ই-পেপার শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪
শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪

সাউথ বাংলা ব্যাংকের সাবেক এমডিসহ ৯ জনকে দুদকে তলব
৪০ কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:৩৫ এএম  (ভিজিট : ২১৪)
সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংকের চেয়ারম্যান এসএম আমজাদ হোসেনের ঋণ জালিয়াতির বিষয়ে সাবেক এমডি মো. রফিকুল ইসলামসহ ৯ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রাথমিক তদন্তে আমজাদ হোসেনের প্রতিষ্ঠান ও কর্মচারীদের নামে ৪০ কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে সংস্থাটি। 
আমজাদ হোসেন চেয়ারম্যান পদে থেকে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক ঋণ অনুমোদন করে আত্মসাৎ করেছেন। এ ছাড়া কর্মচারীদের নামে জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। ঋণ জালিয়াতি ছাড়াও অর্থ আত্মসাৎ ও দেশের বাইরে অর্থ পাচারের বিষয়ে অনুসন্ধান করছে দুদক। তদন্তে তার বিরুদ্ধে আরও কেলেঙ্কারির তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে সংস্থার অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
যাদের তলব করা হয়েছে তারা হলেন- ব্যাংকটির সাবেক এমডি ও সিইও মো. রফিকুল ইসলাম, ডিএমডি মো. শওকত আলী, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মামুনুর রশীদ মোল্লা, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. জিয়াউল লতিফ, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার খালেদ মোশারেফ, ভিপিও শাখা প্রধান এসএস ইকবাল মেহেদী, এফএভিপি ও অপারেশন ম্যানেজার মোহা. মঞ্জুরুল আলম, সিনিয়র অফিসার বিদ্যুৎ কুমার মণ্ডল এবং এমটিও তপু কুমার সাহা।

আগামী রোববার সকাল ১০টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত দুদকের প্রাধন কার্যালয়ে তাদের হাজির হতে চিঠি পাঠিয়েছেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা গুলশান আনোয়ার প্রধান। এদিকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নামে-বেনামে ২৫০ কোটি টাকার সম্পদ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ উঠেছে এসএম আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে। এর মধ্যেই হঠাৎ শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে মঙ্গলবার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন তিনি। অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠেয় ব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) পর তার পদত্যাগপত্র কার্যকর হবে বলে ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।

দুদকের অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে ঋণ জালিয়াতিসহ বিভিন্ন দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে ব্যাংক থেকে প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্র ও বিএফআইইউ গোয়েন্দা প্রতিবেদন সংগ্রহ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান থাকাকালে খুলনা বিল্ডার্স লিমিটেডের নামে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন তিনি। যদিও বিএফআইইউ এর তদন্ত টিম সরেজমিনে গিয়ে এ নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পায়নি।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, দেশ-বিদেশে বিভিন্ন কোম্পানি খুলে ‘বিপুল পরিমাণ অর্থ’ আত্মসাতের অভিযোগ উঠলে দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয়। সংস্থার উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। 
দুদকে অভিযোগ ছিল- আমজাদ হোসেন ক্ষমতার অপব্যবহার করে নামে-বেনামে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন কোম্পানি খুলে ব্যাংকটির খুলনা সদর ও কাটাখালী শাখা ব্যবহার করে আমানতকারীদের বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এ নিয়ে সম্প্রতি একটি গণমাধ্যম আমজাদ হোসেনের দুর্নীতির বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করে। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রতিবেদনে ‘জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ দিয়ে আত্মসাতে’র কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

দুদক ও গণমাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খুলনা অঞ্চলের অন্যতম শিল্পপ্রতিষ্ঠান লকপুর গ্রুপের মালিক এসবিএসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এসএম আমজাদ হোসেন। তার মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে লকপুর ফিশ প্রসেস কোম্পানি লিমিটেড, বাগেরহাট সিফুড ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড, শম্পা আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেড, রূপসা ফিশ অ্যান্ড অ্যালাইড ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড, মুন স্টার ফিশ লিমিটেড, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড, খুলনা অ্যাগ্রো এক্সপোর্ট প্রাইভেড লিমিটেড, ইস্টার্ন পলিমার লিমিটেড, মেট্রো অটো ব্রিকস লিমিটেড, খুলনা বিল্ডার্স লিমিটেডসহ আরও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান।

দুদকের অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আমজাদ হোসেন চেয়ারম্যান পদে থাকা অবস্থায় তার মালিকানাধীন রূপসা ফিশের নামে নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ৩৭৪ কোটি টাকার একটি ঋণপত্র খোলেন। ঋণ জালিয়াতি ছাড়াও বিভিন্ন গ্রাহকের ব্যাংক হিসাব থেকে ২০১৯ সালের জুন-জুলাই মাসে সাড়ে ৭ কোটি টাকাও আত্মসাৎ করেন। এ বিষয়ে গত ২২ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ জমা পড়ে। ওই অভিযোগে ব্যাংকের পরিচালক ক্যাপ্টেন (অব.) এম মোয়াজ্জেম হোসেনের ব্যাংক হিসাব থেকেও ৩ কোটি টাকা আত্মসাতের কথা উল্লেখ আছে। মূলত গ্রাহকদের জমা দেওয়া ব্ল্যাংক চেক ব্যবহার করে তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে এসব টাকা তুলে নিয়েছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ জালিয়াতির ঘটনায় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখা ব্যবস্থাপক শরফুদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। দুদক সূত্র আরও জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে এসবিএসির চেয়ারম্যান এসএম আমজাদ হোসেনের নামে থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার হস্তান্তর, বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনে চিঠি দেন দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা গুলশান আনোয়ার প্রধান। ঋণ জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগের অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে ওই চিঠি দেওয়া। 

চিঠিতে অবৈধ পন্থায় অর্থ পাচার করে মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এর আগে আমজাদ হোসেন ও তার পরিবারের অন্য সদস্যদের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোয় চিঠি দিয়েছিলেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা। গত বছরের জানুয়ারিতেও আমজাদ হোসেন, তার স্ত্রী সুফিয়া আমজাদ এবং মেয়ে তাজরির বিদেশে যাওয়ার ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল দুদক।

সময়ের আলো// এসএ


আরও সংবাদ   বিষয়:  সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংক  




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close