গল।’ জীবনধারণের ক্ষেত্রে পানির গুরুত্ব তুলে ধরে আরেক পরিবেশ বিজ্ঞানী বলেছেন, ‘হাজার হাজার মানুষ ভালোবাসা ছাড়া টিকতে পারে কিন্তু জল ছাড়া একটিও নয়।’ অর্থাৎ পানির প্রতিটা ফোঁটায় রয়েছে একেকটি জীবনের গল্প। জীবন-জীবিকা রক্ষার প্রতিটি উপাদানের সঙ্গে পানি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে। প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষের জীবন যখন আয়েশি ও স্বাচ্ছন্দ্যময় তখন শুধু পানিবাহিত রোগে বিশ^জুড়ে প্রতিবছর প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষ মারা যাচ্ছে।

যেসব অঞ্চলে সরাসরি সুপেয় পানির সঙ্কট সেসব অঞ্চলের চিত্র অত্যন্ত ভয়াবহ। তাই খাদ্য ও জ্বালানির পাশাপাশি বিশ^কে বিশুদ্ধ ও সুপেয় পানির সংস্থান নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে হবে। পৃথিবীর অন্যতম জনবহুল বাংলাদেশও এই ঝুঁকির বাইরে নয়। নদীমাতৃক বাংলাদেশে পানির উৎস হচ্ছে নদ-নদী, প্রাকৃতিক জলাধার, বৃষ্টির পানি ও ভূগর্ভস্থ পানি। দেশে ছোট-বড় মিলে নদী রয়েছে প্রায় ২৩০টি। পরিকল্পনাহীন রাস্তাঘাট নির্মাণ, নদীশাসনে অদক্ষতাসহ বিভিন্ন কারণে নদী তার নাব্যতা হারাচ্ছে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে নৌপথ ছিল ২৫ হাজার ৪০০ কিলোমিটার। কিন্তু বর্তমানে তা কমে মাত্র ৭ হাজার ৬০০ কিলোমিটারে এসে ঠেকেছে। বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে ইতোমধ্যে বহু নদী হারিয়ে গেছে। ছোট অসংখ্য নদী-খাল আজ মৃতপ্রায়। অন্যদিকে উজান থেকে নেমে আসা এবং বর্ষাকালের বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করাও সম্ভব হচ্ছে না। নদীগুলোর নাব্য সঙ্কটের কারণে বর্ষাকালে বন্যা এবং গ্রীষ্মকালে খরার সম্মুখীন হচ্ছে। আমাদের মিঠাপানির রিজার্ভ ১ হাজার ২২৩ কিউবিক কিলোমিটার। বাংলাদেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১ হাজার ১১৫ জন মানুষ বাস করে। এ দেশের জনসংখ্যার বৃদ্ধির সঙ্গে দেশে বাসস্থান ও খাদ্যের চাহিদাও বাড়ছে সমান তালে। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্যের চাহিদাপূরণের জন্য চাষবাসের পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এই উৎপাদন কাজের জন্য সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করতে হয় ভূগর্ভস্থ পানির ওপর। 

এ ছাড়া ক্রমাগত নগরায়ণের ফলে জলাশয়, খাল ভরাট হয়ে যাচ্ছে। যেটুকু ও বা আছে তাও যেন ময়লার স্তূপে পরিণত হয়েছে। ভূপৃষ্ঠের পানি যেহেতু ক্রমেই দূষিত হচ্ছে, তাই পান করাসহ নানাবিধ ব্যবহারের জন্য আমাদের ভূগর্ভস্থ পানির ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে। কিন্তু অতিরিক্ত নির্ভরতার প্রভাবে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর ও চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে পানির স্তর ক্রমেই নিচে নেমে যাচ্ছে। আগে মানুষ টিউবওয়েলের মাধ্যমে শারীরিকভাবে পরিশ্রম করে পানি তুলে ব্যবহার করত। তখন পানির উত্তোলন সীমিত হওয়ার সঙ্গে তা সঠিকভাবে ব্যবহার হতো। কিন্তু প্রযুক্তির কল্যাণ আর আধুনিকতার ঢেউয়ে মানুষ টিউবওয়েলের পরিবর্তে বৈদ্যুতিক মোটর স্থাপনের মাধ্যমে ভূগর্ভ থেকে অস্বাভাবিকভাবে পানি উত্তোলন ও যথেচ্ছা ব্যবহার করছে। এতে সময় ও শ্রম উভয়ই সাশ্রয় হলেও পানির অপচয় চরম রূপ নিয়েছে। শহরে তো শতভাগই, সেই সঙ্গে গ্রামেও এখন এমন বাড়ি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর যেখানে মোটর বসানো নেই। পানির এমন অবাধ উত্তোলনের ফলে পাতাল ক্রমেই নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে গ্রীষ্মকালে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। এখনই এ ব্যাপারে কার্যকরী সিদ্ধান্ত না নিলে অদূর ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ চিত্র দেখতে হবে। তাই 
এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে অনতিবিলম্বে সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি সচেতনতাও গুরুত্বপূর্ণ। নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হয়ে অযথা পানির উত্তোলন এবং অপচয় রোধ করতে হবে। ভূগর্ভ থেকে পানির উত্তোলন হ্রাস করতে হবে এবং উত্তোলনকৃত পানির সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করতে হবে। অনেক উন্নত ও সমুদ্র তীরবর্তী দেশ কৃত্রিম উপায়ে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করছে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য এটা ব্যয়বহুল হওয়ায় প্রাকৃতিকভাবে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা যেতে পারে। পানি ছাড়া শুধু মানব জীবনই নয়, পরিবেশের প্রতিটি জীবের ওপরেই বিরূপ প্রভাব পড়বে। 

ইতোমধ্যে আফ্রিকার অনেক অঞ্চলে পানির চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ওইসব অঞ্চলে পানির অভাবে খাদ্য উৎপাদন না হওয়ায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। এর মাধ্যমেই আমরা উপলব্ধি করতে পারি পানি সঙ্কট তৈরি হলে আমাদের কী পরিণতি হবে। পানি এমন একটি সম্পদ যেটা ছাড়া আমাদের এক দিনও চলে না। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ খাবার ছাড়া সাত দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। কিন্তু পানি ছাড়া কোনো মানুষের পক্ষে তিন দিনের বেশি বাঁচা সম্ভব নয়। তাই অমূল্য এ সম্পদের অপচয় না করে সাশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে প্রশাসনকে এ সংক্রান্ত নিয়মনীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। বিশুদ্ধ পানির সংস্থান নিয়ে ভাবতে হবে। তবেই মানবজাতির অস্তিত্ব রক্ষা করা সম্ভব হবে।

শিক্ষার্থী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close